'বউয়ের চেয়ে রোনালদোর সঙ্গে বেশি সময় কেটেছে'

ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক লেফট ব্যাক রবার্তো কার্লোস। ছবি: এএফপি
ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক লেফট ব্যাক রবার্তো কার্লোস। ছবি: এএফপি
>রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম ‘গ্যালাকটিকোস’ যুগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন রবার্তো কার্লোস। ব্রাজিলের কিংবদন্তি এ লেফট ব্যাক সেই ‘চাঁদের হাট’খ্যাত দলের সদস্যদের জীবনযাত্রা এবং খেলোয়াড়দের ক্ষমতা নিয়ে মুখ খুললেন এত দিন পর

তাঁকে ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মানসিকতার লেফট ব্যাক হিসেবে মনে করেন অনেকে। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা জয়ের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ। স্প্যানিশ ক্লাবটিতেই কেটেছে ক্লাব ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়। এগারো বছরের মধ্যে রবার্তো কার্লোসের জীবনে একটা সময় এসেছিল যখন তিনি ছিলেন রিয়ালের ‘চাঁদের হাট’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের গড়া ‘গ্যালাকটিকোস’, নক্ষত্রপুঞ্জ। ২০০০ থেকে ২০০৭—এ সময়ের মধ্যে লুইস ফিগো, জিনেদিন জিদান, রোনালদো, ডেভিড বেকহাম, রবিনহো, মাইকেল ওয়েনদের রিয়ালে ভিড়িয়েছিলেন পেরেজ। এসব তারকা রিয়ালে যোগ দেওয়ার আগেই ক্লাবটিতে ছিলেন রাউল গঞ্জালেস, ইকার ক্যাসিয়াস, রবার্তো কার্লোস, গুতি, ক্লদ ম্যাকলেলেরা। সব মিলিয়ে রিয়ালের তখনকার দলটি অন্তত কাগজে-কলমে বিশ্বসেরাই ছিল। তবে সাফল্য তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছে ‘পর্বতের মূসিক প্রসব’। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে চাঁদের হাট গড়ে তিনবার লা লিগা ও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পেরেছিল রিয়াল।

তবে রোনালদো-জিদান-ফিগোরা সে সময় যেভাবে জীবন কাটিয়েছেন তা খুব কম ফুটবলারের ভাগ্যেই জোটে। কার্লোসের ভাষায়, গ্যালাকটিকোস গড়ার আগে অমন উপভোগ্য জীবন কাটাতে পেরেছে খুব কম ফুটবলার। এত দিন পর সেই উপভোগের জীবন নিয়ে মুখ খুলেছেন কার্লোস। সর্বকালের অন্যতম সেরা এ লেফট ব্যাক স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে বলেন, ‘এখন পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবি অমন পাগলাটে জীবন কাটানো কীভাবে সম্ভব হলো? প্রতিটি ম্যাচ শেষে ব্যক্তিগত বিমান দেখতাম। বাজারাসে ব্যক্তিগত টার্মিনালে দেখা হতো সবার সঙ্গে। বেকহাম কোথায় উড়াল দিত তা ঈশ্বর বলতে পারে। ফিগো আর জিদানও যেন কোথায় যেত। রোনালদো ও আমি ম্যাচের পরদিন অনুশীলন করতাম। আমি সব সময় শনিবারের ম্যাচের অপেক্ষায় থাকতাম। কারণ তাহলে পরের দিন ফর্মুলা ওয়ান দেখতে যেতে পারতাম। তখন আশপাশে ব্যক্তিগত বিমানের ছড়াছড়ি ছিল। পাগলাটে জীবন আরকি।’

ফিগো, জিদান, রোনালদো, কার্লোস, বেকহামদের নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সেই ‘গ্যালাকটিকোস’। ছবি: ইএসপিএন
ফিগো, জিদান, রোনালদো, কার্লোস, বেকহামদের নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সেই ‘গ্যালাকটিকোস’। ছবি: ইএসপিএন

মাদ্রিদের ক্লাবটিতে কাছের বন্ধু রোনালদোর সঙ্গে খেলেছেন কার্লোস। দুজনের প্রথম দেখা ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে। রিয়ালে ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ছিলেন রোনালদো। তখন এবং তার আগে-পরে মিলিয়ে ব্রাজিলের কিংবদন্তি স্ট্রাইকারটির সঙ্গেই বেশি সময় কেটেছে সাবেক এ লেফট ব্যাকের। তা বোঝাতে গিয়ে কার্লোস নিজেই বললেন, ‘১৯৯৩ সালে রোনালদোর সঙ্গে দেখা হয়। এরপর আমরা সব সময় এক কামরায় থেকেছি। নিজের বউয়ের চেয়ে রোনালদোর সঙ্গে বেশি সময় কেটেছে আমার।’

রিয়ালের সেই চাঁদের হাট তখন মাঠের বাইরেও কতটা শক্তিশালী তার একটি উদাহরণও দিয়েছেন কার্লোস। ভ্যান্ডারলি লুক্সেমবার্গ (২০০৫-০৬) তখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ। কার্লোসের ভাষায়, ‘সেটি লিগের দ্বিতীয় ম্যাচের কথা। হোটেলে ব্যাগ রেখে রাতের খাবারের আগে ওয়াইন কিংবা বিয়ার খাওয়ার প্রথা ছিল আমাদের। টেবিলে সব সময় দুই বোতল ওয়াইন থাকত। রোনালদো ও আমি তাকে (লুক্সেমবার্গ) বলেছিলাম, প্রফেসর এখানে সবার কিছু অভ্যাস আছে আর সেগুলো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। এসব পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না। টেবিল থেকে ওয়াইনের বোতল সরানো কিংবা রাতের খাবারের আগে বিয়ার বন্ধ করা যাবে না। তাহলে সমস্যায় পড়বেন। কিন্তু সে কি করল? প্রথমে ওয়াইন এবং তারপর বিয়ারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল। মাত্র তিন মাস টিকতে পেরেছিল। ফুটবলের দুনিয়া ছোট, (বোর্ড) পরিচালকদের কানে যাওয়ার পর তাকে বিদায় বলে দিয়েছিল।’