রোনালদোকে ফ্রি বার্গার দিতেন তিনি
>রোনালদোর চরম দুঃসময়ে ম্যাকডোনাল্ডসের যে কর্মীরা তাঁকে রাতে বিনা মূল্যে খেতে দিতেন, সে কর্মীদের একজনের খোঁজ পাওয়া গেছে। রোনালদোর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেছেন পলা লেকা নামের সেই নারী।
কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিয়ানো জানিয়েছিলেন দারিদ্র্যে ভরা দিনগুলোর কথা। ম্যাকডোনাল্ডসের একটা দোকানের সামনে রাতে বসে থাকতেন ক্ষুধার্ত রোনালদো ও তাঁর সঙ্গী কিশোর ফুটবলাররা, অবিক্রীত বার্গার পাওয়ার আশায়। ম্যাকডোনাল্ডসের কয়েক জন কর্মী তখন দয়াপরবশ হয়ে রোনালদোদের খেতে দিতেন। এখন রোনালদোর অর্থের অভাব নেই। এত দিন পরেও সেসব দিনগুলোর কথা ভোলেননি তিনি। তাই সেই সাক্ষাৎকারে সেই নারীদের সন্ধান চেয়েছিলেন তিনি। অবশেষে পাওয়া গেছে তাঁদের একজনের হদিস।
নিজের উঠে আসার সময়ে কত আত্মত্যাগ করতে হয়েছিল, পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সেটা জানিয়েছেন রোনালদো। এখনো মনে আছে সে দিনগুলোর কথা, ‘রাত একটু গভীর হলে, ধরেন সারে দশটা বা এগারোটা বাজলে ক্ষুধা লাগত। যে স্টেডিয়ামের পাশে আমরা থাকতাম সেখানেই একটা ম্যাকডোনাল্ডস ছিল। প্রায়ই আমরা পেছনের দরজায় গিয়ে নক করতাম আর বলতাম, কোনো বার্গার আছে? এডনা ও বাকি মেয়ে দুজনের মমতা ছিল অবিশ্বাস্য।’
এডনাদের কথা কখনো ভোলেননি রোনালদো। মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁদের খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন, ‘আমি তাঁদের আর খুঁজে পাইনি। আমি পর্তুগালে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, খোঁজার চেষ্টা করেছি তারা কোথায় কারণ আমি তাদের হদিস পাচ্ছি না। ওরা সেই ম্যাকডোনাল্ডটা বন্ধ করে দিয়েছে। আশা করছি এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমি তাদের খুঁজে পাব। আমি তাহলে খুব খুশি হব। কারণ আমি এডনাকে তুরিন বা লিসবনে দাওয়াত দিতে চাই। আমার বাসায় এসে আমার সঙ্গে ডিনার করুক সেটা চাই। ওদের খুঁজে পেতে চাই কারণ আমি ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে চাই। আমি কখনো এটা ভুলব না।’
সে তিনজনের এক নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁর নাম পলা লেকা। পর্তুগিজ গণমাধ্যম রেডিও রেনাঁসেসাঁ খুঁজে পেয়েছে তাঁকে। রোনালদোদের সেসব দিনগুলো মনে করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ওরা দোকানের কাউন্টারের সামনে এসে ভিড় জমাতো। অতিরিক্ত বার্গার আছে কি না জানতে চাইত। আমরা তখন আমাদের দোকানের ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত অবিক্রীত বার্গারগুলো দিয়ে দিতাম। ছেলেদের মধ্যে একজন ছিল রোনালদো। ও সবার চেয়ে রোগাপটকা ছিল। প্রায় প্রতি রাতেই এই ঘটনা ঘটত।’
এই ঘটনা লেকার পরিবারও জানেন, ‘ঘটনাটা মনে পড়লে আমার এখন হাসি পায়। আমি আমার ছেলেকে ঘটনাটা বলেছি। ও বিশ্বাসই করতে চায় না যে ওর মা এককালে রোনালদোকে ফ্রি বার্গার খাওয়াত। ও ভাবে আমি মিথ্যে বলছি। তবে আমার স্বামী ব্যাপারটা জানে। সে তখন রোনালদোকে সামনাসামনিও দেখেছিল। তখন দিনের শেষে আমার স্বামী আমাকে নিতে আসত। তখনই সে রোনালদোকেও দেখেছিল।’
এত দিন পরে এসেও রোনালদো যে সে সব দিনের কথা ভোলেননি, তাতে অভিভূত লেকা, ‘এত দিন পরেও ঘটনাটা মনে রেখেছে, তাতেই বোঝা যায় ও মানুষ হিসেবে কতটা উঁচুমানের। ও আমাদের দাওয়াত দিয়েছে, আমি দাওয়াত গ্রহণ করলাম। ওর সঙ্গে দেখা হলে আমি ওকে ধন্যবাদ জানাব। সেসব দিনের কথা স্মরণ করব।’
পিয়ার্স মরগান অবশ্য দাবি করেছে লেকা সেই তিনের একজন নন!