আফগানিস্তানকে হারাতেই পারছে না বাংলাদেশ

আরেকটি উইকেট পতনের উল্লাস আফগানদের। জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল তারা। ছবি: এএফপি
আরেকটি উইকেট পতনের উল্লাস আফগানদের। জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল তারা। ছবি: এএফপি
>ত্রিদেশীয় সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে ২৫ রানে হারল বাংলাদেশ। ১৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩৯ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিকেরা। চট্টগ্রামে টেস্ট হারের পর এবার টি-টোয়েন্টিতেও আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি ছক্কার খেলা। ৬ উইকেটে ১৬৪ রান তোলার পথে গোটা ইনিংসে ১০ ছক্কা মেরেছে আফগানিস্তান। এ রান তাড়া করতে নেমে ১৯তম ওভার পর্যন্তও কোনো ছক্কা মারতে পারেনি বাংলাদেশ। এ তথ্যটুকুই যথেষ্ট ওভারপ্রতি গড়ে আটের বেশি রান তাড়া করতে নেমে কেমন ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজুর রহমান ইনিংসের প্রথম ছক্কাটা মারার আগেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে!

সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের সংস্করণে হারের পর এবার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণেও আফগানদের কাছে হারল বাংলাদেশ। ১৯.৪ ওভারে ১৩৯ রানেই গুটিয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। ২৫ রানের এ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল আফগানিস্তান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে গত পাঁচ বছরে আফগানদের বিপক্ষে জয়বঞ্চিত রইল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে টেস্ট হারের পর এবার হার টি-টোয়েন্টিতেও।

তাড়া করতে নেমে লিটন দাসের সঙ্গে ওপেন করেছেন মুশফিকুর রহিম! তা দেখে ভীষণ অবাক হওয়ার কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এবারই যে প্রথম ওপেন করলেন মুশফিক। সৌম্য সরকারকে শুরুতে মুজিব উর রহমানের স্পিন থেকে বাঁচাতেই সম্ভবত এ কৌশল অবলম্বন করেছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তাতে কাজ হলো কোথায়? পঞ্চম ওভারে সৌম্য ফিরলেন প্রথম বলেই, শিকারি সেই মুজিব-ই! অবশ্য শুধু সৌম্যর একার আর কতটুকু দায়? তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে তাঁর নিয়মিত ওপেনিং সতীর্থ লিটন দাস (০) অল্পের জন্য আফগান ইনিংসের পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি!

আফগানিস্তানের ইনিংসে প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের ইনিংসে লিটন উইকেট উপহার দিয়েছেন ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। বলা ভালো, মুজিবকে উপহার দিয়েছেন। অন সাইডে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন অফ সাইডে। পরের ওভারে ফারিদ আহমেদকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড মুশফিক (৫)। বরাবরের মতোই শুরুতে জেঁকে বসা চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি দল। উল্টো পঞ্চম ওভারের মধ্যে সাকিব (১৫) ও সৌম্যকে (০) হারানোয় চাপটা আরও ঘনীভূত হয়।

পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির মিলে একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের ৫৮ বলের জুটিতে খেলা ৫১ বলসংখ্যা সে চাপ খুব একটা আলগা করতে পারেনি। ১৪তম ওভারে নঈবের স্লোয়ার আগেভাগে খেলে ফেলার খেসারত দিয়ে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯ বলে তাঁর ৪৪ রানের ইনিংসটি আক্ষেপই বাড়িয়েছে। ওই ওভার শেষে ৩৬ বলে ৭১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। আগের ম্যাচের নায়ক আফিফ হোসেনের ওপর ভরসা রেখেছিলেন অনেকেই। কিন্তু একজন খেলোয়াড় তো আর প্রতিদিন রান করবেন না! তার ওপর পরের ওভারে সাব্বিরও (২৭ বলে ২৪) ফেরায় চোখ রাঙাতে শুরু করে হার। শেষ ৩০ বলে ৬৮ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে ৪ উইকেট, ব্যাট করছিলেন গত ম্যাচ জেতানোর দুই কারিগর আফিফ ও মোসাদ্দেক।

এখান থেকেও অনেকে আশা দেখেছেন। কিন্তু দুই তরুণ পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে রানের চাকা ঘোরাতে পারেননি। ১৮ বলে ৫১ রানের দূরত্বে থাকতে ১৮তম ওভারে আউট হন আফিফ (১৪ বলে ১৬)। শেষ দুই ওভারে ৪৫ রানের দূরত্বে থাকতে আকাশে ক্যাচ তুলে আউট হন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। রশিদ খান তুলে নেন তাঁকে। এক বল পর মোসাদ্দেককেও (১০ বলে ১২ রান) তুলে নেন আফগান অধিনায়ক। হার তখন কেবলই সময়ের ব্যাপার। আর দর্শকেরা ছাড়তে শুরু করেছেন গ্যালারি, সম্ভবত মনে বেশ বিস্ময় নিয়েই—বাংলাদেশের জন্য আফগানিস্তান এখন কত কঠিন দল!

এ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে দর্শকদের বিনোদন নেওয়ার যদি কিছু থাকে তবে সেটি শেষ ওভারে। ৬ বলে ৪০ রানের অনতিক্রম্য দূরত্বে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ফারিদের প্রথম চার বল থেকে দুই চার ও এক ছক্কা আদায় করে নেন মোস্তাফিজ।