সব ছেড়েও তিনি মেয়েকে ধরে রাখতে পারলেন না

এ ছবি এখন শুধুই পোড়াবে লুই এনরিকেকে। ছবি: টুইটার
এ ছবি এখন শুধুই পোড়াবে লুই এনরিকেকে। ছবি: টুইটার
>মাত্র নয় বছর বয়সী মেয়েকে হারালেন স্পেন ও বার্সেলোনার কোচ লুই এনরিকে। হাড়ের ক্যানসারে ভুগে কাল না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে তাঁর মেয়ে জানা। এনরিকের জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ফুটবল দুনিয়া

শত চেষ্টা করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না স্পেন ও বার্সেলোনার সাবেক কোচ লুই এনরিকে। হাড়ের ক্যানসারে ভুগে মাত্র নয় বছর বয়সেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে তাঁর মেয়ে জানা। কাল বিকেলে কলিজার টুকরোকে হারানোর পর টুইটারে খবরটি নিশ্চিত করেন এনরিকে, ‘অস্টিওসার্কোমার(হাড়ের ক্যানসার) সঙ্গে পাঁচ মাস লড়াইয়ের পর আজ বিকেলে মারা গেছে আমাদের নয় বছর বয়সী মেয়ে জানা। তুমি আমাদের পরিবারের আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। আমরা তোমাকে খুব মিস করব তবে সব সময়ই তোমাকে মনে থাকবে আর আশা রাখি ভবিষ্যতে আবার দেখা হবে। এ কয়েকটি মাসে যাঁরা ভালোবাসা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’

হাসপাতালের স্টাফদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন এনরিকে। স্পেনের সাবেক এ ফরোয়ার্ডের অপূরণীয় ক্ষতিতে শোক জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেকে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন ও টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালও শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এনরিকের প্রতি। ইনস্টাগ্রামে লিওনেল মেসি লেখেন, ‘জগতের সব শক্তি নিয়ে আমরা আপনার পাশে আছি।’ বার্সার শোকবার্তায় বলা হয়, ‘এই কঠিন সময়ে লুই এনরিকের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা ও শোক জানাচ্ছি।’

লুই এনরিকে ও তাঁর মেয়ে জানা। ছবি: টুইটার
লুই এনরিকে ও তাঁর মেয়ে জানা। ছবি: টুইটার

২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সাকে ‘ট্রেবল’ জেতানো সাবেক এ কোচের জীবনে চরম কঠিন সময় শুরু হয় গত মার্চ থেকে। ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বে গত ২৭ মার্চ মাল্টার মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন। সে ম্যাচের আগের আর দশজন কোচের মতোই শিষ্যদের নিয়ে অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন এনরিকে। কিন্তু একটা ফোন পাল্টে দেয় এনরিকের জীবন। তাঁর স্ত্রী ফোন করে জানান সন্তানের গুরুতর ব্যাধির কথা। এনরিকের জীবনে বয়ে যাওয়া ঝড় তখন খুব কম মানুষই জানতেন। বাড়ি ফিরতে উদ্‌গ্রীব এনরিকের জন্য মাল্টায় বিমান পাঠানো হয় বার্সেলোনা থেকে।

এনরিকের পরবর্তী পাঁচ মাসের দুঃসহ জীবনের সেটা ছিল কেবল শুরু। সবকিছু ছেড়ে মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ৪৯ বছর বয়সী এ পিতা। টুপিতে মুখ লুকিয়ে মেয়েকে প্রতিদিন দেখতে যেতেন হাসপাতালে। এতে স্পেন কোচের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারছিলেন না। গত ১৯ জুন সবাইকে চমকে দিয়ে স্পেন কোচের পদ ছাড়েন এনরিকে। এর পেছনে তিনি ‘পারিবারিক’ কারণ দেখালেও তখন বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীই আসল ঘটনাটা জানতেন না। এনরিকে শুধু ফেডারেশন, কর্মকর্তা আর খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তবে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) লুই রুবিয়ালেস বলেছিলেন, ‘তাঁর জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা থাকবে।’

এনরিকের জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে ফুটবল দুনিয়া। যেখানে নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শুধু শোক, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা।