ইউনাইটেডকে আগেই সতর্ক করেছিলেন ফন গাল

সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছিলেন সুলশার? ছবি: এএফপি
সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছিলেন সুলশার? ছবি: এএফপি

রিও ফার্ডিনান্ডের মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। গ্যারি নেভিল অবশ্য নিজের মত প্রকাশে পিছপা হননি, জানিয়ে দিয়েছেন এখনো ওলে গুনার সুলশারকে সময় দেওয়ার পক্ষে। পাকাপাকিভাবে সুলশারের কাঁধে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ওকালতি এ দুজনই করেছিলেন। কিন্তু এ দুজনকে হতাশা উপহার দিয়ে ইউনাইটেডকে ৩০ বছরের সবচেয়ে বাজে শুরু এনে দিয়েছেন সুলশার। কাল নিউক্যাসলের কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে লিগে দ্বাদশ অবস্থানে চলে গেছে ইউনাইটেড। এখন তাই আত্মতৃপ্তিতে ভাসতেই পারেন লুইস ফন গাল। সাবেক ইউনাইটেড কোচ যে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন সুলশারকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে।

২০১৮-১৯ মৌসুমের শুরুটা ইউনাইটেডের জন্য ভয়াবহ ছিল। প্রথম ১৭ ম্যাচে মাত্র ৭ জয় নিয়ে ২৬ পয়েন্ট পেয়েছিল রেড ডেভিলরা। দলের খেলায় প্রাণ ছিল না, অতি মাত্রায় রক্ষণাত্মক খেলছিলেন পগবারা। তাই বড়দিনের আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল হোসে মরিনহোকে। দায়িত্ব দেওয়া হয় সুলশারকে।

মরিনহোকে বরখাস্ত করার পর সুলশারের অধীনে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছে ইউনাইটেড। লিগে প্রথম ১২ ম্যাচেই অপরাজিত ছিলেন সুলশার। তাতে ১০ জয় আর দুই ড্রতে ৩২ পয়েন্ট পেয়েছেন সুলশার। চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির মাঠে গিয়ে ৩-১ গোলের ঐতিহাসিক এক জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেও পা রাখা হয়েছিল। সাবেক ইউনাইটেড কিংবদন্তিদের অনেকেই বলছিলেন সুলশারের অধীনে আক্রমণাত্মক ফুটবলে ফিরেছে তারা। সুলশারকে দায়িত্ব দিলেই পুরোনো চেহারা ফিরে পাবে দলটি।

একমাত্র লুইস ফন গাল বলেছেন ভিন্ন কিছু। দাবি করেছিলেন সুলশারের ইউনাইটেড মরিনহোর মতোই বিরক্তিকর রক্ষণাত্মক ফুটবলই খেলে, ‘আমার পরে যে কোচ হয়েছিল (মরিনহো), সে “পার্ক-দ্য-বাস” ট্যাকটিকস নিয়েছিল এবং প্রতি আক্রমণ করে খেলত। এখন আরেকজন কোচ (সুলশার) এসেছে, সেও “বাস পার্ক” করে এবং প্রতি আক্রমণে খেলে। মরিনহো আর সুলশারের মধ্যে একটাই পার্থক্য সুলশার জিতছে।’

ফন গালের কথা এর পর থেকেই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। পিএসজি ম্যাচের পর লিগে প্রথম হারের দেখা পেয়েছিলেন সুলশার। আর্সেনালের কাছে হারের পর ইউনাইটেড টানা ১১ ম্যাচ প্রতিপক্ষের মাঠে জয় পায়নি। গত মৌসুমের শেষ ৯ ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরেছিল। মজার ব্যাপার, লিগে ষষ্ঠ অবস্থায় ইউনাইটেডকে রেখে গিয়েছিলেন মরিনহো। সুলশারের ইউনাইটেডও ওই ষষ্ঠ অবস্থানেই লিগ শেষ করেছিল।

এ মৌসুমেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ৮ ম্যাচে মাত্র ৯ পয়েন্ট ইউনাইটেডের। লিগে ১২ তম অবস্থানে থাকলেও বাস্তবে রেলিগেশন অবস্থান থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট দূরে। মজার ব্যাপার, ইউনাইটেডের সর্বশেষ এমন বাজে শুরুর সঙ্গে সুলশারের ইউনাইটেডের পার্থক্যও এখন মাত্র ২ পয়েন্টের। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দল প্রথম ৮ ম্যাচে শুধু ৭ পয়েন্ট জোগাড় করতে পেরেছিল। এর পর এত বাজে সময় আর কাটায়নি ইউনাইটেড।

ফল গাল যে বলেছিলেন সুলশারও নেতিবাচক ফুটবলই খেলান সেটাও এখন পরিষ্কার। গত ১৭ লিগ ম্যাচে ইউনাইটেড মাত্র ১৭ পয়েন্ট পেয়েছে। অথচ বরখাস্ত হওয়ার আগে মরিনহো ১৭ ম্যাচ থেকে ২৬ পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন। শুধু যে পয়েন্ট সংগ্রহে ব্যর্থ ইউনাইটেড তাও নয়। একঘেয়ে প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে গিয়ে গোলও পাচ্ছেন না সুলশার। সব প্রতিযোগিতা মিলে সর্বশেষ ২৩ ম্যাচ থেকে মাত্র ১৯ গোল পেয়েছে ইউনাইটেড।

এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য ক্লাব পর্যায়ে বিরতি শুরু হচ্ছে। দুই সপ্তাহ পরে যে অন্ধকার সময় কাটিয়ে ওঠা যাবে সেটা ভাবাও কঠিন। ফিরেই যে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের মুখোমুখি হবে ইউনাইটেড!