'মন খুলে' খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন মোসাদ্দেক

খুবই বিব্রতকর প্রশ্ন। টেস্ট কেমন খেললেন?

মোসাদ্দেক হোসেন বড় অস্বস্তি নিয়েই উত্তরটা দিলেন, ‘আপনারা যেমন দেখলেন। আর কী বলব বলেন! অনেক বেশি হতাশার একটা ম্যাচ ছিল আমাদের। হয়তো আরও ভালো হতে পারত।’

আরও ভালো হতে পারত, চট্টগ্রাম টেস্টের গল্পটা অন্যরকম হতে পারত যদি ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতেন। এই মোসাদ্দেকই কী শিশুতোষ ভুলটাই না করেছেন! ৩৯৮ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ তাড়া করতে নেমেছিল ব্যাটিং অর্ডারে অনেক অদল-বদল করে। মোসাদ্দেককে নামানো হয়েছিল তিনে। তাঁকে নাম্বার থ্রি পজিশনে নামানোর পেছনে সাকিব আল হাসানের যুক্তি ছিল এমন— ‘প্রথম ইনিংসে স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে ওকেই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ মনে হয়েছে।’ অথচ মোসাদ্দেকই ভীষণ দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েছেন। অফ স্টাম্পের বাইরে করা ‘চায়নাম্যান’ জহির খানকে চালাতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। আত্মাহুতি ছাড়া আর কীই-বা বলা যায় এটিকে!

যেখানে উইকেটে টিকে থাকাই হচ্ছে সর্বোত্তম উপায়, কী বুঝে মোসাদ্দেক চালাতে গিয়েছিলেন? আজ অনুশীলনের পর বাংলাদেশ দলের তরুণ ব্যাটিং অলরাউন্ডারের বললেন, ‘অনেকের মনে হতে পারে যে মারতে গিয়ে আউট হয়েছি। প্রথম ইনিংস কিন্তু শুরু করেছি ছয় মেরে। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় হলে ব্যাপারটি অন্যরকম হতে পারত। হয়নি এ কারণেই এটি আসলে হতাশাজনক।’

ব্যাটিং অর্ডারে আট থেকে তাঁকে উঠিয়ে আনা হয়েছে তিনে। তিন নম্বর পজিশনে নামার অর্থ দায়িত্ব নিয়ে তিনি ইনিংস এগিয়ে নেবেন, মিডল অর্ডার যেন দ্রুত উন্মোচিত না হয় সেই প্রতিরোধটা করবেন। অথচ মোসাদ্দেক চাইলেন ছক্কা মারতে। ছক্কা তিনি মারতেই পারেন, কিন্তু পরিস্থিতিও তো বুঝতে হবে। টেস্টে কেন বল না বুঝে স্ট্রোক খেলার ভাবনা এল তাঁর মাথায়?

এবার মোসাদ্দেকের ব্যাখ্যাটা হচ্ছে, ‘একেক জন ব্যাটসম্যানের খেলার ধরন একেক রকম থাকে। একেকজন একেক স্টাইলে রান করতে পছন্দ করে। আমি যখন ব্যাটিং করতে নামি তখন চিন্তা করি একটি বাউন্ডারি হয়ে গেলে হয়তো একটু চাপমুক্ত থাকব। একেকজনের একেক ভাবনা থাকে। প্রথম ইনিংসে যখন ছয় মারলাম, সবাই তালি দিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন আউট হয়ে গেলাম (ছক্কা মারতে গিয়ে) তখন গালি দেবে এটাই স্বাভাবিক। এটি নিয়ে আসলে খুব বেশি চিন্তিত না। এর পর আবার যখন খেলব তখন হয়তো ভুলগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করব।’

চট্টগ্রামে সাকিব বলছিলেন, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা মন খুলে খেলেন না। ভয়ে ভয়ে খেলেন। এই ভয় থেকেই গড়বড়টা আরও বেশি হয়। মোসাদ্দেক অবশ্য দাবি করলেন তিনি মন খুলে খেলতে গিয়েই অমন ভুল করেছেন, ‘মন খুলে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছি। এটি নিয়ে আমার এখন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া লাগছে। এখন কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না! সামনে টি-টোয়েন্টি (সিরিজ) আছে, এখানে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। একটা ম্যাচ জিতলেই আমরা ছন্দ ফিরে পাব।’

মোসাদ্দেক যে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন, ক্রিকেটের এই সংস্করণে আফগানিস্তান যে বাংলাদেশের চেয়ে আরও শক্তিশালী। আফগানরা এগিয়ে, মোসাদ্দেক অবশ্য এটা ভাবতেই চান না, ‘ওরা তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী দল এটা নিয়েই যদি চিন্তা করতে থাকি তাহলে তো আমরা খেলতেই পারব না। ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে গেলে আগে অনেক প্রশ্ন শুনতে হতো, কী করব কিংবা কি হবে না হবে। তবে এই দ্বিধাগুলো এখন আর নেই। সবাই জানে যে আমরা সবার বিপক্ষেই জিততে পারি। একটি ম্যাচ আমরা হেরেছি, হ্যাঁ, অবশ্যই এটি হতাশার ছিল। মনে করি যত তাড়াতাড়ি এটা ভুলতে পারব এবং একটি ম্যাচ জিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারব, সেটিই ভালো হবে।’