দেশের মাটিতে শিরোপাখরা ঘুচবে আজ?

ওই দেখা যায় শিরোপা—সতীর্থদের কি এ কথাই বলছেন মুশফিক? ছবি: প্রথম আলো
ওই দেখা যায় শিরোপা—সতীর্থদের কি এ কথাই বলছেন মুশফিক? ছবি: প্রথম আলো

অপেক্ষার হিসাব কষলে এক দশক। ঢাকা থেকে কলম্বো আর দুবাই ঘুরে সাফল্য মিলেছে এ বছর ডাবলিনে। বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। কোনো টুর্নামেন্টে সেটাই বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য। শেষ নয় অবশ্যই। দ্বিতীয় শিরোপাটির দেখা মিলতে পারে আজই—আর সেটি হবে আবার দেশের মাটিতে প্রথম!

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। গত বিশ্বকাপ কিংবা তারপর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখলে প্রতিপক্ষ মোটেও সহজ না। কিন্তু আগের সাতটি ফাইনালের প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আফগানিস্তান তুলনামূলক সহজই। মাঠের লড়াইয়ে সহজ প্রতিপক্ষ বলে কিছু না থাকলেও কথাটা বলতেই হচ্ছে। আগের সাত ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দেখুন—ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তাহলে তো আশা করাই যায়। যদিও ডাবলিন বাদে টুর্নামেন্ট ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য সব সময়ই স্বপ্নভঙ্গের গল্প। আগের সাত ফাইনালের মধ্যে পাঁচটি ছিল ওয়ানডে সংস্করণে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাকি দুটি ফাইনাল।

টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান কঠিন প্রতিপক্ষ। আর দেশের মাটিতে খেলা ফাইনালেও বরাবরই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের। ২০০৯ থেকে গত বছর পর্যন্ত দুই সংস্করণ মিলিয়ে দেশের মাটিতে এ পর্যন্ত চারটি ফাইনাল খেলে হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০১৬ এশিয়া কাপ ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এ সংস্করণে সেটি বাংলাদেশের প্রথম টুর্নামেন্ট ফাইনাল।আর ত্রিদেশীয় সিরিজ বিবেচনায় নিলে গত বছর কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফি এ সংস্করণে বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল। তবে মর্যাদা বিচার করলে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাই এগিয়ে থাকবে।

ওয়ানডে, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও ওয়ানডে। ধরতে পেরেছেন? এ হলো বাংলাদেশের আগের সাতটি ফাইনালের ধরন। ২০০৯ সালে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ছিল ওয়ানডে সংস্করণের। এরপর ২০১২ এশিয়া কাপও ছিল ৫০ ওভারের খেলা। চার বছর পর এশিয়া কাপে প্রথম দেখা মিলেছে কুড়ি-কুড়ির ফাইনালের। ২০১৮তে ঢাকায় আবার ৫০ ওভারে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ।

এরপর গত দেড় বছরের ব্যবধানে তিনটি ফাইনাল খেলেছে দলটি। তিনটি ফাইনালই বিদেশের মাটিতে—২০১৮ সালের মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফি (টি-টোয়েন্টি), সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে এশিয়া কাপ এবং এ বছর ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল। ওয়ানডেতে পঞ্চম ফাইনালে এসে সাফল্যের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে কি তৃতীয়বারে এসে শিরোপার দেখা মিলবে? দানে দান তিন দান—লোকে কিন্তু তা–ই বলে!

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে জিততে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৫৩ রান তাড়া করতে নেমে ১১৪ রানে ৮ উইকেট পড়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার। সে ম্যাচে মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ক্রিকেট–বিশ্ব নতুন করে চিনেছিল ব্যাটসম্যান হিসেবে!

২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল আরও বেশি কষ্টের। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের প্রায় সব ক্রিকেটপ্রেমীরই হয়তো মনে হয়েছে, (শিরোপা) এত কাছে তবু কত দূরে! পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে ৯ রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ। হারতে হয়েছিল ২ রানের ব্যবধানে। ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালেও ভারতের সঙ্গে টক্কর দিয়ে বাংলাদেশ পারেনি শেষের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে। শেষ ১২ বলে ১৯ রানের সমীকরণে থাকতে ধোনির অবিশ্বাস্য ফিনিশিং ক্ষমতার কাছে হার মেনেছিল বাংলাদেশ।

২০১৮ ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে বাংলাদেশ তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি। তবে ওই বছর নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে আবারও শেষ ওভারে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। শেষ ওভারে ১২ রান তুলে নিয়েছিল ভারত। সবশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালেও সেই ভারতই শেষ ওভারে ৬ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ডাবলিনের বিজয়গাথার গল্প সবারই জানা।