টানা ৬ ম্যাচে অদম্য লিভারপুল

গতকাল চেলসিকে তাদের মাঠেই হারিয়েছে লিভারপুল। ছবি : এএফপি
গতকাল চেলসিকে তাদের মাঠেই হারিয়েছে লিভারপুল। ছবি : এএফপি
>ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে টানা ছয় ম্যাচে জিতে রীতিমতো আকাশে উড়ছে লিভারপুল। গতকাল চেলসিকে তাদের মাঠেই হারিয়েছে তারা।

‘এবার তো অন্তত আমাদের হাত থেকে লিগ শিরোপা কেড়ে নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ো না!’
ম্যাচশেষে লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার দিকে চেয়ে কথাগুলো বলেছিলেন কী না কে জানে!
বলবেন না-ই বা কেন? বছরের শুরুতে সিটির কাছে হারের পর লিগে আর হারেনি লিভারপুল। গতবার একটা হারই যথেষ্ট ছিল লিগ শিরোপা না জেতার জন্য। এক পয়েন্টের ব্যবধানে লিগ শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। পরে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর উয়েফা সুপার কাপ জিতে ট্রফি খরা ঘোচালেও লিগ জয়ের আক্ষেপটা রয়েই গেছে লিভারপুলের।

এত কাছে গিয়ে শিরোপা হারানোর বেদনায় পুড়ে যেন আরও খাঁটি হয়েছে দলটা। গতবার যে ফর্মে থেকে লিগ শেষ করেছিল, এবার একই ফর্মে থেকে লিগ শুরু করেছে তারা। গত রাতে চেলসিকে স্টামফোর্ড ব্রিজে ২-১ গোলে হারিয়েছে অল রেড রা। গোল করেছেন ইংলিশ রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড ও রবার্তো ফিরমিনো। গতবারও এমন গতিতেই লিগ শুরু করেছিল তারা। ইংলিশ লিগের ইতিহাসে পর পর দুই মৌসুম প্রথম ছয়টা ম্যাচ টানা জেতার কীর্তি নেই আর কারওরই! কিন্তু লিগ শিরোপা জয়ে ২৯ বছরের হাহাকারটা তাদের রয়েই গেছে।

গতকাল প্রথম থেকেই দুর্দান্ত খেলছিল লিভারপুল। আন্তোনিও রুডিগার, রুবেন লফটাস-চিক আর ক্যালাম হাডসন-ওডোইয়ের মতো চেলসির কিছু খেলোয়াড়ের চোটে পড়াটা শাপে বর হয়েছিল তাদের জন্য। ম্যাচের চৌদ্দ মিনিটে ঠিক ডিবক্সের বাইরে লিভারপুলের সেনেগালের উইঙ্গার সাদিও মানেকে ফাউল করেন চেলসির ড্যানিশ সেন্টারব্যাক আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টিয়ানসেন। সে ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি কিকে দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন লিভারপুলের ইংলিশ রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড। স্টিভেন জেরার্ড অবসর নেওয়ার পর লিভারপুলের সমর্থকেরা বহুদিন ধরে ফ্রি-কিক থেকে গোল দেখতে পান না, আলেক্সান্ডার-আরনল্ডের ক্রমাগত উত্থান সে অভাবটা ঘুচিয়ে দেবে বলেই মনে হচ্ছে। আধুনিক ফুটবলে ফুলব্যাকদের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী, আরনল্ডের পর সে কথাটা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন লিভারপুলের আরেক প্রান্তের ফুলব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসন। রবার্টসনের মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ৩০ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান লিভারপুলের স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় দুই দল।

দ্বিতীয়ার্ধে চেলসি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠলেও তা নিজেদের মাটিতে অন্তত এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। মাত্র চার দিন আগে নাপোলি থেকে খেলে আসার জের ধরেই কি না, দ্বিতীয়ার্ধে একদম গা ছেড়ে খেলেছে লিভারপুল। সত্তর মিনিটের দিকে চোটের কারণে মাঠ ছেড়েছেন সাদিও মানে। আর সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে চেলসি। ৭০ মিনিটে এনগোলো কান্তের গোল তাঁর প্রমাণ। যদিও এর পর গোলরক্ষক আদ্রিয়ান আর দুই ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক আর জল মাতিপের বীরত্বে আর কোনো গোল হজম করা লাগেনি তাদের। মাত্র কিছুদিন আগেই ফ্রি ট্রান্সফারে দলে এসেছেন, এক মাস আগেও খেলার জন্য দল পাচ্ছিলেন না, লিভারপুলের মূল গোলরক্ষক অ্যালিসনের চোটের কারণেই খেলছেন একের পর এক ম্যাচ, আদ্রিয়ানের খেলা দেখে কে বলবে সেসব? ফলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেয়েই লন্ডন থেকে ফিরেছে লিভারপুল।

এই জয়ের মাধ্যমে লিগে টানা পনেরোটি জয় হয়ে গেল তাদের। প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে টানা সাত ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটাও কালকেই হলো তাদের। লিগে ছয় ম্যাচ হতে না হতেই পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে শীর্ষে তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৬ ম্যাচে ১৩। শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে লিভারপুলের। এখন শেষটা গতবারের মতো না হলেই কিন্তু হয়ে যায়!