বাংলাদেশের 'জান'-এর আরও দুই কীর্তি

কাল সাকিব আল হাসান খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ছবি: প্রথম আলো
কাল সাকিব আল হাসান খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ছবি: প্রথম আলো

কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিনে তৃতীয় সেশনের একটি মুহূর্ত। তখন উইকেটের জন্য মরিয়া ছিল বাংলাদেশ। বল করতে এলেন সাকিব আল হাসান। তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগাতে সত্য কথাটা বলে দিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। স্টাম্প মাইকে ধরা পড়ল সে সত্য বচন, ‘বাংলাদেশের জান, সবাই তাকিয়ে আছে তোমার দিকে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে কাল সেই চট্টগ্রামেই একই পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হওয়ায় এ ম্যাচে আলাদা কোনো চাপ ছিল না। কিন্তু ১৪০–এরও কম রান তাড়া করতে নেমে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের যেন ড্রেসিং রুমে ফেরার তাগাদা ছিল! অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, সাকিব এক প্রান্ত ধরে না রাখলে হারতে হতো। বাংলাদেশ অধিনায়কের ৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংসটি মূলত জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’।

৮ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো দুর্দান্ত ইনিংসটি দিয়ে সাকিব দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের যেন দেখিয়ে দিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ের মেজাজটা ঠিক কেমন হওয়া উচিত। এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে বাকিদের ৩০-৪০ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার। আর বাকি ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হওয়ায় সাকিব এ ইনিংসটি কিন্তু খেলেছেন ভীষণ চাপের মধ্যে। এই জয়ে তাঁর ইনিংসটি কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে প্রমাণ দেবে পরিসংখ্যান—আফগানিস্তানের ১৩৮ রান তাড়া করতে নেমে ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ সাকিবের ইনিংসটি বাদ দিলে আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত সংগ্রহ মাত্র ৬৩! ১ চার ও ১ ছক্কা। সাকিব ‘বাংলাদেশের জান’ তকমা তো আর এমনি এমনি দেননি সমর্থকেরা।

কাল সে কথা আবারও প্রমাণের পথে নিজের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালকও যোগ করেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ব্যক্তিগত ৬০ রানে থাকতে তামিম ইকবালকে টপকে যান সাকিব। ৭১ ম্যাচে ১৫৫৬ রান নিয়ে এত দিন শীর্ষে ছিলেন তামিম। কালকের ইনিংসটি দিয়ে জাতীয় দলের সতীর্থকে পেছনে ফেললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৭৬ ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ ১৫৬৭ রান।

বল হাতেও কাল একটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব। আফগানিস্তানের ইনিংসে ১৩তম ওভারে তুলে নেন মোহাম্মদ নবীকে। আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ঘরোয়া মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এটি ছিল তাঁর ৩৫০তম উইকেট। এ সংস্করণে ক্যারিয়ারের ৩০২তম ম্যাচে এসে চতুর্থ বোলার হিসেবে মাইলফলকটির দেখা পেলেন তিনি। সুনীল নারাইন (৩৩৩ ম্যাচে ৩৭৬ উইকেট), লাসিথ মালিঙ্গা (২৮৬ ম্যাচে ৩৮৫ উইকেট) ও ডোয়াইন ব্রাভো (৪৫০ ম্যাচে ৪৯০ উইকেট) এ তালিকায় সাকিবের চেয়ে এগিয়ে।

তবে টি-টোয়েন্টিতে ন্যূনতম ৩৫০ উইকেট ও ৪০০০ রান বিবেচনা করলে শুধু ব্রাভোই সাকিবের চেয়ে এগিয়ে। ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডারের রান ৬২৮৯। সাকিব আর ১৪১ রান করলে ছোঁবেন ৫ হাজার রানের মাইলফলক। মালিঙ্গা যেহেতু নির্ভেজাল পেসার, তাই ব্যাটিংয়ের তুলনাটা তাঁর সঙ্গে খাটে না। নারাইন এ সংস্করণে ওপেন করা শুরু করেছেন বেশ কবছর হয়ে গেছে। ৩৩৩ ম্যাচ খেলে ২১৯৭ রান করেছেন এ ক্যারিবিয়ান।