দ্বিতীয়বার অবসর ভেঙে ফিরছেন ক্লাইস্টার্স

চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ক্লাইস্টার্স। ছবি : এএফপি
চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ক্লাইস্টার্স। ছবি : এএফপি

আবারও অবসর ভেঙে টেনিসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন নারী এককের সাবেক নম্বর ওয়ান তারকা কিম ক্লাইস্টার্স। একক টেনিসে চারবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এই তারকা ২০২০ সালে ডব্লুটিএ ট্যুরের মাধ্যমে আবারও কোর্টে ফিরবেন তিনি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।

তবে ক্লাইস্টার্সের অবসর ভেঙে ফিরে আসার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেই ২০০৭ সালে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। বিয়ে করে সন্তানের মা হওয়ার আশা ছিল তখন ক্লাইস্টার্সের চোখেমুখে, যে কারণে টেনিসকে ‘বিদায়’ জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও সে ‘অবসর’ টিকেছিল দুই বছর। পরে কোর্টে আরও তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন ক্লাইস্টার্স। এর পর ২০১২ সালে আবারও অবসর নিয়েছিলেন তিনি। সাত বছর কোর্ট থেকে দূরে থাকার পর আবারও কোর্টে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এই বেলজিয়ান তারকা।

কিন্তু আবারও কী ভেবে টেনিসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ক্লাইস্টার্স জানালেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কাজ করেছে বেশ কিছু কারণ, ‘সেরেনা উইলিয়ামস বা ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার মতো খেলোয়াড়েরা মা হওয়ার পরেও নিয়মিত সর্বোচ্চ পর্যায়ে টেনিস খেলে যাচ্ছেন, তাই এটা একটা অনুপ্রেরণা আমার জন্য।’

কাউকে কোনো কিছু প্রমাণ করার উদ্দেশ্য নয়, বরং নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার জন্যই কোর্টে নামতে চাচ্ছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় না আমি কোনো কিছু প্রমাণ করতে চাই। আমার কাছে এই সিদ্ধান্তটা স্রেফ একটা চ্যালেঞ্জ। আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই। আবারও শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। এটা আমার ম্যারাথন।’

ডব্লুটিএ ইনসাইডার পডকাস্টকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে ক্লাইস্টার্স আলোকপাত করেছেন টেনিসের প্রতি তাঁর ভালোবাসাকে, 'টেনিসের প্রতি ভালোবাসা তো ছিলই, সেটা সব সময় থাকবে। প্রশ্ন হলো আমি কি আবারও নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে টেনিস খেলার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারি নাকি না। দেখা যাক আমার শরীর তাতে সায় দেয় কি না।'

মাত্র বিশ বছর বয়সে দুই বার ফ্রেঞ্চ ওপেন ও একবার উইম্বলডনের ফাইনালে উঠে ২০০৩ সালে বিশ্বের এক নম্বর নারী তারকা হয়েছিলেন ক্লাইস্টার্স। দুই বছরের মধ্যেই জিতে যান নিজের প্রথম একক গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। ২০০৫ সালে ইউএস ওপেন জেতেন তিনি। তবে ক্রমাগত বিভিন্ন চোটের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। এই চোটের কারণে বিরক্ত হয়ে ও সংসার করার জন্য ২৩ বছর বয়সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অবসর নিয়ে নেন তিনি। কিন্তু মেয়ে হওয়ার পর আবারও ফিরে আসেন তিনি, দুই বছরের মাথায়।

'মা' ক্লাইস্টার্স যেন আরও অদম্য রূপে ধরা দিলেন টেনিসপ্রেমীদের কাছে। মা হওয়ার পর ফিরে এসে আরও দুটি ইউএস ওপেন আর একটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন তিনি। র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান পুনরুদ্ধার করেন। ২০১২ সালে আবারও টেনিসকে বিদায় জানান তিনি।

যেহেতু আগে এক নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন, সেহেতু ডব্লুটিএ টুর্নামেন্টে যত খুশি তত ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে খেলার সুযোগ পাবেন এই বেলজিয়ান তারকা। তিনটি ডব্লুটিএ টুর্নামেন্টে খেললে বা দশ র‍্যাঙ্কিং পয়েন্ট অর্জন করতে পারলেও আবারও মহিলা টেনিসের র‍্যাঙ্কিংয়ে ফিরে আসতে পারবেন তিনি।

অবসর নেওয়ার পর নিজে একটা টেনিস একাডেমি খুলেছেন ক্লাইস্টার্স। কাজ করেছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবেও।

আগে যখন টেনিস খেলতেন, জাস্টিন হেনিন আর সেরেনা উইলিয়ামসের সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা জমত বেশ। হেনিন এখন আর না খেললেও, আছেন সেরেনা। খেলছেনও দুর্দান্ত। কোর্টে ক্লাইস্টার্স ফিরলে আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সেরেনা-ক্লাইস্টার্স দ্বৈরথ দেখা যাবে আবার, আর নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার উপলক্ষ পেয়ে যাবেন টেনিসপ্রেমীরা!