আমি হারিয়ে যাইনি, বলছেন নাসির

বাংলাদেশ দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নাসিরের। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নাসিরের। ছবি: প্রথম আলো

নাসির হোসেন এখন কোথায়? উত্তরটা যেন তৈরিই ছিল তাঁর কাছে, ‘মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে!’ সামনে জাতীয় লিগ। প্রতিদিন মিরপুরে আসছেন। ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন, অনুশীলন করছেন। মিরপুরে তো থাকবেনই।

কিন্তু ক্যানভাসটা যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হয়, সেখানে নাসির অদৃশ্য প্রায় দুই বছর। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছর ধারাবাহিক বাংলাদেশ দলে খেলেছেন। পরের চার বছর থাকলেন যাওয়া-আসার মধ্যে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দেশের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার পর থেকে সেই ‘যাওয়া-আসাটা’ও নেই! প্রায় দুই বছর তিনি বাংলাদেশ দলের বাইরে। লম্বা বিরতির মাঝে কত যে ঘটনা তাঁকে নিয়ে। গত বছরের এপ্রিলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে হাঁটুতে পেলেন গুরুতর চোট। হাঁটুর সেই চোটে পড়ে প্রায় সাত মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। মাঠের বাইরেও কি নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে পেরেছেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক ভিডিও বার্তা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এক উঠতি মডেল। চোট-বিতর্ক সব পেছনে ফেলে ফিরলেন জানুয়ারিতে বিপিএল দিয়ে।

বিপিএলে ফেরাটাও হয়নি মনে রাখার মতো। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ৩ ম্যাচ। দিনের পরদিন সাইড বেঞ্চে বসে থাকাই শুধু নয়, হয়েছে আরও একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা। সিলেট দলের তারকা ক্রিকেটার হওয়ার পরও টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে সিলেটেই নেয়নি। সময়টা ভালো যাচ্ছে না বলে নাসিরের এটি নীরবে হজম করা ছাড়া করার কিছুই ছিল না। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন, তবে ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়াতে পারেননি । শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে ১৬ ম্যাচে করেছেন ৪৪০ রান ও ১০ উইকেট।

গত এপ্রিলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর আবারও অদৃশ্য নাসির। সুযোগ পাননি বিসিবির কোনো দলে। স্বাভাবিকভাবেই টানা চার মাস খেলার বাইরে। নাসির অবশ্য বলছেন, আপাত অদৃশ্য হলেও তিনি হারাননি, ‘আমি হারাইনি, আছি। চেষ্টা করছি জাতীয় দলে আবার ফিরতে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর সেভাবে খেলা হয়নি যে সেখানে ভালো খেলে ফিরব। অনেক দিন খেলার বাইরে আছি। বাংলাদেশ “এ” দলেও ছিলাম না। সামনে জাতীয় লিগ আছে। চেষ্টা করব এখানে ভালো খেলে আবার ফিরতে।’

জাতীয় লিগে ফেরার আগে আরেকটা ধাক্কা খেয়েছেন। প্রথম দফায় ফিটনেসের পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। বিপ টেস্টে যেখানে পেতে হবে ন্যূনতম ১১, পেয়েছেন ৯.৭। কাল আবারও একই পরীক্ষা দিতে হবে তাঁকে। এবার তিনি আশাবাদী, পেরিয়ে যাবেন বাধাটা, ‘মাঝে লম্বা সময় খেলার বাইরে ছিলাম। এ কারণে ফিটনেসে একটু ঘাটতি আছে। এক-দুই সপ্তাহ এটা নিয়ে কাজ করলে আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।’

এটা না হয় উতরে গেলেন, কিন্তু জাতীয় দলে ফেরার চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিচ্ছেন? বাংলাদেশ দলে তাঁর যে ভূমিকা, অফ স্পিন আর লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটিং—এই ভূমিকায় এখন আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেনের মতো তরুণেরা। নিজের হারানো জায়গা ফিরে পাওয়াটা কঠিন মানছেন, তবে নাসির আত্মবিশ্বাসী, বাংলাদেশ দলে ফেরার সামর্থ্য তাঁর আছে, ‘সহজ কোনো কিছুই হয় না। এখনো আত্মবিশ্বাসী যে ভালো খেললে জাতীয় দলে ফিরব। এ চ্যালেঞ্জ থাকায় দলেরই ভালো হয়েছে। একই ভূমিকায় যত বেশি খেলোয়াড় থাকবে, ততই দল লাভবান হবে। আমাকে আগের চেয়েও বেশি কষ্ট করতে হবে। বিশ্বাস করি, ভালো খেললে ফিরতে পারব জাতীয় দল। বাংলাদেশ দলের দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত।’

আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেছেন আট বছর হয়ে গেছে। ‘তারকা ক্রিকেটার’ তকমা লেগে যাওয়ার পরও তাঁকে থাকতে হয় ফেরার লড়াইয়ে। এ পরিস্থিতিতে তাঁর পড়তেই হতো না যদি ক্যারিয়ারের শুরুতে যে ধারাবাহিক ছিলেন, সেটি ধরে রাখতে পারতেন। এটির জন্য তাঁর নিজেরও কি কম দায়? ২৭ বছর বয়সী স্পিন অলরাউন্ডার অবশ্য এ বিষয়ে একমত নন, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আমি এমনই। যখন ভালো খেলেছি, তখন এসব নিয়ে কথা হয়নি। খারাপ খেললে স্বাভাবিকভাবেই কথা হবে, এটাই আমাদের সংস্কৃতি। ভালো খেলতে পারলে এসব নিয়ে কথা হবে না।’

নিজেকে আবারও প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে নাসির পাচ্ছেন জাতীয় লিগ। আপাতত তাঁর লক্ষ্য এই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট রাঙানো।