আক্রমণ ঠেকানো নিয়ে যন্ত্রণায় বার্সেলোনা

চোট আর টানা খেলা সমস্যা হতে পারে বার্সা রক্ষণভাগের জন্য। ছবি : এএফপি
চোট আর টানা খেলা সমস্যা হতে পারে বার্সা রক্ষণভাগের জন্য। ছবি : এএফপি
>

মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্ভাবনায় বার্সেলোনা। চোটের কারণে মেসি এখনো পুরো একটা ম্যাচ খেলতে পারেননি। লিগের প্রথম চার ম্যাচে জয় এসেছে মাত্র দুটিতে। শুধু এটাই নয়, আরও বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে কাতালান ক্লাবটি। আশু সমাধান না হলে পরে এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী

গোটা দলবদলের সময় জুড়ে বার্সেলোনা নেইমার ও আঁতোয়ান গ্রিজমানের পিছে ছুটেছে। প্রথম জনকে না পেলেও, দ্বিতীয় জনকে ঠিকই পেয়েছে। আক্রমণভাগকে বিশ্বসেরা করতে গিয়ে রক্ষণভাগের অবস্থা যে তথৈবচ, সেটি কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের চোখে পড়েনি হয়তো। দলবদলের সময়ে রক্ষণভাগের দিকে নজর না দেওয়ার কুফল আস্তে আস্তে পেতে শুরু করেছেন ভালভার্দে।

বার্সেলোনার রক্ষণভাগে কেন্দ্রে খেলার জন্য আছে স্প্যানিশ তারকা জেরার্ড পিকে ও তিন ফরাসি—ক্লেমেন্ত লেংলেত, স্যামুয়েল উমতিতি ও জ্যাঁ-ক্লাইর তোদিবো। কাগজে-কলমে সেন্ট্রাল ডিফেন্সের এ মান যথেষ্ট ভালো। কিন্তু মাঠের খেলায় তার প্রতিফলন ঘটছে সামান্যই। পিকের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এটাও মানতে হবে, বার্সার ইতিহাসের অন্যতম সেরা এ খেলোয়াড়ের বয়স হয়েছে। সে রকম তরুণ অসাধারণ কোনো সেন্টারব্যাক থাকলে (পড়ুন ম্যাথিস ডি লিট) হয়তো এ মৌসুম থেকেই পিকে আস্তে আস্তে কম খেলা শুরু করতেন। একদম নিয়ম করে প্রত্যেক ম্যাচ খেলতেন না হয়তো। কিন্তু দলে পিকের সমান কার্যকরী কোনো সেন্টারব্যাক না থাকায় তাঁর ওপর চাপ পড়ছে অনেক। এই মৌসুমে টানা পাঁচ ম্যাচেই পুরো সময় মাঠে ছিলেন পিকে।

পিকের সঙ্গী হিসেবে হিসেবে ভালভার্দের একমাত্র পছন্দ ফরাসি তারকা ক্লেমেন্ত লেংলেত। পিকের সমান পাঁচটি ম্যাচে খেলেছেন তিনিও। এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম পাননি। অর্থাৎ প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, তাদেরই নামিয়েছেন ভালভার্দে। লেংলেতও অসাধারণ, কিন্তু প্রেসিং ফুটবলের বিপক্ষে ভেঙে পড়ার নজির তাঁর আছে। এর সঙ্গে ক্রমাগত খেলে যাওয়ার ক্লান্তি তো আছেই।

পিকে বা লেংলেত কেন প্রত্যেকটা ম্যাচ খেলছেন? প্রশ্ন উঠতে পারে। এর কারণ আরেক ফরাসি তারকা স্যামুয়েল উমতিতির চোট। গত বিশ্বকাপ জয় করার পর থেকেই একের পর এক চোটের কারণে মাঠের বাইরেই সময় কাটাচ্ছেন প্রতিভাবান এ সেন্টারব্যাক। সম্প্রতি পায়ের মেটাটারসালে চিড় ধরায়ে আবারও মাঠের বাইরে চলে গেছেন তিনি। ফলে পিকে-উমতিতি ও লেংলেতের মধ্যে ওলট-পালট করে যে দুজনকে খেলাবেন, সেটা করতে পারছেন না ভালভার্দে।

বাকি থাকেন আরেক ফরাসি তারকা, চারজনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ—জ্যাঁ-ক্লাইর তোদিবো। তোদিবো প্রতিভাবান, তবে সে প্রতিভার দর্শন বার্সা সমর্থকেরা পেয়েছেন কদাচিৎ। মাত্র দুই ম্যাচ খেলা এ তারকার ওপরে ভালভার্দেরও বিশেষ ভরসা নেই। নেইমারকে আনার চুক্তিতে তাঁকে ঠেলেঠুলে পিএসজিতে পাঠানোর জন্য বার্সেলোনার তৎপরতা অন্তত সেটাই বলে।

উমতিতির চোট ও তোদিবোর ওপরে ভালভার্দের আস্থাহীনতা বার্সেলোনাকে সমস্যায় ফেলেছে। প্রত্যেকটি ম্যাচ পিকে আর লেংলেতকেই খেলতে হচ্ছে, যাই হোক না কেন। এখন ক্লান্তিজনিত কারণে এ দুজনের একজন চোটে পড়লে কি হবে? উত্তর জানে না কেউ।

রাইটব্যাকে খেলার জন্য বার্সায় আছেন নেলসন সেমেদো, সার্জি রবার্তো ও মুসা ওয়াগ। নেলসন সেমেদো পর্তুগালের হয়ে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছেন। সার্জি রবার্তো রাইটব্যাকে ভালো খেলতে পারলেও আদতে তিনি একজন মিডফিল্ডার। মুসা ওয়াগের সমস্যাটাও তোদিবোর মতোই, সুযোগ পেলে হয়তো ভালো করবেন, কিন্তু ভালভার্দে সেই সুযোগটা দিতে নারাজ।

ওদিকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেছেন দলের মূল লেফটব্যাক জর্দি আলবা। কবে ফিরবেন, এখনো জানা যায়নি। তাঁর বিকল্প হিসেবে এ মৌসুমেই দলে এসেছেন জুনিয়র ফিরপো। অন্তত এই একটা দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন ভালভার্দে।

কিন্তু সেন্টারব্যাক আর রাইটব্যাকের কি হবে? এখনো তেমন বড়সড় কোনো সমস্যা না হলেও সামনে যে হবে না, তার কি নিশ্চয়তা?