জোকোভিচের কাছে হেরে কেঁদেছিলেন ফেদেরার

এবারের উইম্বলডন ফাইনাল জিতলে ফেদেরারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম সংখ্যা এখনো বিশে আটকে থাকত না। ছবি : এএফপি
এবারের উইম্বলডন ফাইনাল জিতলে ফেদেরারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম সংখ্যা এখনো বিশে আটকে থাকত না। ছবি : এএফপি
>

দুই মাস আগে উইম্বলডনের মহাকাব্যিক এক ফাইনালে রজার ফেদেরারকে হারিয়েছিলেন সার্বিয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ। এই বয়সে এসে আবারও উইম্বলডন জেতার মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবেন, অনেকেই ভেবেছিল। সে লক্ষ্য পূরণে হাতছোঁয়া দূরত্বেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জোকোভিচের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের কাছে হার মানতে হয় তাঁকে। সে অসাধারণ ম্যাচের দুই মাস পর এত দিনে এসে ফেদেরার স্বীকার করলেন, সে ম্যাচ শেষে কেঁদেছিলেন তিনি!

‘শেষ কবে কেঁদেছি? বেশি দিন আগে না। দু মাস আগে। উইম্বলডনের ফাইনালের পর।

কোর্টে খেলা শেষ হওয়ার পর আর পুরস্কার বিতরণীর সময়ে আমি অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছিলাম। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর যখন লকার রুমে গেলাম, কে যেন বলল, “আহারে, কি দুর্ভাগ্য তোমার। আরেকটু হলে জিতেই যেতে!”

কথাটা শোনার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল চোখ থেকে।'

ওপরের বক্তব্যটা টেনিস তারকা রজার ফেদেরারের। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের দিক দিয়ে পুরুষদের টেনিসে যার শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। কিন্তু সর্বসেরাদেরও অপ্রাপ্তি থাকে, থাকে অপ্রাপ্তির বেদনা। যে বেদনা তাদের কুরে কুরে খায়। সে অমোঘ সত্যিটাই যেন ফেদেরার আরেকবার প্রমাণ করলেন কথাগুলো বলে।

কী নিয়ে ফেদেরার কথাগুলো বলেছেন? ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দুই মাস পেছনে যাওয়া যাক তবে। উইম্বলডনের ফাইনালে মুখোমুখি ফেদেরার ও জোকোভিচ। টেনিস ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুই তারকা। একজনের গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা সংখ্যা বিশটি, আরেক জনের ষোলোটি। বর্ষীয়ান ফেদেরার বেশ ভালোই জানেন, বেশি দিন শীর্ষ পর্যায়ে টেনিস খেলা হবে না তাঁর। ওদিকে গ্র্যান্ড স্ল্যামের দৌড়ে তাঁকে প্রায় ধরে ফেলেছেন জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল। ফেদেরারের চেয়ে বয়স কম হওয়ার কারণে যারা স্বাভাবিকভাবেই ফেদেরারের চেয়ে বেশি সময় ধরে টেনিস খেলতে পারবেন।

এমনিতেই ফেদেরারের খেলায় আর আগের মত ধার নেই। গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টগুলোর ফাইনালে উঠতেই অনেক কষ্ট করতে হয়, শিরোপা জেতা তো দূরের কথা। যে কারণে এবার উইম্বলডনের শিরোপাটা জেতা বড় দরকার ছিল ফেদেরারের। শীর্ষস্থানে নিজের অবস্থান আরেকটু দীর্ঘায়িত করার জন্য।

ওদিকে জোকোভিচের চোখেও স্বপ্নের মায়াঞ্জন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাদাল আর ফেদেরারকে টপকে পুরুষ টেনিসের শ্রেষ্ঠতম তারকা হতে চান তিনি।

ফলে লড়াইটাও হলো সেয়ানে সেয়ানে। ৪ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট ধরেই উত্তেজনায় বুঁদ থাকলেন টেনিসপ্রেমীরা। ৩৮ ছুঁই ছুঁই বয়সে উইম্বলডন ফাইনালের ইতিহাসে দীর্ঘতম ম্যাচটা খেলেও শিরোপাটা জেতা হলো না ফেদেরারের। ওটা উঠেছিল নোভাক জোকোভিচের হাতে।

এই বয়সে এত কঠিন লড়াই করেও শিরোপা না জেতার বেদনাটা যে তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছে, সেটাই যেন এত দিনে এসে বোঝালেন ফেদেরার। লেভার কাপ খেলতে গিয়ে ইতালিয়ান দৈনিক লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, জোকোভিচের বিপক্ষে সে পরাজয়টা এতটাই কষ্ট দিয়েছে তাঁকে, যে তিনি চোখের পানি সামলাতে পারেননি!