বাংলাদেশকে হারাতে যেমন হতে পারে ভারতের পরিকল্পনা

বাংলাদেশকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে কলকাতায় পা রেখেছে ভারত দল। ছবি: আইএফএফ টুইটার
বাংলাদেশকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে কলকাতায় পা রেখেছে ভারত দল। ছবি: আইএফএফ টুইটার
>

এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের যৌথ বাছাইপর্বে আগামী মঙ্গলবার কলকাতার বিখ্যাত যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ম্যাচটা দুই দলের জন্যই মহাগুরুত্বপূর্ণ। পরের রাউন্ডে যেতে দুই দলের কাছেই জয়ের বিকল্প নেই। ওদিকে আট বছর পর কলকাতায় খেলতে আসছে ভারতীয় দল, ফলে এই ম্যাচ নিয়ে ভারতীয়দের প্রত্যাশাও আকাশচুম্বী। উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে বাংলাদেশকে বশ করতে কেমন পরিকল্পনা নিয়ে খেলবে ভারত?

এশিয়ান কাপ ও বিশ্বকাপের যৌথ বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপ ‘ই’ তে সবচেয়ে নিচের দুটি অবস্থানে আছে ভারত আর বাংলাদেশ।

ম্যাচের আগে দুই দলের উত্তেজনা দেখে কে বলবে সেটা? একে তো প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কারণে দুই দলই চাচ্ছে নিজেদের ফুটবলীয় আধিপত্যের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে। আবার গ্রুপের সবচেয়ে নিচের দুই দলের জন্য এ ম্যাচ বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম জয় পাওয়ার উপলক্ষ। আর সে লড়াইয়ে ভারতই এগিয়ে। র‍্যাঙ্কিংয়ের দিক দিয়ে তো বটেই, দুই দলের মাঠের খেলাতেও পার্থক্য দৃশ্যমান। ভারতের র‍্যাঙ্কিং যেখানে ১০৪, বাংলাদেশ আছে তার ৮৩ ধাপ পেছনে। এ ম্যাচে ভারত স্বাগতিক, খেলা ৮৫ হাজার দর্শকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। বলা চলে মোটামুটি সব দিক দিয়েই বাংলাদেশ একটু ব্যাকফুটে।

স্বস্তির বিষয় হলো, ফুটবলে র‍্যাঙ্কিং শেষ কথা নয়। নিজেদের মাঠের সুবিধাও সব সময় সব দল নিতে পারে না। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ খোদ ভারতই দিয়েছে গত ম্যাচে। র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪২ ধাপ এগিয়ে থাকা গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল, ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারকে তাদের মাঠে রুখে দিয়েছে ০-০ স্কোরলাইনে। এই ম্যাচ থেকেই চাইলে প্রেরণা নিতে পারেন জামাল ভূঁইয়ারা। ভারতের মাটি থেকে অন্তত এক পয়েন্ট হলেও ছিনিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ।

ওদিকে ভারতের লক্ষ্য বাংলাদেশকে হারিয়ে পূর্ণ তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়া। পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেলে আফগানিস্তানকে হটিয়ে গ্রুপে তিনে উঠে আসবে ভারত। সে লক্ষ্যে তাদের কৌশলটা কেমন হতে পারে?

ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচ। ছবি: এএফপি
ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচ। ছবি: এএফপি

সফল কোচ স্টিভেন কনস্ট্যান্টাইনকে সরিয়ে গত মে তে ক্রোয়েশিয়ার কোচ ইগর স্টিমাচের হাতে ভারতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কনস্ট্যান্টাইনের অধীনে ফলাফলের দিক দিয়ে ভারতের ফুটবলের উন্নতি হলেও, রক্ষণাত্মক কোচ হিসেবে তাঁর একটা দুর্নাম ছিল। রক্ষণাত্মক ৪-৪-১-১ ছকে দলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারতেন না। কনস্ট্যান্টাইনের জায়গায় স্টিমাচ আসার পর মোটামুটি সব ভারতীয় দর্শকদের এটাই চাওয়া ছিল, নতুন কোচের অধীনে ভারত যেন অন্তত চোখ জুড়ানো ফুটবল খেলে।

