কোহলির অপেক্ষায় আছেন তাঁর 'যমজ'

বিরাট কোহলি ও সৌরভ গাদে। ছবি: লেটেস্টলি টুইটার পেজ
বিরাট কোহলি ও সৌরভ গাদে। ছবি: লেটেস্টলি টুইটার পেজ

রেজা পারাস্তেশকে তো মনে আছে? এ যুবাকে ইরানের রাস্তায় দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ান। ভ্রু কুঁচকে কেউ কেউ ভাবেন, লিওনেল মেসিকে তো কালই ক্যাম্প ন্যুতে দেখলাম। আর্জেন্টাইন তারকা এখানে হাজির হলেন কীভাবে! অনেকে রোমাঞ্চের আতিশয্যে ছেঁকে ধরেন পারাস্তেশকে। সেলফি তোলার আবদার আরকি। দেখতে অবিকল মেসির মতো হওয়ায় পারাস্তেশ তকমা পেয়ে গেছে ‘ইরানি মেসি’। আর তাই পারাস্তেশের ভক্তসংখ্যাও কম না! মজার ব্যাপার, ক্রিকেটেও এমন একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশ থেকে পণ্যের বিজ্ঞাপনী প্রচার এমনকি স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টেও প্রথম অতিথি হয়ে থাকেন যিনি।

সৌরভ গাদে। পেশায় বহুজাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘জেসিবি’র জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। দেখতে অবিকল বিরাট কোহলি। থুতনির গড়ন থেকে চোখের চাহনি পর্যন্ত এক! ভারতীয় অধিনায়কের মতো দাঁড়ি রেখে রোদচশমা পরলে তাঁকে কোহলির ‘ক্লোন’ ভেবে ভুল হতে পারে। আর সবার এ ভুলের জন্যই চলতি বছরের শুরুতে পাল্টে যায় সৌরভের জীবনের রোজনামচা। দেখতে কোহলির মতো হওয়ায় ভারতীয় বিধানসভার এক সদস্য তাঁকে ডেকে নেন নিজেদের মিছিলে। কোহলির প্রচারণা চালানো কাপড়ের ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করে থাকে এমন একটি স্থানীয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠান তাদের ফটো শুটে ডেকে নিয়েছে সৌরভকে।

রোদচশমা পরলে সৌরভ গাদে যেন বিরাট কোহলির ‘কার্বন কপি’। ছবি: সৌরভ গাদের টুইটার পেজ
রোদচশমা পরলে সৌরভ গাদে যেন বিরাট কোহলির ‘কার্বন কপি’। ছবি: সৌরভ গাদের টুইটার পেজ

ঘটনার শুরু গত মে মাসে। মহারাষ্ট্রের শিরুর জেলায় নির্বাচনের এক প্রার্থী ভোটারদের কথা দিয়েছিলেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় থাকবেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় অধিনায়ক প্রচারণায় আসবেন শুনে আগ্রহী তিল ঠাঁই ছিল না সেখানে। সেলফি ও অটোগ্রাফ শিকারিরা তো ছিলেনই। তবে আসল কোহলি যেমন আসেননি তেমনি নকল (সৌরভ গাদে) কোহলিকে দেখেও আগ্রহীদের রোমাঞ্চে এতটুকু ভাটা পড়েনি। সেই একই গড়নের শরীর ও মুখ, চোখে একই রোদচশমা, দেখলে কোহলি ভেবে ভুল হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে পেছনের ঘটনা বলেছেন সৌরভ, ‘কলেজের বন্ধু বলত, আমি নাকি দেখতে কোহলির মতো। এক বন্ধুর তোলা ছবি দেখেন শিরুরের এমএলএ (বিধানসভার সদস্য)। আমাকে ডেকে মিছিলে যোগ দিতে বলেন। মিছিল শেষে আরও অনেক ব্যানার প্রস্তুত হলো, যেখানে আসল কোহলির সঙ্গে প্রার্থীর ছবি ছিল। আমি দলীয় ছবি পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তা ভালো না হওয়ায় কোহলির ছবি ফটোশপ করেন এমএলএ।’

