নেটে মিলিয়ন মিলিয়ন বল খেলেন বলেই তো...

আউট হওয়ার পর স্মিথ চলেছেন নেটে ব্যাটিং করতে! টুইটার থেকে নেওয়া ছবি
আউট হওয়ার পর স্মিথ চলেছেন নেটে ব্যাটিং করতে! টুইটার থেকে নেওয়া ছবি
>দীর্ঘ বিরতির পর অ্যাশেজে ফিরে টানা তিন ইনিংসে করেছেন ১৪২, ১৪৪ ও ৯২। মাঝখানে এক ম্যাচ খেলা হয়নি। চতুর্থ টেস্টে নিজের ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে ভালোই প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্টিভ স্মিথ

স্টিভ স্মিথ নেটে গেলেই নাকি বাকিদের পিঠ দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। এই যে স্মিথ নামলেন, কখন উঠবেন, তার ঠিক নেই। কাঁহাতক আর তাঁকে বলের পর বল করা যায়! কদিন আগে জাস্টিন ল্যাঙ্গার তো বলেছিলেন, স্মিথ নাকি নেটে মিলিয়ন মিলিয়ন বল খেলেন। এ কারণেই তিনি স্মিথ। এ কারণেই তাঁর এই সাফল্য!

কাল তো অদ্ভুত কাণ্ড করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচ খেলে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেননি। সোজা চলে গেছেন মাঠের পাশের নেটে! ৩৮ বল, ৪৭ মিনিট—এই অল্প কয়টা বল খেলে আর এতটুকুন সময় ক্রিজে থেকে মন ভরেনি তাঁর। ডার্বিশায়ারের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে ২৩ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর তাই প্যাভিলিয়নে ফেরেননি স্টিভ স্মিথ। প্যাড–ট্যাড না খুলে সোজা চলে যান প্র্যাকটিস নেটে, আরও কিছুক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করতে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে নিজের ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে প্রস্তুতি নিতে হবে না!

স্মিথের এই ফেরাটা একটু অন্য রকম। বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে ১২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বিশ্বকাপ দিয়ে। অ্যাশেজ দিয়ে ফিরেছেন টেস্ট ক্রিকেটে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফেরাটা স্মরণীয় করে রেখেছেন এজবাস্টনে প্রথম ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করে। কিন্তু লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার জফরা আর্চারের বাউন্সার তাঁর ঘাড়ে গিয়ে লাগে। মাথায় আঘাতজনিত জটিলতা দেখা দেওয়ায় লর্ডসে দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে পারেননি। খেলা হয়নি হেডিংলিতে তৃতীয় টেস্টেও। যে ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়া বেন স্টোকস–বীরত্বের কাছে হেরেছে ১ উইকেটে।

হেডিংলি ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্মিথের না থাকার কথাও বলেছিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে তাঁর ফেরার দিকে তাকিয়ে আছে টিম পেইনের দল। সেই ফেরার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ভালো করতে পারেননি স্মিথ। ডার্বিশায়ার দলে ফাস্ট বোলার ছিলেন না বললেই চলে। স্মিথ যে ৩৮ বল খেলেছেন তার বেশির ভাগই ছিল মিডিয়াম পেসারদের বিপক্ষে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে আর্চারের গতি সামলানোর অনুশীলনটা আর তাতে হলো কই!

এসব কারণেই আউট হওয়ার পর স্মিথ মাঠের পাশের নেটে চলে গেলেন সতীর্থ ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ‘ডগ থ্রোয়ার’ থেকে বল ছুড়েছেন আর্চারের বলের গতিতে। সেই বল লম্বা সময় ধরে সামলেছেন স্মিথ। তাঁর বাড়তি অনুশীলন নিয়ে সতীর্থ মিচেল মার্শ বলেছেন, ‘আমার তো মনে হয় স্মিথ ২০ বা ২২০ যে রানই করত তারপরও সে নেটে অনুশীলন করতে যেত।’ ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে স্মিথের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়া মার্শ যোগ করেন, ‘সে এ রকমই। সে এটাই করে। আর এ কারণেই সে বিশ্বসেরা।’

স্টোকসের অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসের কল্যাণে হেডিংলি টেস্ট জিতলেও এবারের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং খুব একটা ভালো হচ্ছে না। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে জো রুটের দলের রান ৩৭৪ ও ১৪৬, হার ২৫১ রানে। লর্ডসে বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হলেও প্রথম ইনিংসে ২৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর তারা দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে। এখন পর্যন্ত হওয়া তিন টেস্টে সবচেয়ে ব্যর্থ বলতে হয় ওপেনার জেসন রয়কে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিসহ তাঁর ক্যারিয়ার ৪ টেস্টের। এই চার ম্যাচে ইংলিশ ওপেনার রান তুলেছেন মাত্র ৮.৮৫ গড়ে।

চতুর্থ টেস্টে ব্যাটিং অর্ডারে তাই পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে ইংল্যান্ড। জো ডেনলিকে দিয়ে ইনিংস শুরু করিয়ে রয়কে খেলানো হতে পারে ৪ নম্বরে।

প্রতিভা থাকলেই শুধু হয় না, সেটির যত্ন নিতে নিয়মিত পরিশ্রমও করতে হয়। স্মিথ কথাটা বারবার মনে করিয়ে দেন।