সুতো টেনে যে পরীক্ষা দিয়েছে জাতীয় দল

গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলামের মনোযোগী চোখ প্রায় ১৫ মিটার দূরত্বে বক্সের মধ্যে। আর দুই হাত দুই সুতো ধরে টেনে দিচ্ছেন ‘ডেপথ পারসেপশন’ পরীক্ষা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলামের মনোযোগী চোখ প্রায় ১৫ মিটার দূরত্বে বক্সের মধ্যে। আর দুই হাত দুই সুতো ধরে টেনে দিচ্ছেন ‘ডেপথ পারসেপশন’ পরীক্ষা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
>বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের জন্য ২৩ আগস্ট অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ। আবাহনী লিমিটেডের ৭ খেলোয়াড় বাদে ক্যাম্পে আছেন ১৯ জন। গতকাল তাঁদেরই বিকেএসপিতে মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ।

‘ফুটবল খেলতে এসে সুতা টানাটানি করা লাগল!’

ডিফেন্ডার ইয়াছিন খানের মনোযোগী চোখ প্রায় ১৫ মিটার দূরত্বে বক্সের মধ্যে। আর দুই হাত দুই সুতো ধরে টানছেন। হঠাৎ কোনো আগন্তুক দেখলে মনে হতে পারে পুতুলনাচের খেলা দেখাচ্ছেন দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। কিন্তু না, ইয়াছিন দিচ্ছিলেন নিখুঁতভাবে দূরত্ব বোঝার ক্ষমতার পরীক্ষা, ক্রীড়াবিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ‘ডেপথ পারসেপশন’। পরীক্ষা শেষ করে সে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই ঢুকতে হলো পাশের ক্লাসরুমে। হাতল চেয়ার আর সাদা বোর্ড দেখে ইয়াছিনের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো ব্যাপার, ‘হায় হায় এখন আবার খাতা-কলমের পরীক্ষা!’

নৈর্ব্যক্তিক আকারে খাতা-কলমেই পরীক্ষা দিতে হলো। তবে ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান বা বীজগণিতের জটিল কোনো সূত্রে আটকানোর বালাই নেই। ক্রীড়াবিজ্ঞানের ভাষায় সে পরীক্ষার নাম ‘মেন্টাল হেলথ’ বা মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মাঠে খেলোয়াড়ের মনোযোগ কেমন থাকে, খেলা বা খেলার বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে আবেগপ্রবণ কি না—পরীক্ষাটির মাধ্যমে তা বোঝার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। নৈর্ব্যক্তিক আকারে থাকা ১২টি প্রশ্নে টিক চিহ্নের মাধ্যমে মেলাতে হয় সে মানসিক ধাঁধা।

‘স্লাইস ক্যালিপারের’ মাধ্যমে মেপে দেখা হয়েছে তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশের মেদ। এত দিন ফুটবলারদের কাছে মেদ বলতেই চোখে ভাসত পেটের ‘ভুঁড়ি’, আদতে হাতের পেশিতেও যে মেদ জমতে পারে, তা জাতীয় দলের অধিকাংশ ফুটবলার জানলেন গতকাল। এ রকম বেশ কয়েকটি পরীক্ষার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ইয়াছিন-বিশ্বনাথদের। এ ছাড়া দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মাধ্যমে পেশির জোর ও অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে পরিচিত কুপার টেস্ট তো ছিলই। পরীক্ষার ‘হলে হলে’ ঘুরে কিছু বিষয়ে ফলাফল জানাও গেছে। ফুটবলারদের মানসিক ও শারীরিক শক্তিকে গুড মার্ক দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের জন্য ২৩ আগস্ট অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ। আবাহনী লিমিটেডের ৭ খেলোয়াড় বাদে ক্যাম্পে আছেন ১৯ জন। গতকাল তাঁদেরই বিকেএসপিতে মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ। নতুন ফিজিক্যাল ট্রেনার ও ফিজিও সিমন মালবির চাহিদাপত্র অনুযায়ী পরীক্ষাগুলোর ব্যবস্থা করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কারণ, খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট শক্তিমত্তা জানা উচিত বলে মনে করেন মালবি, ‘ফুটবলারদের মানসিক ও শারীরিক শক্তি জানা উচিত। সে জন্যই পরীক্ষাগুলো নেওয়া। যতটুকু বুঝেছি, আমি সন্তুষ্ট। বর্তমান অবস্থা থেকে পরবর্তী ধাপে যেতে হলে নির্দিষ্ট মানসিক ও শারীরিক পেশি শক্তিশালী করতে হবে।’

বর্তমান জাতীয় দলের কাছে বিকেএসপির ক্রীড়াবিজ্ঞান ভবন নতুন আবিষ্কার হলেও আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি জমানায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল আরিফ খান জয়, আলফাজ আহমেদের। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে প্রথম আর্জেন্টাইন কোচিং স্টাফ ক্রুসিয়ানি ও তাঁর সহকারী আরিয়েল কোলম্যান খেলোয়াড়দের মানসিক ও পেশিশক্তির পরীক্ষা নিতেন। সাইফ স্পোর্টিংয়েও একই পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে বলে জানালেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া,‘আমাদের সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে এ ধরনের পরীক্ষা আগেও দিয়েছি। উন্নতির জন্য অবশ্যই শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা জানা উচিত। কারণ, দুর্বলতা না জানলে উন্নতি করা সম্ভব নয়।’

জামালদের মানসিক শক্তি ভালো অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া মনোবিদ নুসরাত শারমিন, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা নিজেদের মানসিক দুর্বলতা ও শক্তিমত্তা জানে না। পরীক্ষার মাধ্যমে এগুলো জানলে উন্নতি করতে সুবিধা হয়। ফুটবলারদের মানসিক অবস্থা ভালো মনে হয়েছে।’ মাঠে সেটার প্রতিফলন থাকলেই ভালো।