আমিনুল ছিলেন ব্যাটসম্যান, হয়ে গেছেন লেগ স্পিনার

জহুর আহমেদের নেটে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ছবি: শামসুল হক
জহুর আহমেদের নেটে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। ছবি: শামসুল হক

আজ পড়ন্ত বিকেলে জহুর আহমেদের নেটে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বোলিং দেখে সুকুমার রায়ের ‘আবোলতাবোল’ ছড়াটা বেশ মনে পড়ছিল—হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),/  হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না। বিপ্লবের ক্ষেত্রে কিছু শব্দ পাল্টে বলতে হবে, ‘ছিল ব্যাটসম্যান, ...হয়ে গেল লেগ স্পিনার।’

নেটে বোলিং শুরু করতেই সাংবাদিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এলেন বিপ্লব। কাল বিসিবি যে দল দিয়েছে, সেখানে সবচেয়ে বড় চমকটা তিনিই। স্বাভাবিকভাবে তাঁকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি হবেই। বিপ্লব কখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেননি। অভিজ্ঞতা বলতে ১৯টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ আর দুটি টি-টোয়েন্টি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিপ্লব খেলেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। সেখানে ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে খুব যে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন, সেটিও নয়। আমিনুলের সেরা সিরিজ কেটেছে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিবিএ) বিপক্ষে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ২টি (তিন দিনের ম্যাচ ছিল)।

ব্যাটিংয়ে সেই দ্যুতি পরে ধারাবাহিক ছড়াতে পারেননি। তবে মাস তিনেক আগে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন যখন বললেন, ‘বিপ্লবের (আমিনুল) লেগ স্পিনটা অসাধারণ’, শুনে অবাকই হতে হলো। কে জানত, কদিন পর আকস্মিকভাবে তাঁকে জাতীয় দলে সুযোগ দিয়ে এর চেয়ে বড় চমক উপহার দেবেন নির্বাচকেরা!

কাল আমিনুল-প্রসঙ্গ উঠতেই নির্বাচক হাবিবুল বাশার বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিলেন, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) দলে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যাটসম্যান হিসেবেই। কিন্তু এইচপি দলে আমিনুল একটা সময় নিয়মিত বোলিং করতেন না। তাঁরাই বলে-টলে তাঁকে বোলিংয়ে মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছেন।

আমিনুলের যে লেগ স্পিন নিয়ে প্রধান নির্বাচক এত মুগ্ধ, প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে তাঁর সাফল্য নেই বললেই চলে। টি-টোয়েন্টিতে কখনো বোলিংই করেননি। ১৯টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে উইকেট মাত্র তিনটি। তবুও তাঁকে কেন সুযোগ দেওয়া? গত কদিনে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নাকি বারবার নির্বাচকদের কাছে একজন লেগ স্পিনার চেয়ে ‘চাহিদাপত্র’ পাঠাচ্ছেন।

>

বাংলাদেশ দলে বড় চমক হয়ে এসেছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আজ জহুর আহমেদের নেটে অনেকক্ষণ বোলিং করেছেন ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার। কাল কি তিনি থাকছেন একাদশে?

আগে থেকেই এ তরুণে মুগ্ধ মিনহাজুলের মনে হয়েছে, এবার তাঁকে একটা সুযোগ দেওয়া যায়। প্রধান নির্বাচক অবশ্য তাঁকে শুধুই লেগ স্পিনার নয়, দেখতে চান বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে, ‘বাংলাদেশ দল যখন অনুশীলনে ব্যস্ত, ওকে তখন এইচপিতে তৈরি করেছি। খেলতে খেলতেই সে তৈরি হচ্ছে। ম্যাচ খেললে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলবে।’

জহুর আহেমেদের নেটে আজ অনেকক্ষণ বিপ্লবকে পরখ করে দেখেছেন কোচ ডমিঙ্গো। শরীয়তপুর থেকে উঠে আসা ১৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার এত বড় প্ল্যাটফর্মে পা রেখেছেন, সে স্নায়ুচাপেই কিনা একটা ভালো বোলিং করেন তো, পরেরটা হয়ে যায় আলগা! কখনো ভালো জায়গায় ফেলছেন তো আরেকটা হয়ে যাচ্ছে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের ফুল টস। কখনো কখনো অবশ্য রোমাঞ্চ ছড়ানো গুগলি মেরে কঠিন পরীক্ষাও নিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের।

নেটে বোলিং দেখে একজন বোলারকে নিয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যায় না। মূল্যায়ন হবে ম্যাচে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মোসাদ্দেক হোসেন অবশ্য ইতিবাচক তাঁর সতীর্থকে নিয়ে, ‘উইকেটেও দেখলাম ভালো বোলিং করে আসছে আমিনুল। ভালো কিছু করবে আশা করছি।’ কথা হচ্ছে, যেভাবে চমকে দিয়ে তাঁকে নেওয়া হলো, তাঁকে আদৌ একাদশে সুযোগ দেওয়া হবে তো? মিনহাজুল বললেন, ‘একাদশ তো তৈরি করে অধিনায়ক আর কোচ। আমাদের দায়িত্ব তাদের চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত করা।’

রশিদ খানদের সামলানোর প্রস্তুতি হিসেবে নেটে একজন লেগ স্পিনার দরকার বলেই শুধু আমিনুলকে নেওয়া, নাকি কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সত্যি সুযোগ পাবেন, সেটি জানতে একটু অপেক্ষা করতে হবে। সুযোগ পেয়ে আমিনুল যদি দারুণ কিছু করতে পারেন, তখন হয়তো বলা যাবে, ‘...হয়ে গেল প্রজাপতি!’