ভাই তুমি, শত্রুও তুমি...

ইংল্যান্ডের তিন ক্রিকেটার ভাই—স্যাম, টম ও বেন কুরান। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের তিন ক্রিকেটার ভাই—স্যাম, টম ও বেন কুরান। ছবি: এএফপি

ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে টম কুরানের দল সারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার নর্দাম্পটনশায়ার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ডিভিশন ওয়ানে উঠে আসার পর কুরানের খুশি দেখে কে! ইংল্যান্ডের এ বোলিং অলরাউন্ডার সেদিন টুইট করেন, ‘উঠে আসার জন্য নর্দাম্পটনশায়ার ও বেন কুরানকে অভিনন্দন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ম্যাচে কখনো তিন ভাই খেলেছে? আমার আর তর সইছে না!’

কাউন্টি ক্রিকেটের ন্যূনতম খোঁজখবর রাখা ক্রিকেটপ্রেমীরও ব্যাপারটি বুঝে ফেলার কথা। কুরানরা তিন ভাই—টম, বেন ও স্যাম। এর মধ্যে বড় ভাই টম ও ছোট ভাই স্যাম ডিভিশন ওয়ানের দল সারের ক্রিকেটার। খেলেছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলেও। তাঁদের মেজ ভাই বেন এখনো জাতীয় দলে ডাক না পেলেও নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে প্রায় নিয়মিত মুখ। বেনের দল ডিভিশন ওয়ানে উঠে আসায়, সামনের মৌসুমে একসঙ্গে তিন ভাই খেলার সুযোগ পাচ্ছেন প্রথম শ্রেণির এ টুর্নামেন্টে। এ আনন্দের আতিশায্যেই টুইটারে প্রশ্নটি করেছিলেন টম।

জবাব খুঁজে বের করেছে ক্রিকইনফোর ‘আস্ক স্টিভেন’। আর তা জানলে টমকে হয়তো হতাশই হতে হবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ম্যাচে একসঙ্গে তিন ভাইয়ের খেলার নজির একেবারে কম নেই। এমনকি তিনজনের বেশি ভাইদের খেলার নজিরও আছে! তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ভাইদের একই দলে খেলতে দেখা গেছে। শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই এমন ঘটনা দেখা গেছে তিনবার।

টম কুরানের সেই টুইট। ছবি: টুইটার
টম কুরানের সেই টুইট। ছবি: টুইটার

ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত দাড়িওয়ালা লোকটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস বা ডব্লিউ জি গ্রেস। ১৮৮০ সালে ওভাল টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একসঙ্গে তিন ভাই খেলেছিলেন ইংল্যান্ড দলে। ডব্লিউ জি গ্রেসের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন এডওয়ার্ড গ্রেস। সাতে নেমেছিলেন ফ্রেড গ্রেস। আসলে গ্রেস পরিবারে ভাই-ভাতিজা মিলিয়ে আট থেকে নয়জন ক্রিকেটার ছিলেন।

ওভাল সেই টেস্টের এক যুগ পর আরও অবাক করা ঘটনা ঘটল কেপটাউন টেস্টে। ১৮৯২ সালের সে ম্যাচে অ্যালেক হেয়ার্ন ও জর্জ হেয়ার্ন খেলেছিলেন ইংল্যান্ড দলের হয়ে। আর তাঁদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছিলেন তাঁদের-ই ভাই ফ্রাঙ্ক হেয়ার্ন। তাঁদের এক কাজিনও খেলেছিলেন সে ম্যাচে। ৭৭ বছর পর করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে পাকিস্তান দলের হয়ে খেলেন তিন ভাই হানিফ মোহাম্মদ, মুশতাক মোহাম্মদ ও সাদিক মোহাম্মদ। পাকিস্তানের বিখ্যাত এ ক্রিকেট-পরিবার থেকে উঠে এসেছেন ছয়জন ক্রিকেটার।

কুরান ভাইয়েরা অবশ্য ৮৬ বছর আগের বিদঘুটে এক স্কোরকার্ড ফিরিয়ে আনার সুযোগ পাচ্ছেন। ১৯৩৩ সালে লর্ডসে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সমারসেটের মুখোমুখি হয়েছিল মিডলসেক্স। সে ম্যাচে সমারসেটের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন দুই ভাই জ্যাক লি ও ফ্রাঙ্ক লি। তাঁদের আরেক ভাই হ্যারি লি খেলেছিলেন মিডলসেক্সের হয়ে। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৮২ রানে আউট হন হ্যারি লি—জ্যাক লি-র বলে আর ক্যাচ নিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক লি। স্কোরকার্ডে লেখা হয়—এইচডব্লিউ লি ক এফএস লি ব জ্যাক লি। এ নিয়ে পরে হ্যারি দুঃখ করে লিখেছিলেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এর আগে কখনো কোনো ভ্রাতৃদ্বয় এতটা অভ্রাতৃত্বপূর্ণ আচরণ করেছে বলে বিশ্বাস হয় না।’

কুরানদের সামনেও হয়তো এমন কিছু আছে, কে জানে!