স্বপ্ন দেখা থামছে না বাংলাদেশের

এখনো হাল ছাড়তে রাজি নয় বাংলাদেশ। ছবি: শামসুল হক
এখনো হাল ছাড়তে রাজি নয় বাংলাদেশ। ছবি: শামসুল হক

বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হয়েছে ২০ মিনিট আগে। খেলা একটু আগেভাগে শেষ হলেও বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের আসতে একটু দেরিই হলো।

আফগানিস্তান ৩৭৪ রানের লিড পেয়ে গেছে। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে কখনোই রান তাড়া করে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তিনটি ড্র-ই হচ্ছে সাফল্য। এর মধ্যে একটিতে ছিল বৃষ্টির সহায়তা। বাকি দুটি হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গে পাঁচ দিনই রান উৎসব হওয়ায়। চট্টগ্রাম টেস্টের এমন অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাই তাড়া না থাকবারই কথা।

চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সও আশাজাগানিয়া নয়। একমাত্র সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যান কিছুটা বলার মতো। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক ১৯ ইনিংসে ৪১.৮৮ গড়ে করেছেন ৬৭০ রান। সাকিবের পর মুমিনুল হক ১২ টেস্টে ৩৬.২০ গড়ে ৩৬২ রান। মুশফিকুর রহিম ৩৬.১৬ গড়ে ২১ ইনিংসে ৬৮৭ রান। এই তিনজন বাদে চতুর্থ ইনিংসে বাকি ব্যাটসম্যানদের পরিসংখ্যান এতটাই জীর্ণশীর্ণ, তা উল্লেখ না করাই ভালো।

পরিসংখ্যান, রেকর্ড, ইতিহাসে চোখ রাখলে বিষাদের ছায়া পড়ার কথা বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। মানসিকভাবে আরও ধাক্কা খাওয়ার কথা প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান বলেই। আফগানদের বিপক্ষে যদি সত্যি… না, নেতিবাচক চিন্তা করতে চাইছেন না মিরাজ। পরিসংখ্যান, রেকর্ড, ইতিহাস—কিছুই পক্ষে না থাকলেও লড়াই শেষ হওয়ার আগে হারতে চান না দলের স্পিন অলরাউন্ডার, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যদি আমরা আগেই ভেঙে পড়ি, তাহলে তো মাঠেই নামতে পারব না। আমাদের সবারই আত্মবিশ্বাস আছে। খেলায় হার-জিত থাকে। জিতলে অনেক খুশি বা হারলে একদম ভেঙে পড়া, এমন কিছু নয়। আমরা এখনো সবাই খেলার মধ্যে আছি। খেলা শেষে যে ফল আসবে, সেটা নিয়ে হয়তো পরে চিন্তা করব। আমাদের এখন পরিকল্পনা হলো কীভাবে ওদের শেষের দুই উইকেট নিতে পারি এবং পরে ব্যাটিং কীভাবে ভালো করা যায়।

ক্রিকেট এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে—ব্যবহারে ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া আপ্তবাক্যে বিশ্বাস না করে বাংলাদেশের এখন উপায় নেই। মিরাজও আজ এ কথাটাই বলতে চাইলেন ঘুরে-ফিরে। কিন্তু যে দল তাদের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছে, সেটিও প্রতিপক্ষের মাঠে, সেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে এখন পাড়ি দিতে হচ্ছে অনিশ্চিত পথ!

এ প্রসঙ্গে মিরাজ বোঝাতে চাইলেন, নতুন বলেই আফগানিস্তানরা বরং বেশি উজ্জীবিত হয়ে খেলতে নেমেছে। তাঁদের বিপক্ষে দুর্দান্ত কিছু করা একেবারে সহজ নয়, ‘ওরা মাত্র শুরু করেছে টেস্ট ক্রিকেটে খেলা। ওরা চাইবেই যেন বিশ্বকে ভালো কিছু করে দেখাতে পারে। এ কারণে ওদের রোমাঞ্চ বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। মানসিকভাবে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে আমাদের সঙ্গে খেলতে। আমাদের প্রস্তুতিও ভালো ছিল। তবুও ভালো দিন খারাপ দিন আসতেই পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দুটো দিন আমাদের ভালো যায়নি।’

ভালো যায়নি আসলে পুরো তিনটা দিনই। তিনটি খারাপ দিনের পর টেস্টকে ‘ভালো’তে রূপান্তর করতে কাল শুধু কঠিন নয়, ভীষণ দুর্গম পথই পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।