২৬ বছর বয়সী এই তরুণ তখন কিছুই টের পাননি। সামান্য একটি মিছিলে যোগ দিয়ে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবেন, সেটি তখন মাথায় আসেনি সৌরভের। পুনে থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে তাঁর নিজ গ্রাম ইলেওয়াদি দেহুতে সৌরভকে সবাই ডেকে থাকে ‘দেহুর বিরাট’। তাঁর বাবা সামরিক বাহিনীর সদস্য, মা শিক্ষক। বড় ভাই রাশিয়ায় ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

>ভারতের মহারাষ্ট্রের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ গাদে। দেখতে অবিকল বিরাট কোহলির মতো। আর তাই কিছু না করেও কোহলির খ্যাতির ভাগ পাচ্ছেন সৌরভ। রাজনৈতিক সভা থেকে পণ্যের প্রচারণার মডেল আর স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে প্রধান অতিথি হয়ে যেতে হয় সৌরভকে


সৌরভের জীবনে এখন ভরপুর ব্যস্ততা। নিজের ক্যারিয়ার তো আছেই। এর পাশাপাশি ভক্তদের নানা আবদার মেটাতে হচ্ছে। বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব থেকে শুরু করে নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানেও মধ্যমণি হতে হয় সৌরভকে। আর স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে তো কথাই নেই! প্রধান অতিথি হতে হয় তাঁকে। পুনের একটি বেকারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করেছে পণ্যের প্রচারণায় তাঁর মুখ ব্যবহার করবে। আর সামনে নির্বাচন থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়ার দাওয়াত নিয়মিতই পাচ্ছেন সৌরভ।

দেখতে কোহলির মতো হওয়ায় অনেকের আগ্রহ কেড়ে নিয়েছেন সৌরভ। ছবি: সৌরভ গাদের টুইটার পেজ
দেখতে কোহলির মতো হওয়ায় অনেকের আগ্রহ কেড়ে নিয়েছেন সৌরভ। ছবি: সৌরভ গাদের টুইটার পেজ

কিন্তু দুর্ভাগ্যও আছে সৌরভের জীবনে। যাঁর মতো চেহারা হওয়ায় জীবনটা পাল্টে গেছে সৌরভের, সেই কোহলির সঙ্গে যে এখনো দেখা করা হলো না! গত বছর পুনেতে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে কোহলির সঙ্গে দেখা প্রায় হয়েই যাচ্ছিল সৌরভের। ভারতের টিম বাস থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি চিনতে পেরে তাঁকে জানান, কোহলি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসে উঠবেন। সৌরভের ভাষায়, ‘আমি যেতে যেতেই বাস ছেড়ে দিয়েছিল। এখনো কোহলির সঙ্গে দেখার করার দিনটির অপেক্ষায় আছি।’

সেদিন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানটির সঙ্গে দেখা করতে না পারলেও তাঁর খ্যাতির ভাগ ঠিকই নিতে হয়েছিল সৌরভকে। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ক্রিকেটামোদীদের অটোগ্রাফ আর সেলফির আবদার মেটাতে হচ্ছিল। ভিড় জমে যাওয়ায় হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে। সৌরভের ভাষায়, ‘পুলিশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ আসনে গিয়ে বসার অনুরোধ করে—যেন লোকজন গিয়ে অহেতুক ভিড় করতে না পারে। আমার নিরাপত্তার জন্য ছিলেন দুজন কনস্টেবল ও এক অফিসার। পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার কথা বলেন।’

পুনে টেস্ট সামনে রেখে কোহলির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেছেন সৌরভ। গত মঙ্গলবার অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলেন ভারতের। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য সেদিন কোহলি অনুশীলন করেননি। সৌরভ তাতে মোটেও হতাশ নন। কথাটা হয়তো তিনিও জানেন—পৃথিবী গোল, একদিন দেখা হবেই।