ফারাজ গোল্ডকাপ থেকে জাতীয় দলের স্বপ্ন ইনতিশারের

ইনতিশারের স্বপ্ন জাতীয় দলের খেলা। ছবি: প্রথম আলো
ইনতিশারের স্বপ্ন জাতীয় দলের খেলা। ছবি: প্রথম আলো
>২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার নির্মম শিকার ফারাজ আইয়াজ হোসেন। এ তরুণ সেদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বন্ধুত্ব আর মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছিলেন। মৃত্যুঞ্জয়ী ফারাজের স্মরণে ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে আয়োজিত হচ্ছে ফারাজ স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। সোনালী অতীত ক্লাবের আয়োজনে এ প্রতিযোগিতার এবারের সংস্করণ মাঠে গড়িয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর। এখানেই খেলছেন স্কটল্যান্ডের এডিনবরা এফসির সাবেক ফুটবলার ইনতিশার মোস্তফা চৌধুরী। তাঁর চোখে এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন

ম্যাচটা সবে শেষ হয়েছে। ফারাজ স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবলে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি (আইইউবি) ও শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির মধ্যকার খেলা। আইইউবি জিতেছে ২-০ গোলে। দুটি গোলই এসেছে ইনতিশার মোস্তফা চৌধুরীর পা থেকে। সতীর্থেরা সবাই একে একে এসে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন তাঁকে। দুর্দান্ত ফুটবলার এই ইনতিশার। আগের ম্যাচে নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে আইইউবির ৩-০ গোলের জয়ে তাঁর ছিল জোড়া গোল। আইইউবি তাঁর নজরকাড়া নৈপুণ্যেই নিশ্চিত করেছে কোয়ার্টার ফাইনাল। দলের মধ্যমণি তো তিনি হবেনই।

এই ইনতিশার চার বছর আগে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন স্কটল্যান্ড। ফুটবলের চরম নেশা ছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই স্কটিশ ফুটবলের চতুর্থ ডিভিশনের দল এডিনবরা এফসিতে ট্রায়াল দিয়ে টিকে গিয়েছিলেন। কোচের দারুণ পছন্দ হয়েছিল তাঁকে। এরপরের দুই বছর ইনতিশারের জন্য পুরোটাই ফুটবলময়। চুটিয়ে খেলেছেন এডিনবরা এফসিতে।

তিনি কেবল ফুটবলই খেলেন না। বলতে গেলে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার। খেলেন বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিসও। বাস্কেটবলে তো বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে গত বছর খেলতে গিয়েছিলেন জাকার্তা এশিয়ান গেমসে। গত দুই বছর ধরে টেবিল টেনিসের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেন। আগামী এসএ গেমসে বাস্কেটবল দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন আবার। কিন্তু বিকেএসপিতে চলমান আবাসিক ক্যাম্পে তিনি থাকতে পারছেন না পড়াশোনার চাপে।

ফারাজ গোল্ডকাপে এরই মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছেন এডিনবরা এফসির সাবেক ফুটবলার ইনতিশার (৭ নম্বর জার্সি)। ছবি: প্রথম আলো
ফারাজ গোল্ডকাপে এরই মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছেন এডিনবরা এফসির সাবেক ফুটবলার ইনতিশার (৭ নম্বর জার্সি)। ছবি: প্রথম আলো

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে ইনতিশার ভর্তি হয়েছেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগে। চট্টগ্রামের খুলশির বাসিন্দা ইনতিশার এখন মনোযোগী হতে চান ফুটবলেই। চট্টগ্রাম ক্লাবে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আশীষ ভদ্র তাঁর খেলা দেখে নাকি দারুণ উচ্ছ্বসিত। দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন ফুটবলে সিরিয়াস হতে। ইনতিশারও এখন বেদবাক্যই মনে করছেন আশীষ ভদ্রের পরামর্শকে, ‘আশীষ স্যার আমাকে অনেক টিপস দিয়েছেন। তার জন্যই ফুটবলে আসা।’

টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল নাকি ফুটবল? কোনটি বেশি ভালো লাগে? ইনতিশারের ভালো লাগা ফুটবলই। তবে আক্ষেপ আছে নিয়মিত অনুশীলন করতে না পারা নিয়ে, ‘ফুটবলটাই বেশি উপভোগ করি। যদিও পড়াশোনা এবং পরীক্ষার চাপে সেভাবে খেলা হয় না। ঢাকা শহরে মাঠ নেই। আমরা সেভাবে অনুশীলন করারই সুযোগ পাই না। মাঝে মাঝে শুধু করপোরেট ফুটবল খেলি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও মাঠ নেই। ঢাকায় অন্য কোথাও অনুশীলন করব সেই সুযোগও নেই।’

গত আসরে সেমিফাইনালে বাদ পড়েছিল আইইউবি । এবার দলকে ফাইনালে দেখতে চান এই স্ট্রাইকার, ‘আমার এবার লক্ষ্যই আছে ১০ গোল করার। প্রতিটি ম্যাচেই যেন ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি সেটাই আশা করি। দুই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি এজন্য আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। দলকে জেতাতে পারছি বলে অনেক ভালো লাগছে।’
ফারাজ গোল্ডকাপের মতো এমন টুর্নামেন্ট আরও চান ইনতিশার, ‘ফারাজ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় গোল্ডকাপের মতো এমন টুর্নামেন্ট আরও বেশি হলে ভালো হতো। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। আমরা এখানে খেলতে সারা বছর মুখিয়ে থাকি।’

ইনতিশার পারফরম্যান্স দিয়েই এখন তাঁর দলের মধ্যমণি। ছবি: প্রথম আলো
ইনতিশার পারফরম্যান্স দিয়েই এখন তাঁর দলের মধ্যমণি। ছবি: প্রথম আলো

ইনতিশারের বাবা কামাল মোস্তফা চৌধুরী স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ইনতিশার। বাবা-মা চট্টগ্রামে থাকলেও ঢাকার বসুন্ধরায় বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছেন ইনতিশার। বাবার সমর্থন পেয়েই ফুটবল খেলে যাচ্ছেন, ‘আমি ফুটবলটা উপভোগ করি। যখন দেখি ছোট বেলার বন্ধুরা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে তখন খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আমি এসব করছি না দেখে বাবা খুব খুশি হন। আমার ওপর আস্থা রাখেন।’

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার ইনতিশার বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে চান। স্বপ্নটা মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন, ‘২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-২১ দলে ডাক পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন এডিনবরা চলে গিয়েছিলাম বলে খেলতে পারিনি। কিন্তু এবার সুযোগ পেলে জাতীয় দলে খেলতে চাই।’