সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল লিভারপুল

অ্যানফিল্ডে আরেকটু হলে অঘটনের শিকার হতে যাচ্ছিল লিভারপুল। ছবি : এএফপি
অ্যানফিল্ডে আরেকটু হলে অঘটনের শিকার হতে যাচ্ছিল লিভারপুল। ছবি : এএফপি

লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ প্রার্থনা করতে পারেন—এমন রাত যেন আর না আসে। ফুটবলপ্রেমীরা কিন্তু তার উল্টোটা চাইবেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই দম আটকানো উত্তেজনা, ম্যাচের পরতে পরতে নাটকীয় সব মোচড়। এমন রাত-ই তো চাই!

কথা হচ্ছে কাল অ্যানফিল্ডের রাত নিয়ে। লিভারপুল সমর্থকদের জন্য কী এক রাত-ই না গেল! বড় ব্যবধানে জয়ের সুবাস নিতে নিতে সমতায় ফিরতে বাধ্য হওয়া। এরপর মোহাম্মদ সালাহ স্বাগতিকদের এগিয়ে দেওয়ার পর গ্যারি লিনেকারের টুইট, ‘অ্যানফিল্ডে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে কারণ ব্যবধান ৪-৩ করল সালাহ।’ তার আগেই অবশ্য গ্যালারিতে লিভারপুলের অনেক সমর্থকের হতাশায় মাথার চুল ছেঁড়ার দশা!

আর হবে না-ই বা কেন? খেলা হচ্ছে লিভারপুলের মাঠ, প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়ার রেড বুল সালজবুর্গের মতো ক্লাব, এই অবস্থায় লিভারপুল সালজবুর্গের ওপর গোটা ম্যাচে ছড়ি ঘোরাবে, সেটাই কাম্য। ম্যাচের ৩৬ মিনিট পর্যন্ত সেই চিত্রনাট্য মেনেই চলল ম্যাচটা। নয় মিনিটে রবার্তো ফিরমিনোর সঙ্গে সুচতুর ওয়ান-টু করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া সাদিও মানে ম্যাচের প্রথম গোল করলেন। ২৫ মিনিটে লিভারপুলের দুই ফুলব্যাক প্রমাণ করলেন কেন তাদের ইউরোপসেরা বলা হয়, রাইটব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আরনল্ডের মাপা ক্রসে গোল করলেন অ্যান্ডি রবার্টসন। ৩৬ মিনিটে আবারও সহকারীর ভূমিকায় রবার্তো ফিরমিনো, এবার গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ। ৩৬ মিনিটেই ৩-০ গোলে এগিয়ে লিভারপুল। লিভারপুল সমর্থকেরা তখন ভাবা শুরু করে দিয়েছেন, মাত্রই আগের দিন সাত গোল করা বায়ার্নের মতো প্রতিপক্ষকে সাত গোল দেওয়া যায় কি না। আর ওদিকে সালজবুর্গের সমর্থকেরা একটা বড়সড় হারের প্রমাদ গুনছেন ততক্ষণে।

কিন্তু এরপরই শুরু হল আসল উত্তেজনা। ৩৬ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল দিয়ে ফেলার কারণেই কী না, একটু গা-ছাড়া ভাবে খেলতে শুরু করলেন লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা। সেটার মাশুলও দিলেন সঙ্গে সঙ্গে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্ট্রাইকার হি চান হুয়াং গোল করে ব্যবধান কমালেন। ৩-১ স্কোরলাইনে প্রথমার্ধ শেষ হল।

'লিভারপুলকে তার মানে অ্যানফিল্ডে গোলও দেওয়া যায়! কিছুদিন আগে বার্সেলোনা যা করতে পারেনি, সেটাই করে দেখালাম আমরা,' - বিরতিতে সালজবুর্গের কোচ ও খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে এমন ভাব বিনিময় করেছেন কি না, জানা যায়নি। তবে ওই গোল যে দলটার খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা নিশ্চিত।

দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের ওপর জেঁকে বসল যেন সালজবুর্গ। বর্তমান সময়ে প্রেসিং ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন লিভারপুলের বিরুদ্ধে তাদের ওষুধই প্রয়োগ করল সালজবুর্গ। আর তাতে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করলেন জাপানি স্ট্রাইকার তাকুমি মিনামিনো ও নরওয়ের আর্লিং ব্রট হ্যালান্ড। অসুস্থতার কারণে মূল একাদশে এ দিন খেলতে নামেননি গত ম্যাচেই প্রথমার্ধে হ্যাটট্রিক করে সাড়া ফেলে দেওয়া এই টিনএজ স্ট্রাইকার। কিন্তু দল যেখানে শিকারের গন্ধ পেয়ে গেছে, সেখানে দলের সবচেয়ে বড় তারকা কীভাবে বেঞ্চে বসে থাকতে পারেন? সেটা হয়ওনি। দলের মূল তারকাকে দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিটের মাথাতেই মাঠে নামালেন সালজবুর্গ কোচ। নতুন উদ্যমে লিভারপুলের ওপর আক্রমণ করা শুরু করল সালজবুর্গ। ফলও পেল হাতেনাতে। ৫৬ মিনিটে গোল করলেন মিনামিনো। তার চার মিনিট পরেই দলকে সমতায় ফেরালেন হালান্ড, সহকারীর ভূমিকায় মিনামিনো।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসার জন্য প্রসিদ্ধ লিভারপুল তখন নিজেরাই অঘটনের শিকার হওয়ার ভয়ে তটস্থ। মুহুর্মুহু আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখলেন হালান্ড-মিনামিনোরা। কিন্তু ম্যাচের ৬৯ মিনিটে গোল করে আবারও দলকে এগিয়ে দিলেন মোহাম্মদ সালাহ।

এমন কোনো লিভারপুল সমর্থক পাওয়া যাবে না, ম্যাচের বাকি সময়ে যাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়নি। যা হোক, শেষমেশ অঘটন ঘটেনি। ৪-৩ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে লিভারপুল।

তবে ম্যাচ হারলেও, সালজবুর্গ প্রমাণ করে দিয়েছে, চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো আসরে আজকাল আসলে ছোট বলে কোনো দল নেই। সবাই-ই চ্যাম্পিয়ন।