নেইমার এলেন না বার্সেলোনায়, আগামীবার পারবেন কি

দলবদলের হতাশা জাতীয় দলের অনুশীলনে কাটিয়ে উঠতে চাইবেন নেইমার। ছবি: এএফপি
দলবদলের হতাশা জাতীয় দলের অনুশীলনে কাটিয়ে উঠতে চাইবেন নেইমার। ছবি: এএফপি
>দলবদলের মৌসুম শেষ, নেইমারের বার্সেলোনায় ফেরার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল। জানুয়ারিতে আরেকটি দলবদল থাকলেও সে সময়ে তাঁর দল পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তবে আগামী মৌসুমে বার্সা নেইমারকে ফিরিয়ে আনতে পারে, এমন সম্ভাবনাও দেখছেন বিশ্লেষকেরা

স্প্যানিশ, ইতালিয়ান ও ফরাসি ফুটবলে দলবদলের মৌসুম শেষ মাত্রই। পুরো দলবদলের দুই মাস বার্সেলোনায় ফেরার স্বপ্ন দেখেছেন নেইমার। কিন্তু আপাতত দৃশ্যটা দাঁড়াচ্ছে এমন—নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও নেইমারকে খেলে যেতে হবে পিএসজিতে। পরবর্তী দলবদলের মৌসুম এলে আবারও হয়তো প্যারিস ছাড়ার সম্ভাবনা দেখবেন নেইমার। তত দিন পর্যন্ত পিএসজিতে থেকে পারফরম্যান্স দিয়েই পুনরুদ্ধার করতে হবে ক্লাবটির ভক্তদের আস্থা, ভালোবাসা। কাজটা এমনিতেই কঠিন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ায় তো আরও কঠিন।

নেইমার পিএসজি ছাড়তে চান, এ কথা চাউর হয়েছে এবার গ্রীষ্মকালীন দলবদল মৌসুমের শুরু থেকে। ফরাসি ক্লাবটি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নিজেও। ফিরতে চেয়েছিলেন সাধের বার্সেলোনায়। কাতালান ক্লাবটি তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু দরাদরিতে পিএসজির সঙ্গে রফা করতে পারেনি। তাই এবার দলবদলের মৌসুম সবচেয়ে আলোচিত দলবদলটাই বাস্তবতার মুখ দেখল না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, নেইমারকে কেনার ‘নাটক’-এ শেষ দৃশ্যটা বিয়োগান্ত হওয়ায় বার্সার মুখ থাকল কি?

এমন নয় যে বার্সা তাঁকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। দলটির দু-দুটি প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে পিএসজি। ফরাসি ক্লাবটি বার্সার প্রস্তাব নেইমারকে বিক্রির উপযোগী বলে মনে করেনি। দাম নিয়ে বেশ কয়েক ধাপের প্রস্তাবনায় শেষ ধাপটি ছিল—নগদ ১৩০ মিলিয়ন ইউরোর পাশাপাশি ইভান রাকিতিচ, তোদিবোকে স্থায়ীভাবে দেবে বার্সা, পাশাপাশি ওসমানে ডেমবেলেকেও দেওয়া হবে ধারে। পিএসজি রাজি হয়নি। নগদ অর্থের ক্ষেত্রে দলটি কোনোভাবেই নেইমারের দাম ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর নিচে নামাতে রাজি হয়নি। ঠিক এ পর্যায়ে এসে শেষ চেষ্টা করেছিলেন নেইমার নিজেই। নিজের ঝুলি থেকে বাকি ২০ মিলিয়ন ইউরো দিতে চেয়েছিলেন পিএসজিকে। তবু লাভ হয়নি, রাজি হয়নি পিএসজি।

শুধু রাকিতিচ, তোদিবো, ডেমবেলে নন নেলসন সেমেদো, আর্থার মেলো, ফিলিপ কুতিনহোকেও নেইমারকে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের চেষ্টা করেছে বার্সা। মার্কার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্সা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তোমেউ এসব করে আসলে সবাইকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন, ন্যু ক্যাম্পে ফেরাতে পারবেন ব্রাজিলিয়ানকে। আর এ চেষ্টায় বার্তোমেউ যেসব খেলোয়াড়কে ব্যবহার করার কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে দু-একজন বার্সা ছাড়তে বেঁকেও বসেছেন। এদিকে পিএসজির চাহিদা অনুযায়ী বার্সা টাকা আর খেলোয়াড়ের ব্যবস্থা করতে না পারায় নেইমারের ইচ্ছারও বাস্তবায়ন ঘটেনি। এখন বার্সার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, নেইমারকে ফেরানোর চেষ্টায় যেসব ফুটবলারকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল, তাঁদের আবার প্রয়োজনীয় প্রমাণ করা।

