রিয়ালের বড় পরীক্ষা পিএসজি

বার্সার চেয়ে তুলনামূলক সহজ গ্রুপই পেয়েছে রিয়াল। ছবি : টুইটার
বার্সার চেয়ে তুলনামূলক সহজ গ্রুপই পেয়েছে রিয়াল। ছবি : টুইটার
>এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে কে কোন গ্রুপে খেলবে, তা নিশ্চিত হয়েছে গতকাল। ফ্রান্সের মোনাকোতে হওয়া অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়েছে কার গ্রুপে কে পড়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার লড়াইয়ে গ্রুপপর্বে কোন কোন ক্লাবকে পেল রিয়াল মাদ্রিদ, আর সেই গ্রুপ পেরিয়ে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা কতটুকু সহজ বা কঠিন হবে।

টানা তিন বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সাম্প্রতিক সময়েই। কিন্তু গতবার চতুর্থবার লিগ জয়ের লক্ষ্যে গতবার দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল তারা। যে কারণে গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্রয়ের সময় প্রথম নয়, বরং দ্বিতীয় পটে জায়গা হয়েছিল রিয়ালের। দ্বিতীয় পটে থাকলে মোটামুটি কঠিন গ্রুপেই পড়ার কথা যেকোনো ক্লাবের। কিন্তু রিয়ালের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। সৌভাগ্যজনক ভাবে মোটামুটি সহজ গ্রুপই পেয়েছে জিনেদিন জিদানের দল। গ্রুপ পর্বে কঠিন প্রতিপক্ষ বলতে শুধু ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজির মুখোমুখি হতে হবে তাদের। গ্রুপের বাকি দুই দল তুর্কি ক্লাব গ্যালাতাসারাই ও বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুজেস।

পিএসজিকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ফরাসি লিগের এই চ্যাম্পিয়ন দল এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ক্লাব। প্রত্যেক পজিশনেই বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে তাদের। আক্রমণভাগের কথাই চিন্তা করুন, দলে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও এডিনসন কাভানির মতো তারকারা। তবে এই দলবদলে খুব সম্ভবত তাদের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার বার্সেলোনায় চলে যাচ্ছেন, তাই ব্রাজিল তারকাকে ছাড়াই হয়তো আগামী মৌসুম থেকে খেলা শুরু করতে হবে ফরাসি ক্লাবটাকে। এমবাপ্পে ও কাভানি ছাড়াও পিএসজির আক্রমণভাগে রয়েছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, জুলিয়ান ড্রাক্সলার, পাবলো সারাবিয়ার মতো কার্যকরী খেলোয়াড়েরা। গত মৌসুমে পিএসজির মিডফিল্ড বেশ দুর্বল ছিল। মার্কিনহোস ও দানি আলভেসের মতো ডিফেন্ডারদেরকে যে কারণে পিএসজির মিডফিল্ডে খেলতে হয়েছিল। কিন্তু এবার আর সেই সমস্যা নেই। লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও মার্কো ভেরাত্তির পাশাপাশি দলে নতুন মিডফিল্ডার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ইদ্রিসা গেয়ে, অ্যান্ডার হেরেরার মতো তারকারা। নেইমারের বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচের পিএসজিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

রক্ষণভাগে পিএসজি বরাবরের মতো এবারও শক্তিশালী। মার্কিনহোস আর থিয়াগো সিলভার পাশাপাশি দলে সেন্টারব্যাক হিসেবে আছেন থিলো কেহরার, প্রেসেনেল কিমপেম্বে ও নতুন আসা ফরাসি ডিফেন্ডার আবদু দিয়ালো। ফুলব্যাক হিসেবে খেলার জন্য আছেন টমাস মুনিয়ের, হুয়ান বার্নাত, লেভিন কুরজাওয়া। গোলরক্ষক হিসেবে দলে আছেন আলফোঁস আরেওলা। রিয়াল মাদ্রিদের তিন বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী গোলরক্ষক কেয়লর নাভাস কিছুদিনের মধ্যে যোগ দিতে পারেন ফরাসি ক্লাবটায়। ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাউন্ডেই সাবেক ক্লাবের মুখোমুখি হতে পারেন কোস্টারিকার এই তারকা। ফলে কাগজে-কলমে বেশ শক্তিশালী পিএসজি।

তবে পিএসজি শক্তিশালী হলেও তাদের হারানোর অভিজ্ঞতা রিয়ালের আছে। ২০১৭-১৮ মৌসুমের দ্বিতীয় রাউন্ডে পিএসজিকে টপকেই কোয়ার্টারে উঠেছিল লস ব্লাঙ্কোসরা।

সাম্প্রতিক কালে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে গ্যালাতাসারাইয়ের সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ অত বেশি ম্যাচ না খেললেও দুই দলের ইতিহাস আজকের নয়। ২০০০ সালে এই তুর্কি ক্লাবের কাছেই উয়েফা সুপার কাপে হেরে গিয়েছিলেন রাউল-ফিগো-ক্যাসিয়াসরা। ব্রাজিল তারকা মারিও জার্দেলের জোড়া গোলের জবাবে পেনাল্টিতে মাত্র একটা গোল শোধ করতে পেরেছিলেন স্প্যানিশ তারকা রাউল গঞ্জালেস। ২০১২-১৩ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়ালকে বেশ জ্বালিয়েছিল গ্যালাতাসারাই। দুই লেগ মিলে রিয়াল ৫ গোল দিলেও হজম করেছিল তিনটি। এবারও গ্যালাতাসারাই মোটামুটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে রিয়ালের সামনে আবির্ভূত হলেও তুর্কি ক্লাবকে টপকাতে রিয়ালের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

গ্রুপের দুর্বলতম দল ব্রুজেস। বেলজিয়ামের চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচে পূর্ণ ছয় পয়েন্ট পাওয়ার লক্ষ্য থাকবে রিয়ালের।

এই গ্রুপ নিয়ে তাই বলা যায়, মূল লড়াইটা হবে পিএসজি আর রিয়ালের মধ্যে, আর সে লড়াইটা হবে গ্রুপের শীর্ষ দল হওয়ার জন্য। এ ছাড়া রিয়ালের পক্ষে এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।