স্টিমাচ আসার পর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে মোট সাতটি ম্যাচ খেলেছে ভারত। এই সাত ম্যাচে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেক খেলোয়াড়কেই সুযোগ দিয়েছেন স্টিমাচ, নিজের আদর্শ একাদশ খুঁজে পাওয়ার জন্য। ম্যাচে ম্যাচে খেলোয়াড় বদলালেও, একটা জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে, সেটা হলো খেলার ধরন। এই সাত ম্যাচে স্টিমাচ অন্তত দুটি জিনিস ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রথমত, তাঁর অধীনে ভারত দমবন্ধ করা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলবে না। তাঁর ধরন আক্রমণাত্মক। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজন পড়লে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে তাঁরা পিছপা হবে না। কাতারের বিপক্ষের ম্যাচটাই যার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।

নিজেদের মাঠে ভারত ৮৩ ধাপ পেছনে থাকা দলের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক খেলবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাছাইপর্বের প্রথম জয় তুলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে তাঁরা আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসবে, এটাই স্বাভাবিক।

স্টিমাচের পছন্দের ছক ৪-২-৩-১। কিন্তু এই ছকে খেলানোর জন্য একজন আদর্শ আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার থাকা লাগে, যার কাজ হবে মূল স্ট্রাইকারের একদম পেছনে থেকে বলের জোগান দিয়ে যাওয়া। স্পেনের ইসকো বা জার্মানির মেসুত ওজিল যে কাজটা করতেন। রক্ষণ না, আক্রমণ গড়ে তোলাই হবে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু দুটি কারণে স্টিমাচ আদর্শ ৪-২-৩-১ ছকে দলকে খেলাতে পারেন না (যদিও কিছু ম্যাচে কাগজে-কলমে ৪-২-৩-১ ছকই দেখানো হয়েছে)। এর পেছনে কারণ দুটি। এক, ভারতের সে রকম প্রথাগত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার নেই। দুই, অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হওয়ার কারণে ভারত সব সময় আগে নিজের ঘর সামলে আক্রমণ করতে যায়। ফলে মোটামুটি সব খেলোয়াড়কেই কম বেশি নিচে নেমে রক্ষণে সহায়তা করতে হয়। ফলে ৪-২-৩-১ ছকটাই ৪-৩-৩ ছকে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

গুরপ্রীত সিং সান্ধুর জন্যই সেদিন এক পয়েন্ট পেয়েছে ভারত। ছবি: এএফপি
গুরপ্রীত সিং সান্ধুর জন্যই সেদিন এক পয়েন্ট পেয়েছে ভারত। ছবি: এএফপি

গোলরক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে যথারীতি থাকবেন গুরপ্রীত সিং সান্ধু। কাতারের বিপক্ষে এই গুরপ্রীত রীতিমতো চীনের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত হাতের কল্যাণে মূল্যবান এক পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছিল ভারত। পুরো ম্যাচে গোলে ২৭টি শট ছিল কাতারের। সব কয়টা শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন গুরপ্রীত। বাংলাদেশের বিপক্ষেও খেলবেন তিনি। প্রথাগত গোলরক্ষক নয়, গুরপ্রীত নিজেকে আধুনিক গোলরক্ষক ভাবেন। শুধু গোল ঠেকানো নয়, বরং মাঠের অতিরিক্ত একজন খেলোয়াড় হিসেবে পেছন থেকে দলের আক্রমণ গড়ে দেওয়াও যার লক্ষ্য। আর এ জন্য নিয়মিত ম্যানুয়েল নয়্যার, এডারসনদের মতো গোলরক্ষকদের ভিডিও দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেন নরওয়ের ক্লাব স্টায়েবেকের হয়ে ইউরোপা লিগের বাছাইপর্ব খেলে আসা এই গোলরক্ষক।

চোটের কারণে দলে নেই মূল ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্গান। ছবি: আইএফএফ টুইটার
চোটের কারণে দলে নেই মূল ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্গান। ছবি: আইএফএফ টুইটার

৪-৩-৩ ছকে দলের মূল সেন্টারব্যাক থাকবেন দুজন। বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ, স্টিমাচ তাঁর সবচেয়ে পছন্দের দুই সেন্টারব্যাকের একজনকে এই ম্যাচে পাচ্ছেন না। লিগামেন্টের চোটে পড়ে আনুমানিক ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন কেরালা ব্লাস্টার্সের অধিনায়ক সন্দেশ জিঙ্গান। যিনি মাঝেমধ্যে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বও করে থাকেন। জিঙ্গানের জায়গায় খেলার জন্য লড়াই হবে মূলত নরেন্দ্র গালোত, আনাস এডথোড়িকা ও শুভাশিস বসুর মধ্যে। জামশেদপুরের নরেন্দ্র গালোত প্রতিভাবান হলেও বয়স অনেক কম, তাই তাঁকে হয়তো মাঠে নাও নামাতে পারেন স্টিমাচ। তবে এটাও সত্যি, মূল সেন্টারব্যাকের কেউ না থাকলে ভারতের সেন্টারব্যাক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সুযোগ গালোতই পেয়েছেন। ১৮ বছর বয়সী গালোত সিরিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে গোল করার কৃতিত্ব গড়েছেন।