প্রশ্ন আছে আরও। নেইমারকে বার্সা ফেরাতে চায়—এটি আসলে কার নির্দেশে বা অনুরোধে? দলের কোচ, সভাপতি, বোর্ড পরিষদ, পরিচালক বর্গ—আসলে কে? সভাপতি যদি এতই মরিয়া হয়ে ওঠেন, চুক্তির শর্তে তো লিওনেল মেসিকেও রাখতে পারতেন? পিএসজি তখন নিশ্চয়ই না করত না! মেসির প্রসঙ্গ উঠছে কারণ, আঁতোয়ান গ্রিজমানকে কেনার পর বার্সার আক্রমণভাগে তেমন লক্ষণীয় কোনো ঘাটতি নেই। অন্তত ফুটবলীয় কারণে নেইমারকে ফেরানোর কথা শোনা যায়নি বার্সার কারও পক্ষ থেকে। মাঝে-মধ্যে শুধু শোনা গেছে, মেসির বিকল্প খুঁজছে বার্সা। সে ‘বিকল্প’ তো আনসু ফাতির মধ্যেও দেখছেন অনেকে।

পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফি দলবদলের মৌসুম শুরুর আগে থেকেই বলে এসেছেন, ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব আসলেই নেইমার ক্লাব ছাড়তে পারে। বার্সা এ পরিমাণ নগদ অর্থের সংস্থান করতে পারেনি। তাই নগদ অর্থের সঙ্গে খেলোয়াড় তুলে দিতে চেয়েছে। এদিকে পিএসজিও জানত এ পরিমাণ অর্থের ব্যবস্থা করতে পারবে না বার্সা, তথ্যটা জানিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লা পারিসিয়েন’। তাদের প্রতিবেদনে ভাষ্য, ‘পিএসজি অনেক দিন ধরেই জানত বার্সার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। নেইমারের যে দাম ধরেছে তারা তা কোনো ক্লাবের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। এটা এমন একটি দলবদল যা কখনো সম্ভব না।’

তাহলে নেইমারের দলবদল সম্ভব না—সেটি বার্সা ও পিএসজি দুই ক্লাবই কি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল? এত দিন তাহলে মিছেমিছিই দলবদলের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথার ডালপালা ছড়ানো হয়েছে? কে জানে! যদিও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ জানিয়েছে, আগামী বছর জানুয়ারির দলবদলে নেইমারকে আবারও কেনার চেষ্টা করবে বার্সা। কাতালান ক্লাবটিই একমাত্র জায়গা যেখানে নেইমার যেতে পারেন। আর ২০১৭ সালে নেইমার বার্সা ছাড়ার পর ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর ভঙ্গুর সম্পর্ক মাঝের দুই বছরে জোড়াও লেগেছে। নইলে রিয়াল মাদ্রিদ নেইমারকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে ব্রাজিলিয়ান তারকা নিজেই দলটিকে ‘না’ বলে দেবেন কেন?

দলবদলে বার্সার অতীত ইতিহাস বলছে, দীর্ঘদিন চেষ্টা করে পছন্দের খেলোয়াড় ফিরিয়ে আনার অভ্যাসটা তাদের নতুন কিছু না। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিজমান, তার আগে ফিলিপ কুতিনহো কিংবা সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, থিয়েরি অঁরির ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। আর জানুয়ারির দলবদলে নেইমারকে নিয়ে পিএসজির এখনকার অনড় অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে।

আগামী দলবদলের মৌসুমে পিএসজি না ছাড়লে নেইমার ফিফায় আপিল করতে পারবেন। ফরাসি ক্লাবটিতে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে। কিন্তু আগামী দলবদলের মৌসুমে পিএসজির সঙ্গে নেইমারের বর্তমান চুক্তির প্রথম তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে, যা তিনি সই করেছিলেন ২৮ বছর বয়সের নিচে থাকতে। রিলিজ ক্লজ ছাড়া চুক্তি রক্ষা করার মেয়াদটা তখন (তিন বছর শেষে) শেষ হবে। আর তখন ফিফা নেইমারের দাম ঠিক করে দিতে পারবে—যা ১৮০ মিলিয়ন ইউরোর আশপাশে হবে বলে বিশ্বাস করে বার্সা। এ দামটা নির্ধারিত হবে নেইমার যে দামে (২২২ মিলিয়ন ইউরো) বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন, আর তাঁর পারিশ্রমিকের ওপর ভিত্তি করে।

অর্থাৎ, বার্সা এখনো দেখছে নেইমারকে ফেরানোর সুযোগ আছে। কিন্তু এবার দলবদলের মৌসুমে যা হলো তার ব্যাখ্যা কি?