আফিফের ইতিবাচক মানসিকতা এনে দিল জয়

দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন আফিফ। ছবি: প্রথম আলো
দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন আফিফ। ছবি: প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়েও দ্রুতগতির ফিফটি দেখেছে বাংলাদেশ। ২০ বলে ফিফটি করে সে রেকর্ড এখনো নিজের দখলে রেখেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। আজ চার বল বেশি খেলে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়লেন আফিফ হোসেন। তবে ইনিংসের গুরুত্বের দিক থেকে আশরাফুলের সে ইনিংসের চেয়ে একটুও কম মার্ক পাবেন না আফিফ।

ভয়ংকর চাপের এক মুহূর্তে নেমেছিলেন আজ। বিনা উইকেটে ২৬ রান তোলা একটি দল ৬০ রানেই ৬ উইকেটে হারিয়ে ফেলে ধুঁকছিল। শুধু ধুঁকছিল না, হারের ক্ষণ গুনছিল। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৫১ বলে ৮৫ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। এক প্রান্তে ২ রানে থাকা মোসাদ্দেক, আর অন্যপ্রান্তে আফিফ। দেড় বছরেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া আফিফ।

হ্যাঁ, সেই কবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন আফিফ। অভিষেকটা একদমই মনের মতো হয়নি। ২ ওভার বল করে ২৬ রানে ১ উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম বলেও কোনো রান না নেওয়ায় অভিষেকে শূন্যের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। পরের ম্যাচে দল থেকেও বাদ পড়েছিলেন। সেই যে বাদ পড়া, এরপর গত দেড় বছরে তাঁকে আর দলে ডাকার প্রয়োজনবোধ করেনি বাংলাদেশ দল।

আজ তাই আফিফের অমন পরিস্থিতিতে ব্যর্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। সেখানে নেমেই প্রথম বলে চার মারলেন আফিফ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম স্কোরিং শটটাই বাউন্ডারি! পরের ওভারেও টানা দুই চার। ওভারটা শেষ করলেন উইলিয়ামসকে ছক্কা মেরে। ৬ বলে ১৮ রান আফিফের। মোমেন্টাম চলে এল বাংলাদেশের কাছে। পরের ওভারে মোমেন্টাম বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসা নিশ্চিত করলেন মোসাদ্দেক টানা দুই ছক্কা মেরে। এরপরই অবশ্য থেমে গেছেন মোসাদ্দেক। অন্যপ্রান্তে যে রান তোলার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিলেন আফিফ। শেষ ওভারে জয় নিশ্চিত করে আউট হওয়ার আগে ৫২ রান করেছেন, মাত্র ২৬ বল খেলেই। আটটি চার ও এক ছক্কার ওই ইনিংসে বাংলাদেশ বাঁচিয়ে দিয়েছেন বিশাল এক লজ্জার হাত থেকে।

এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে না পুড়েও কীভাবে এ ইনিংস গড়লেন আফিফ? উত্তরটা একদম সহজ, ‘আমি শুধু ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি। অনেক দিন পর একটা সুযোগ পেয়েছি। আমি শুধু টাইমিং ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। মোসাদ্দেকের সঙ্গে জুটিটা বেশ উপভোগ করেছি আমি।’ ইতিবাচক থাকার চেষ্টা পুরো ইনিংসেই বোঝা গেছে। দলের সবাই যখন শর্ট বলে অসহায়ভাবে আউট হচ্ছিলেন, এমনকি মোসাদ্দেককেও অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গেছে বারবার, তখন আফিফ অনায়াসে পুল করেছেন।। স্কুপ করে চার মেরেছেন, পেরিস্কোপ খেলেছেন।

আফিফের ইতিবাচক মানসিকতাই আজ আরেকটি লজ্জা থেকে বাঁচাল বাংলাদেশকে।