বিবর্ণ সাকিব, এক ওভারে দিলেন ২৯

বল-ব্যাট দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিলেন সাকিব। ছবি : বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের টুইটার পেজ
বল-ব্যাট দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিলেন সাকিব। ছবি : বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের টুইটার পেজ

বল, ব্যাট - দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন, এমন দিন সাকিবের জন্য অসহনীয়ই!

কোনো ম্যাচে সব্যসাচীর মতো দুই ক্ষেত্রেই অসাধারণ খেলেছেন। কিংবা কোনো দিন বল হাতে ব্যর্থ হলেও সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে। এর উল্টোটাও হয়েছে অনেক। কিন্তু আজ ভোরে সিপিএলে বার্বাডোজের হয়ে যেন এক অচেনা সাকিবকেই দেখা গেল। যে সাকিব ব্যাটিং কিংবা বোলিং, দুই দিকেই ব্যর্থ। বল হাতে ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৬। এক ওভারে তো ২৯ রানই দিলেন; ব্যাটিং করতে নেমে ৯ বলে মাত্র ৫!

সাকিবের ব্যর্থ হওয়ার এই দিনে ব্যর্থ হয়েছে তাঁর দলও। গোটা টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের জয়রথ থামাতে পারেনি সাকিবের দল বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস। হেরে গেছে ৩০ রানে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে এই জয় পেয়ে সোজাসুজি ফাইনালে উঠে গিয়েছে শিমরন হেটমায়ার, শোয়েব মালিক, ব্র্যান্ডন কিং, নিকোলাস পুরানদের গায়ানা। ওদিকে ম্যাচটা এলিমিনেটর না হওয়ার সুবাদে ফাইনালে যাওয়ার আরেকটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে বার্বাডোজ। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে সাকিবের দল মুখোমুখি হবে এলিমিনেটর ম্যাচে সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসকে হারানো ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের। কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারাইনদের বিপক্ষে সে ম্যাচেও যদি বার্বাডোজ হেরে যায়, সাকিবের সিপিএল অভিযানের সমাপ্তি ঘটবে।

সাকিবদের বিপক্ষে ম্যাচটাকে জ্বলে ওঠার উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন গায়ানার ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। কিংয়ের তাণ্ডবে শুধু সাকিবই নন, পুড়েছেন বার্বাডোজের বাকি সব বোলার। টস জিতে ব্যাট করতে নামে গায়ানা। শুরুতে নেমে ১০ চারের সঙ্গে ১১টি বিশাল ছক্কার মারে ৭২ বলে ১৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন কিং। শুধু বাউন্ডারি থেকেই আসে ১০৬ রান। সঙ্গে শোয়েব মালিক (১৯ বলে ৩২) ও চন্দরপল হেমরাজের (২৩ বলে ২৭) দুটি ‘ক্যামিও’র সুবাদে গায়ানার সংগ্রহ গিয়ে পৌঁছায় ২১৮ রানে।

>

সাকিবের ওপর সিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস যে কতটা নির্ভরশীল, দেখা গেল আবারও। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে সাকিব ভালো খেলেছিলেন, তার সুফলও তুলে নিতে পেরেছিল বার্বাডোজ। কিন্তু নকআউট পর্বে এসে সেই পরিচিত সাকিবকে আর দেখা গেল না। ফলে তার মাশুল গুনতে হয়েছে দলটাকে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের কাছে ৩০ রানে হেরেছে সাকিবের দল।

বল হাতে শুরুটা ভালো করলেও শেষটা ভালো করতে পারেননি সাকিব। প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ওভারে ৬, পরের ওভারে ৭ রান। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে তৃতীয় ওভারে মাত্র ৪ রান দেন। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে এর পর। নিজের শেষ ওভারে সাকিবের ওপর ছোট খাট একটা ঝড় বইয়ে দেন কিং আর শোয়েব। দুজনই দুটি করে ছক্কা হাঁকান। সঙ্গে একটি চারও মারেন কিং। তাতে সে ওভারে খরচ ২৯ রান। স্বাভাবিকভাবেই, ইনিংসের সবচেয়ে খরচে ওভার ছিল এটা। ফলাফল, সাকিবের বোলিং পরিসংখ্যান— ৪-০-৪৬-০। বল হাতে এই পারফরম্যান্স ভুলেই যেতে চাইবেন সাকিব।

বল হাতের ব্যর্থতা ব্যাটিংয়ে নেমে ভুলিয়ে দিতে পারতেন সাকিব। জেতাতে পারতেন বার্বাডোজকে। কিন্তু সেটা হয়নি। উল্টো ব্যর্থতার পাল্লা আরও ভারী হয়েছে। ওপেনার জনসন চার্লস আউট হয়ে যাওয়ার পর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাকিব আসেন উইকেটে। টিকতে পেরেছেন অষ্টম ওভার পর্যন্ত। শোয়েব মালিককে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন লং অফে দাঁড়ানো হেটমায়ারের হাতে। মাঝের সময়টায় ৯ বল খেলে মাত্র ৫ রান করতে পারেন তিনি।

সাকিব না পারলেও বাকি ব্যাটসম্যানরা শেষ পর্যন্ত দলকে জেতানোর চেষ্টা করে গেছেন। জোনাথন কার্টার ২৬ বলে ৪৯ করেছেন, অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ১৫ বলে ২৯ করেছেন। ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলসও ১৯ বলে ৩৬ রানের ছোট খাট একটা ঝড় তুলে আশা জাগিয়েছিলেন বার্বাডোজ সমর্থকদের মনে। এত কিছু সত্ত্বেও নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮৮ রানের বেশি করতে পারেনি বার্বাডোজ। হেরে গেছে ৩০ রানে।