ব্র্যাডম্যানকে পেছনে ফেললেন কোহলি

ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর বিরাট কোহলি। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন ভারতীয় অধিনায়ক। ছবি: এএফপি
ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর বিরাট কোহলি। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন ভারতীয় অধিনায়ক। ছবি: এএফপি
>পুনে টেস্টে ৫ উইকেটে ৬০১ রানে তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। ২৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন বিরাট কোহলি। ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাতটি ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন কোহলি

ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অনুভূতিটা মোটেও নতুন কিছু না। সুনীল গাভাস্কার কিংবা শচীন টেন্ডুলকার ব্যাট করার সময় অনেক ‘প্রথম’-এর জন্ম দেখেছেন সমর্থকেরা। মশালটা এখন বিরাট কোহলির হাতে। তার আলোয় কত ‘প্রথম’ দেখে ফেললেন দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীরা। পুনে টেস্টে আজও তেমন দু-একটি প্রথম-এর জন্ম দিলেন কোহলি। এর বাইরে তাঁর ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি কিন্তু মনঃসংযোগ, ফিটনেস আর নিখুঁত শট বাছাইয়ের বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে।

অধিনায়ক কোহলির ক্যারিয়ারের এই ৫০তম টেস্টটি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কয়েকটি কারণে। দেড় শ রান টপকে যাওয়ার পরই রেকর্ড বইয়ের একটি পাতায় কোহলির পেছনে দাঁড়াতে হয়েছে সেই বেঁটেমতো লোকটাকে-স্যার ডন ব্র্যাডম্যান! অধিনায়ক হিসেবে এটি কোহলির নবম দেড়শোর্ধ্ব রানের ইনিংস-যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির দখলে। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে আটটি দেড়শোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্র্যাডম্যান। অর্থাৎ ৭১ বছর আগে ব্র্যাডম্যানের গড়া রেকর্ডটি আজ নিজের করে নিলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান।

পুনে টেস্টে কোহলিকাহনের শুরুটা করা যায় কাল প্রথম দিন থেকে। ৯১ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিনটা শেষ করেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। আজ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মোট ১৭৩ বলে। ততক্ষণ পর্যন্তও ইনিংস গড়ছিলেন বিরাট কোহলি। লক্ষ্য ছিল আরও বড় কিছু করার। বড় ব্যাটসম্যানেরা যেভাবে প্রতিটা সেশন ধরে ধরে ব্যাট করে থাকেন।

টেস্টে এ দুই দিন মাঠে খাটতে খাটতে ক্লান্ত প্রোটিয়া বোলারদের বাজে বল পেলে অবশ্য ছাড়েননি। আর সেটি বেশি দেখা গেল তাঁর ২০০ রানে পৌঁছানোর পথে। এক শ থেকে দেড় শ-তে যেতে কোহলি খেলেছেন ৬৮ বল। আর দেড় শ থেকে দুই শ-তে যেতে লেগেছে ৫৪ বল। কোহলির ইনিংসকে এভাবে ব্যবচ্ছেদ করার কারণ, বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে তাঁর এ দুই দিনের ব্যাটিং অনুপম উদাহরণ হয়ে থাকবে। ক্যারিয়ারের এই সপ্তম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া পর্যন্ত কোহলি কোনো ছক্কা মারেননি। প্রোটিয়ারা যত বাজে বোলিং করেছে সে তুলনায় তাঁর এমন সংযত থাকা বেশ কঠিনই বটে।

ব্যক্তিগত ২০৮ রানে থাকতে আউট হতে পারতেন কোহলি। মুথুস্যামি ‘নো বল’ করায় রক্ষা পেয়েছেন সে যাত্রায়। তবে বেশ কিছু প্রথমের জন্ম হয়ে গেছে তার আগেই। ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত হিসেব কষলে দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে প্রথম ও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সাতটি ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন কোহলি। টেস্ট খেলুড়ে বড় দলগুলো মিলেও যা করতে পারেনি!

একই সময়ে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও তিনটির বেশি ডাবলের দেখা পায়নি। আরেকটু খোলাসা করে বলা যায়, কোহলি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাকি ব্যাটসম্যানরা সর্বোচ্চ দুটি ডাবলের দেখা পেয়েছেন, সেখানে কোহলি পেলেন সাতটি। ভাবা যায়! আর ভারতের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবেও সাতটি ডাবলের দেখা পেলেন কোহলি। এ পথে তিনি টপকে গেলেন পূর্বসুরী টেন্ডুলকার ও শেবাগকে।

৫ উইকেটে ৬০১ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। ২৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন কোহলি। টেস্টে এটি তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের স্কোর। এ নিয়ে ১৫বার নিজের সর্বোচ্চ রানের স্কোর নতুন করে গড়লেন তিনি—যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নিজেকে ভেঙে আরও ওপরে তোলার এ যাত্রায় কোহলি কোথায় গিয়ে থামবেন কে জানে! তবে টেস্ট আঙিনায় আপাতত যুগ্মভাবে চতুর্থ দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক।

পঞ্চম উইকেটে জাদেজার সঙ্গে কোহলির ২৩৭ বলে ২২৫ রানের জুটি বলছে, প্রোটিয়া বোলারদের ওপর দিয়ে কী ঝড়টাই না গেছে! ১০৪ বলে ৯১ রান করে আউট হন জাদেজা। মেরেছেন দুটি ছক্কা, কোহলিও তাই ; কিন্তু দুজনের পার্থক্যটা আসলে ইনিংস গড়ায়, একাগ্রতায়।