বিসিবিতে এখন 'অনেক নির্বাচক'

জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেক হস্তক্ষেপ হয় বলেই মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেক হস্তক্ষেপ হয় বলেই মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
>বিসিবির সাবেক প্রধান নির্বাচক কাঠগড়ায় তুললেন বর্তমান নির্বাচনপ্রক্রিয়া। ফারুক মনে করেন, এখন দল নির্বাচনে অনেক হস্তক্ষেপ হয়। এই ব্যবস্থার সঙ্গে তিনি একমত নন

বর্তমানে জাতীয় দল নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন দুজন—মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশার। সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ মনে করেন, লিখিতভাবে দুজন থাকলেও দল নির্বাচনে নাক গলান আরও অনেকে।

গত তিন মাসে বাংলাদেশ দল যে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, একের পর এক ম্যাচ হারছে, এতে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নির্বাচকদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া। ফারুক বলছেন, শুধু দুজনই দল নির্বাচন করেন না। নানা ভাবে হস্তক্ষেপ করা হয় নির্বাচনপ্রক্রিয়ায়। আজ চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক বললেন, ‘এখন (বিসিবিতে) নির্বাচক অনেকেই আছে। এখানে (বোর্ড) পরিচালক, ম্যানেজার, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান—সবাই নির্বাচক। আমরা মনে হয় নির্বাচক আছেন পাঁচ-সাত জন! আমি যখন প্রধান নির্বাচক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি (২০১৬ সালের জুনে) তখন নির্বাচক ছিল দুজন। সঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজন ম্যানেজার হিসেবে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকত। এরপর শর্ত তৈরি করা হলো, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান হিসেবে যে থাকবে সেও একজন নির্বাচক। এখন নির্বাচক আসলেই অনেকজন, একজন তো না। বিষয়টা ইতিবাচক হলে আমি থাকতাম। তবে এই নিয়মে কাজ করব না বলেই ছেড়ে দিয়েছি (প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব)। যখন দল ভালো করবে তখন সবাই কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করবে। আবার যখন খারাপ করবে তখন একে অপরের দিকে আঙুল তুলবে।’

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে অস্থিরতা, সেটিতে ফারুক দায়ী করছেন নির্বাচকদেরই। তাঁর চোখে নির্বাচকদের কাজটা ভালো হচ্ছে না বলেই এই অস্থিরতা, ‘একটা দলের পারফরম্যান্স ভালো বা খারাপ হবে এটা খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ কি ঠিকঠাক করতে পারছি? যেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত তা হচ্ছে অন্য কিছু ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনের দায়িত্ব এমন কাউকে দিতে হবে যে তাঁর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে। একজন ক্রিকেটার যখন সুযোগ পেল, কেন সুযোগ পেল? বা কেউ বাদ পড়লে কেন বাদ পড়ল, এসব ব্যাখ্যা বর্তমান সময়ে আমরা খুব একটা দেখতে পাই না। আর দল হারলে যে অস্থিরতা তৈরি হয় সেটাও কাম্য না। যেহেতু আমরা সিলেকশনের কাজ ভালোমতো করছি না, তাই অস্থিরতা খুব সহজেই হয়ে যায়। একটা-দুইটা ম্যাচ খারাপ করলে মনে হয় ঠিক হচ্ছে না, আবার অনেক ধরনের পরিবর্তন। বোর্ড যেন এ ব্যাপারে একটু দক্ষতার পরিচয় দেয়, সে আশাই করব।’

ফারুক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। কোন খেলোয়াড় কোন সংস্করণের জন্য যথার্থ, এটিই যেন পরিষ্কার নন নির্বাচকেরা। একজন খেলোয়াড় ভালো খেলেছেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে, তাঁর অভিষেক হয়ে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে। পাইপলাইনও এতটা সমৃদ্ধ হয়নি যে সংস্করণ ভেদে আলাদা আলাদা দল করবে বিসিবি। তবে করণীয় কী? ফারুক বলছেন, ‘নাজমুল হোসেন শান্ত ছেলেটা প্রতিভাবান। কিন্তু কোন সংস্করণে সে দুর্দান্ত, সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। নিউজিল্যান্ডে টেস্টে খেলিয়ে তাকে বাদ দেওয়া হলো। সে বাদ পড়েছে ৫০ ওভারের ম্যাচ থেকেও। এখন আবার দেখি টি-টোয়েন্টি দলে। একটা ছেলেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলাতে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সে কোন ফরম্যাটে মানানসই, হোম কন্ডিশন বা দুর্বল প্রতিপক্ষ এসব দেখে খেলানো যেতে পারে। এখন যেটা হচ্ছে, হয়তো কারও মধ্যে সম্ভাবনা আছে তাকে পরীক্ষামূলক সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাকে যদি প্রতিভাবান মনেই করি, তাহলে তো তাকে আরও বেশি সুযোগ দিতে হবে। এই বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখা উচিত। না হলে দলটা আরও ভারাসাম্য হারাবে।’