দেশের ফুটবল ঘুমিয়ে থাকে, জেগে ওঠে মাঝেমধ্যে

কাল কাতার ম্যাচে স্টেডিয়াম ছিল ভর্তি। ছবি: শামসুল হক
কাল কাতার ম্যাচে স্টেডিয়াম ছিল ভর্তি। ছবি: শামসুল হক

ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দেশের মানুষ। অনেকেই বলেন কথাটি। দ্বিমত করার উপায় নেই। যে দেশে ঘরোয়া ফুটবলের খেলা প্রায়-দর্শকবিহীন অবস্থায় হয়, যে দেশে ক্লাব ফুটবল নিয়ে আগ্রহ খুবই সীমিত, সে দেশের মানুষ ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে—এটা কীভাবে অস্বীকার করা যাবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ফুটবলের প্রতি পুরোনো ভালোবাসা মনে পড়ে যায় বাংলাদেশের মানুষের। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নস্টালজিয়া পেয়ে বসে সবাইকে। গতকাল যেমন এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটিতে দর্শকেরা সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ফুটবলের সেই সোনালি দিনগুলিতে। গ্যালারি-ভর্তি দর্শকে গম গম করে উঠল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম।

ফুটবলপ্রেমীরা কাল মধুময় করে তুলেছিলেন সন্ধ্যাটাকে। প্যাচপেচে বৃষ্টি আর কর্মব্যস্ত সপ্তাহের শেষ দিনটিতে যানজট উপেক্ষা করে মানুষ মাঠে এসে উৎসাহিত করলেন দেশের জাতীয় ফুটবল দলকে। ফুটবল যে মানুষের মানসপট থেকে হারিয়ে যায়নি, এ দেশের মানুষ যে এখনো ফুটবলকে হৃদয়ে ধারণ করেন—বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেটির প্রমাণ মিলেছে খুব ভালোভাবেই। দর্শক হয়েছিল কাল কত? আনুষ্ঠানিক সংখ্যা জানার কোনো উপায় নেই। সে হিসাব রাখার ব্যবস্থাও নেই। তবে অনেকেরই ধারণা স্টেডিয়ামে কাল অন্তত ২০ হাজার দর্শক তো এসেছিলেনই।
কাতারের স্ট্রাইকার কিক অফ করছেন, অথচ পশ্চিম গ্যালারিতে প্রবেশের দর্শকদের লাইনের শেষটা তখনো স্টেডিয়ামের বাইরে। মনে হচ্ছিল গ্যালারিতে আসন গেড়ে বসা দর্শকের চেয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ দর্শকের পরিমাণই বেশি। সন্ধ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে প্রতীক্ষিত দীর্ঘ লাইনটা ছোট হতে হতে স্টেডিয়ামের গ্যালারি হয়ে উঠল ভর্তি। দিন শেষে তারা বাড়ি ফিরলেন এক লড়াকু ফুটবল ম্যাচের সাক্ষী হয়ে। কাতারের মতো এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারকে ‘গৌরবময়’ হিসেবেই দেখছেন দর্শকেরা।

টাঙ্গাইল থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন মাহমুদুল হাসান কিরণ। জামালদের খেলা স্বচক্ষে দেখার জন্য রওনা হয়েছিলেন দুপুরে। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে গ্যালারিতে বসা। তবে এমন ম্যাচ দেখতে ভবিষ্যতেও কষ্ট করতে রাজি তিনি ,‘ এমন খেলা দেখতে প্রতিদিনই মাঠে আসা যায়। আমাদের খেলোয়াড়েরা ভালো খেলেছেন। তবে গোল মিসটা বেশি হয়ে গিয়েছে।’

এমন ফুটবল যেন সারা বছর ধরে দেখতে পারেন বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকেরা!