জিতল বাংলাদেশ, তৃপ্তি মিলল না

ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের জোড়া গোলেই জয় মিলেছে বাংলাদেশের। ছবি: শামসুল হক
ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের জোড়া গোলেই জয় মিলেছে বাংলাদেশের। ছবি: শামসুল হক
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আজকের ম্যাচে মোট সাতজন খেলোয়াড় বদলে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের জন্য বেশ কয়েকজনকে পরখ করে দেখলেন কোচ জেমি ডে।


‘যদি শুকনো মাঠ পাই তাহলে ভালো খেলবে আমার দল’ ...

বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আবহাওয়াকে লক্ষ্য করে এমন একটি ‘যদি’ ট্যাগ করে দিয়েছিলেন ভুটান কোচ পেমা। ফুটবলের সঙ্গে আবহাওয়ার সখ্য বা শত্রুতা তেমন আছে বলে জানা নেই। কিন্তু কর্দমাক্ত মাঠ হলে অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলে অভ্যস্ত অতিথি দলটির বড় বিপাকে পড়ে যায়। ভুটানি কোচ আজ নিরাশ হননি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ ভালো ফুটবলের উপযোগী হওয়ায় ভুটানিরা খেলেছেও ভালো। তবে শেষ হাসি বাংলাদেশের, ২-০ গোলে জিতে।

২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুটানকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। চার দিন পরেই স্কোরলাইনটা ২-০। তার পরেও এটিকে আয়েশি জয়ই বলা যায়। কিন্তু সুন্দর ও গোছানো ফুটবল ফুটবল বলে যে একটা কথা আছে, তা দেখাতে ব্যর্থ জামাল ভূঁইয়ারা। রহমত মিয়া- রায়হান হাসানদের মিস পাস, বিপলু আহমেদের লক্ষ্যহীন ক্রসগুলো চোখে লেগেছে তবে ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হয়েছিলেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান। জোড়া গোল করে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন এই সেণ্টারব্যাক।

প্রথম ম্যাচের দলে তিনটি বদল করে আজ একাদশ সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ। শুরুতে বাংলাদেশের ওপরে কিছুটা চড়ে বসেছিল ভুটান। তাদের ‘পাস এন্ড মুভ’ এ ঝাঁকুনি খেতে দেখা গিয়েছে ইয়াসিন - রিয়াদুল- রহমত ও সুশান্তদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগকে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে চোট নিয়ে শুরুতেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় রাইটব্যাক সুশান্তকে। তাঁর জায়গায় বদলি হিসেবে পাঠানো হয় রায়হান হাসানকে। অনেক দিন পর জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামা রায়হানকে খেলার মতো ফিট মনে হয়নি। বল ধরে উড়িয়ে মারতে পারলেই যেন কাজ শেষ। তবে লম্বা থ্রোয়ের কারিশমাটা ঠিকই কাজে লাগিয়েছেন আবাহনীর এই রাইটব্যাক।

তাঁর লম্বা থ্রো-ইন থেকেই ইয়াসিনের প্রথম গোল। ভুটানের গোলমুখে আনমার্কড থাকা অবস্থায় হেডে বল জালে জড়াতে কোনো ভুলই করেননি ইয়াসিন। গ্যালারিতে বসা প্রায় হাজার চারেক দর্শকও পেয়ে গেলেন উচ্ছ্বাস প্রকাশের সুযোগ। ডিফেন্ডার হয়ে ইয়াসিন গোল করে দিল , আগের ম্যাচের জোড়া গোল করা নাবীব নেওয়াজ জীবন কোথায় ? ৩২ মিনিটে একটি ফ্লাইং হেড করেছিলেন নাবীব। বাম প্রান্তে রবিউলের ক্রস থেকে তাঁর হেড চলে গেল সাইবার ঘেঁষে বাইরে।

হেড থেকেই এসেছে ইয়াসিনের দুটি গোল। ছবি: শামসুল হক
হেড থেকেই এসেছে ইয়াসিনের দুটি গোল। ছবি: শামসুল হক

প্রথমার্ধে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও দর্শকদের চোখে মুখে তৃপ্তির আভা ছিল না। সেটা কিছুটা দূর হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। সাদ উদ্দিনের জায়গায় মাহবুবুর রহমান সুফিল, রবিউলের জায়গায় ইব্রাহিম, জীবনের জায়গায় আরিফ— আক্রমণভাগে তিনটি বদলিতেই ক্ষুরধার হয়ে উঠল বাংলাদেশের আক্রমণভাগ। সুফিল তো মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে গোল করার সুযোগই তৈরি করেছিলেন। কিন্তু গোলমুখে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। আরেক বদলি আরিফ গোল করালেন ইয়াসিনকে দিয়ে। ৬০ মিনিটে এই উইঙ্গারের ক্রসেই হেড করে ব্যক্তিগত ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলটি করেছেন ইয়াসিন।

ভুটানের বিপক্ষে শেষ হলো দুটি প্রীতি ম্যাচ। যার গায়ে অদৃশ্য অক্ষরে বাংলাদেশ কোচ লিখে দিয়েছিলেন তাঁর প্রত্যাশা—র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ও বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের জন্য বাড়তি আত্মবিশ্বাস। দুই ম্যাচে জয় পাওয়ায় দুইটি ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে জেমির। এই জয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্ট তো বাড়বেই , সঙ্গে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার বাড়তি আত্মবিশ্বাস মিলবে। তবে জেমির জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির খবর প্রতিপক্ষের জালে বাংলাদেশের ৬ গোল। একটা গোলের জন্য যেভাবে প্রতিপক্ষ পোস্টের সামনে মাথা কুড়ে মরতে হয় বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডের। অন্তত এখন থেকে গোল করার অভ্যাসটা থাকবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের।