বিপিএলে ১৪০ কিলোমিটারে বোলিং কতটা বাস্তবসম্মত

বিপিএলে সম্প্রতি দেশি কোচরাই বেশি সফল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বিপিএলে সম্প্রতি দেশি কোচরাই বেশি সফল। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিসিবির পরিচালক মাহবুবুল আনাম ২০১৯ বিপিএলের কিছু নতুন নিয়ম জানিয়েছেন কাল। এর মধ্যে যে তিনটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে—

১. ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বোলিং করতে পারে এমন বিদেশি ফাস্ট বোলারকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. প্রতিটা দলে বিদেশি কোচ দেওয়া হবে।
৩. প্রতিটি দলে একজন লেগ স্পিনার খেলাতেই হবে এবং তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে ৪ ওভার বোলিং করাতে হবে।

১৪০ কিলোমিটারের বল

মাহবুব আনাম বলছেন, তাঁরা এবার বিপিএল করতে চান ক্রিকেটের উন্নয়নে। খেলোয়াড়েরা যেন এই টুর্নামেন্ট খেলে আরও উন্নতি করতে পারেন সে কারণে ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির বোলিং বাধ্যতামূলক করতে চাইছেন আয়োজকেরা। কথা হচ্ছে, ২০ ওভারের ম্যাচে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করলেই কি সাফল্য পাওয়া যায় বা এই মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত?বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ১৪০ কিলোমিটার গতির বল স্বচ্ছন্দে খেলতে পারলেই কি মনে করা যাবে টেকনিক্যালি তিনি অনেক উন্নতি করেছেন?

বিকেএসপির কোচ নাজমুল আবেদীনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘১৪০ না করে ঘণ্টায় ১৩৯ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করলে কী হবে? আমার কাছে মনে হয় ভালো বোলিং করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ১৪০‍+ গতিতে বোলিং করলাম, বেশির ভাগই হলো ফুলটস আর এলোমেলো লাইন-লেংথে, তাহলে তো লাভ হলো না। এখানে যদি টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী বোলার আনা হয় সেটা বেশি কার্যকর হবে। কিছু বোলার আছে ঘণ্টায় ১৩০-১৩৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে, তবে খুব কার্যকর। তাদের হাতে অনেক বৈচিত্র্য। কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ সব চিন্তা করে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে সবাই দল গোছায়। বোলারের গতি দেখে নয়। এখানে যদি র‍্যাঙ্কিংয়ের বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়, যেমন—এই পেসারকে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০-১৫ বোলারের মধ্যে থাকতে হবে, সেটি আরও বেশি কার্যকর হবে।’

দেশের বেশির ভাগ পেসারদের ‘গুরু’ সরওয়ার ইমরান এটি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইলেন না। তবে তিনি কিছুটা অবাক নতুন নিয়মে, ‘বিশ্বের আর কোনো দেশের টুর্নামেন্টে এসব নিয়ম আছে কিনা জানা নেই। টি-টোয়েন্টিতে পেসাররা সফল হয় বোলিংয়ে বৈচিত্র্য এনে। গতিতে পরিবর্তন আনে। ইয়র্কার মারে। এখানে ১৪০‍+ গতি বড় ব্যাপার নয়।’

বিদেশি কোচ

বিপিএলে এখনো পর্যন্ত টম মুডি, ওয়াকার ইউনিস, মাহেলা জয়াবর্ধনে, ডেভ হোয়াটমোর, ডিন জোনস, ল্যান্স ক্লুজনার, মিকি আর্থারের মতো অনেক নামীদামি কোচেরা কাজ করে গেছেন। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, বিপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে সফল স্থানীয় কোচরাই। গত চার বিপিএলে শুধু মুডিই (২০১৭ বিপিএলে রংপুরের হয়ে) ফাইনালে উঠেছেন। বাকি সাত ফাইনালিস্টের সবাই স্থানীয় কোচ। স্থানীয় কোচদের এ সাফল্যের পরও এবার কেন তাঁরা উপেক্ষিত থাকবেন সেটি বুঝতে পারছেন না ২০১৬ বিপিএলে রাজশাহীকে ফাইনালে তোলা সরওয়ার ইমরান, ‘শুনলাম স্থানীয়রা প্রধান কোচ হতে পারবেন না। খুবই হতাশ। এখানে পারফরম্যান্স দেখা হয় না। স্থানীয় কোচরা ভালো করলেও ঠিকঠাক মূল্যায়ন হয় না।’

নাজমুল আবেদীনও এটির যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না, ‘সব ফ্র্যাঞ্চাইজি অনেক চিন্তাভাবনা করেই এত দিন কোচ নিয়েছে। স্থানীয় সম্ভাব্য সেরা কোচদের উপেক্ষা করে মনে হয় না কেউ বিদেশি কোচ আনতে গেছে। চার-পাঁচ জন ভালো মানের স্থানীয় কোচ আছে, যারা এ ধরনের টুর্নামেন্টে কোচিং করাতে যোগ্য, অভিজ্ঞ। এটা খুবই হতাশার যে এবার তারা প্রধান কোচ হিসেবে থাকবে না।’

লেগ স্পিনার

বিপিএলের প্রতিটি দলে লেগ স্পিনার খেলানো বাধ্যতামূলক করতে চাইছেন আয়োজকেরা। খুব ভালো কথা। কিন্তু এত লেগ স্পিনার কি সরবরাহ করতে পারবে বিসিবি? নাজমুলের তাই প্রশ্ন, ‘সাতটা দলে সাতজন লেগ স্পিনার আসবে কোত্থেকে? আমরা সবাই জানি কজন ভালো মানের লেগ স্পিনার এই মুহূর্তে আমাদের আছে। বড় জোর ৩-৪ জন দেখা যেতে পারে। সবাই যে ওই মানের, তাও নয়। তার মানে কী? বাইরে থেকে আনতে হবে। এতে বিদেশি লেগ স্পিনারের খেলার সুযোগ হবে, লাভবান তারাই হবে। লেগ স্পিনারের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু আগে তো লেগ স্পিনার তৈরি করে সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। তৈরি না করেই যদি বাধ্যতামূলক করি, বিষয়টি সাংঘর্ষিক হয়ে যায় না?’

ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল কোচ সালাউদ্দিন তাই বলছেন, ‘জোর করে খেলোয়াড় তৈরি করা যায় না। খেলোয়াড় তৈরি করতে হয় একটা লম্বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।’