আর্জেন্টাইনদের জ্বলে ওঠার ম্যাচে জিতল জুভেন্টাস

প্রথম গোলের পর দিবালা-রোনালদোর উল্লাস। ছবি : এএফপি
প্রথম গোলের পর দিবালা-রোনালদোর উল্লাস। ছবি : এএফপি

ইন্টার মিলানে আন্তোনিও কন্তে আসার পর থেকে মনে হচ্ছে, ইতালিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ শিখর থেকে জুভেন্টাসকে টেনে নামাতে পারলে তিনিই পারবেন। জুভেন্টাসের সাবেক এই গুরুর কাছেই মিলবে জুভেন্টাস-বধের সবচেয়ে বড় মন্ত্র। গত রাতের আগে লিগে ছয় ম্যাচ খেলে ছয়টাতে জিতে ইন্টার সে দাবির সপক্ষে প্রমাণও দিচ্ছিল ফি-হপ্তা। কিন্তু ঠিক সময় মতো জুভেন্টাস জানিয়ে দিল, কন্তের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব সঁপে দিতে এখনই রাজি নয় তারা। ইন্টারের মাঠে তাঁদের ২-১ গোলে হারিয়ে লিগের শীর্ষে উঠে এসেছে জুভেন্টাস।

ম্যাচের তিনটি গোলই করেছেন আর্জেন্টিনার তারকারা। জুভেন্টাসের হয়ে গোল করেছেন পাওলো দিবালা আর গঞ্জালো হিগুয়েইন। ইন্টারের হয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন লওতারো মার্টিনেজ।

লিগের প্রথম ছয় ম্যাচের ছয়টাতেই জেতার কারণে ম্যাচে ফেবারিট ছিল ইন্টার। তাঁর ওপর নিজের ঘরে খেলা। জুভেন্টাসকে হারিয়ে লিগের শীর্ষস্থানে জেঁকে বসার ইচ্ছে ছিল কন্তের। সে লক্ষ্যে ইন্টারের সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিশালী দলটাই নামিয়েছিলেন তিনি। ওদিকে জুভেন্টাসের কোচ মরিজিও সারি কন্তের অপ্রতিরোধ্য ইন্টারকে থামানোর জন্য একটু কৌশল খাটান। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চির পরিচিত ৪-৩-৩ ছকে না খেলিয়ে জুভেন্টাসকে ৪-১-২-১-২ ছকে খেলাচ্ছেন তিনি। এই ম্যাচেও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আক্রমণভাগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে নিজের পছন্দের স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েইনকে না খেলিয়ে আরেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাওলো দিবালাকে নামান সারি। আর এই দুজনের পিছে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে ওয়েলশের অ্যারন র‍্যামসিকে না খেলিয়ে ফেদেরিকো বার্নার্দেস্কিকে মাঠে নামান সারি। ফলে যে জিনিসটা হলো, সারি আক্রমণভাগে এমন তিনজনকে রাখলেন, যারা শুধু প্রথাগত গোল করার কাজ না করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের খাটিয়ে মারার কাজটাও করতে পারে— ক্রমাগত নড়াচড়া, দৌড়াদৌড়ি ও রক্ষণভাগের মাঝে ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করার মাধ্যমে।

>

পাওলো দিবালা, লওতারো মার্টিনেজ, গঞ্জালো হিগুয়েইন - বর্তমান ও ভবিষ্যতের তিন আর্জেন্টাইন তারকার ওপর ভরসা রেখে গতকাল মাঠে নেমেছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাস। বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়েছেন তাঁদের সবাই। আর তাতে জয়ের হাসি হেসেছে রোনালদো-দিবালা-হিগুয়েইনদের জুভেন্টাস।

ওষুধের মতো কাজ করল সিদ্ধান্তটা। মিডফিল্ড থেকে বসনিয়ান মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচের কাছ থেকে আসা এক বল নিয়ে ম্যাচের চার মিনিটেই দলকে এগিয়ে দেন দিবালা। যে দিবালা আগের কয়েক ম্যাচে মূল একাদশেই সুযোগ পাননি!

১৮ মিনিটে এ মৌসুমেই জুভেন্টাসে আসা ডাচ ডিফেন্ডার ম্যাথিস ডে লিখটের ভুলের সুবাদে পেনাল্টি পায় ইন্টার। সে পেনাল্টি থেকে গোল করেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লওতারো মার্টিনেজ। বার্সেলোনার মতো ক্লাব কেন যে তাঁকে দলে নেওয়ার চেষ্টা করছে, প্রতি সপ্তাহেই দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

হয়তো সমতায়ও ফিরতে পারত ইন্টার, কিন্তু সেটা হয়নি দুর্ভাগ্যের কারণে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইন্টারের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে প্রমাণ করেছেন এই মৌসুমেই দলে আসা ইতালিয়ান তারকা স্টেফানো সেনসি। ম্যাচের ৩৪ মিনিটেই চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন এই তারকা। সেনসিকে পুরো ম্যাচ না পাওয়ার জন্যই মূলত ভুগেছে ইন্টার। ম্যাচের মধ্যে চোটে পড়েছেন দলটার সেরা ডিফেন্ডার ডিয়েগো গোডিনও। সব মিলিয়ে ভাগ্যকে দুষতেই পারেন কন্তে!

রোনালদো গোল না পেলেও খেলেছেন দুর্দান্ত। কপাল ভালো থাকলে প্রথমার্ধেই অন্তত দুটি গোল পেতে পারতেন এই তারকা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মারা তাঁর দুর্দান্ত এক শট লাগে ক্রসবারে। এর কিছুক্ষণ পর দিবালার সঙ্গে দুর্দান্ত রসায়নের ফসল হিসেবে একটা গোল যখন করলেন, দেখা গেল একটুর জন্য অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন দিবালা। ফলে সে গোলটাও হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে বার্নার্দেস্কির জায়গায় নেমেই গোল পেয়েছেন হিগুয়েইন। ইন্টারের বিপক্ষে গোল করাকে যিনি অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

পরে ইন্টার আর গোল করতে পারেনি। গোটা ম্যাচে জুভেন্টাসের ডি-বক্সে ইন্টার স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু বেশ কয়েকবার ভয়ংকরভাবে ঢুকে গেলেও লিওনার্দো বোনুচ্চির সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ানে পেরে ওঠেননি, বারবার বল হারিয়েছেন।

ম্যাচ জিতে লিগের শীর্ষে উঠে এসেছে জুভেন্টাস। ৭ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট তাদের। দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে ইন্টার। ৭ ম্যাচ খেলে ১৮ পয়েন্ট পেয়েছে তারা।