বাংলাদেশের যে ডিফেন্ডারের দাম ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

>
জাতীয় দল ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের ফুটবলার ইয়াসিন আরাফাত। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় দল ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের ফুটবলার ইয়াসিন আরাফাত। ছবি: প্রথম আলো

ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ৩ বছরের চুক্তি করেছে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে এক বছর। এখন তাঁকে পেতে চাইলে অন্যান্য ক্লাবগুলোকে গুনতে হবে ২ লাখ ডলার

২০১৮ এর মে থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট।

সময়ের ব্যাপ্তিতে খুবই ক্ষুদ্র। কিন্তু এই সময়ে আমূল বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের এক ফুটবলারের জীবন। গত বছরের মেতেও ছিলেন তৃতীয় বিভাগের কদমতলার খেলোয়াড়। ১৪ মাসের ব্যবধানে সাইফ স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে প্রিমিয়ার লিগ খেলে এখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ইয়াসিনের জীবন কতটা বদলে গিয়েছে, সেটা বোঝাতে অর্থ মূল্যের হিসেব আনা যায় চাইলে। অর্থের বিচারে এই পরিবর্তনের বর্তমান মূল্য ২ লাখ ডলার বা ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

জাতীয় দলে সদ্য ডাক পেয়েছেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত। তাঁর ওপর তাই নজর পড়তেই পারে ক্লাবগুলোর। কিন্তু সাইফ স্পোর্টিং থেকে ১৮ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারকে কিনতে গুনতে হবে ২ লাখ ডলার। কারণ নতুন চুক্তি অনুযায়ী দলের অমূল্য রত্নকে আটকে রাখতে ‘রিলিজ ক্লজ’ বেঁধে দিয়েছে সাইফ। দেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্য অঙ্কটা নির্ধারণ করে আক্ষরিক অর্থেই দলবদলের সম্ভাবনা আটকে দিয়েছে সাইফ।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ইয়াসিনের সঙ্গে সাইফের চুক্তি ৩ বছরের। এরই মধ্যে সাইফের জার্সিতে শেষ মৌসুমে দুর্দান্ত খেলেছেন এই তরুণ ডিফেন্ডার। লেফট ব্যাক ও সেন্টারব্যাকে সমান পারদর্শী। অফুরন্ত দম নিয়ে মাঠে নেমে ওভারলেপিং ও সময় মতো ব্যাক ট্র্যাক করতে উস্তাদ। তাঁর পারফরমেন্সে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ডেকে নিয়েছেন জাতীয় দলের জেমি ডে। আর আগামী মৌসুমে তাঁকে পেতে দৌড় ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছিল অন্যান্য ক্লাবগুলো। তা থামিয়ে দিতেই নতুন চুক্তিতে এই ডিফেন্ডারকে বেঁধে ফেলা হয়েছে ২ লাখ ডলারের রিলিজ ক্লজে।

শুরু থেকেই পাঁচজন ইউরোপিয়ান কোচিং স্টাফ নিয়ে ইউরোপিয়ান ফুটবল মডেল অনুসরণ করে করপোরেট ক্লাব সাইফ স্পোর্টিং। তাদের সৌজন্যেই প্রাক মৌসুম ক্যাম্পের সঙ্গে পরিচিত হয় দেশের ক্লাব ফুটবল। উয়েফা ‘প্রো’ লাইসেন্স কোচ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে দুইটি বয়সভিত্তিক দলের অনুশীলন। ক্লাবের জন্য আছে বিশেষ বিদেশি আইনজীবীও, যিনি এএফসির ‘ল’ কমিটির সদস্যও। ফলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তির বিষয়গুলোও আধুনিক ক্লাবের মানদণ্ডে করা। দলের ২১ তরুণ ফুটবলারের সঙ্গে ২০২১ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে তাদের।

ইয়াসিনের জন্য রিলিজ ক্লজ নির্ধারণের কথা স্বীকার করেছেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দীন চৌধুরী, ‘জুনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে গত বছর ইয়াসিনের সঙ্গে আমরা ৩ বছরের চুক্তি করি। শেষ মৌসুমে সে দুর্দান্ত খেলে জাতীয় দলেও জায়গা করে নিয়েছে। ওকে হারানোর ভয়ে এ বছর আমরা নতুন চুক্তি করে ২ লাখ ডলার রিলিজ ক্লজ নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর ইয়াসিন নতুন খেলোয়াড় হলেও আর্থিকভাবে তাঁকে আমরা অনেক টাকা দিচ্ছি।’ বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী আগামী দুই মৌসুমের জন্য যথাক্রমে ২৫ ও ৩৫ লাখের ওপরে পাবেন ইয়াসিন।

বুঝে শুনেই দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তিতে গিয়েছেন ইয়াসিন। নিজের রিলিজ ক্লজের অবিশ্বাস্য অঙ্কটাও জানা আছে তাঁর, ‘এ বছর চুক্তির সময়ই আমাকে বিষয়টা জানানো হয়। শুনে প্রথমে অবাক হই। ভালো কোচিং স্টাফের অধীনে থেকে ভালো খেলোয়াড় হওয়ার জন্যই গত বছর সাইফে ট্রায়াল দিতে এসেছিলাম। এখন সাইফে ভালো আছি। এখান থেকেই আমার উত্থান। সামনে আরও দুই মৌসুম এই দলেই খেলব।’

পেশাদার লিগে এবার প্রথম খেললেও জাতীয় বয়সভিত্তিক দলগুলোর নিয়মিত মুখ ইয়াসিন। ২০১৭ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর নেতৃত্বেই কাতারকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। এর আগে প্রায় প্রতিটা বয়সভিত্তিক দলের জার্সিই উঠেছে তাঁর গায়ে। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১২ ও ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ দলের সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়ায় মক কাপ জেতার অভিজ্ঞতা আছে। এ ছাড়া জাতীয় দলের অংশ হওয়ার আগে গত মার্চে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে বাহরাইন সফর করেছেন।