ওদিকে অবসর থেকে কিছুদিন আগে ফিরে এসেছেন আনাস এডথোড়িকা, দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও স্টিমাচের অধীনে কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। ওদিকে শুভাশিস বসু ভারতের মূল লেফটব্যাক হলেও কোচের ডাকে সাড়া দিয়ে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতে পারেন এই ম্যাচে। আরেক সেন্টারব্যাক হিসেবে যথারীতি থাকবেন পুনে সিটির আদিল খান।

দলের মূল লেফটব্যাক মুম্বাই সিটির শুভাশিস বসু। আক্রমণে যাওয়ার তেমন অভ্যাস নেই তাঁর। ‘আক্রমণে যাওয়ার আগে নিজের ঘর আগে সামলাও’—এই নীতিতে বিশ্বাসী। ফলে দলের অন্য লেফটব্যাক মন্দর রায় দেশাইয়ের চেয়ে রক্ষণের দিক দিয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। এই ম্যাচে শুভাশিস সেন্টারব্যাক হিসেবে খেললে লেফটব্যাক হিসেবে মন্দর রায়কে দেখা যেতে পারে। উইঙ্গার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা মন্দর দলের প্রয়োজনে এখন পুরোদস্তুর লেফটব্যাক।

রক্ষণভাগে ভারতের সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা রাইটব্যাক। ভারতে তেমন কার্যকরী কোনো রাইটব্যাক নেই। ভারতের মূল রাইটব্যাক হিসেবে খেলে থাকেন বেঙ্গালুরু এফসির রাহুল ভেকে। সদ্যই চোট থেকে ফেরা রাহুলকে কোচ এখনই নামিয়ে দেবেন কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। সেটা যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে দলের রাইটব্যাক হিসেবে থাকবেন এটিকের প্রীতম কোটাল। সেদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রীতমকে দেখা যেতে পারে। ওমানের বিপক্ষে দ্বিতীয় গোলে রাহুলের একটু ভুল ছিল। তবে রাহুল দলে থাকলে রক্ষণভাগের একটু বাড়তি নিশ্চয়তার পাশাপাশি ‘থ্রো-ইন’ গুলোতে ভারতের সুবিধা হয়ে যায়। জোরে ‘থ্রো-ইন’ করার জন্য রাহুলের বেশ সুনাম আছে।

৪-৩-৩ ছকে ভারতের মিডফিল্ডে খেলবেন তিনজন। স্টিমাচ এই তিন মিডফিল্ডার হিসেবে তিন ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলির খেলোয়াড়কে খেলাতে পছন্দ করেন। একজন পুরোদস্তুর রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলবেন। দ্বিতীয়জন দলের ফুসফুস হিসেবে কাজ করবেন। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ও আক্রমণ রচনা করা তাঁর কাজ হবে। গোটা নব্বই মিনিট বিরামহীন ওঠানামা করতে থাকবেন। বাকি জনের কাজ হবে স্ট্রাইকারের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার বা সহকারী স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করা।

ভারতের তেমন কোনো কার্যকরী রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার নেই। যিনি আছেন, জামশেদপুরের অমরজিৎ সিংও চোটের কারণে মাঠের বাইরে। কোচ কাতারের বিপক্ষে যাকে খেলিয়েছেন, সেই রাওলিন বোর্গেসও চোটে। এই জায়গায় খেলানো হতে পারে ওডিশা এফসির বিনীত রায়কে। বিনীত রায়ের কাজটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুই সেন্টারব্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দলের রক্ষণভাগটা অটুট রাখার কাজ তাঁকে করতে হবে। সঙ্গে পেছন থেকে নিখুঁত পাস দেওয়ার দায়িত্বটাও বর্তাবে তাঁর ওপর।

অনিরুদ্ধ থাপার (সবার সামনে) কাঁধে মিডফিল্ডের গুরুদায়িত্ব। ছবি: আইএফএফ টুইটার
অনিরুদ্ধ থাপার (সবার সামনে) কাঁধে মিডফিল্ডের গুরুদায়িত্ব। ছবি: আইএফএফ টুইটার

দলের ফুসফুস হিসেবে যথারীতি থাকবেন অনিরুদ্ধ থাপা। টানা নব্বই মিনিট ট্যাকল করা থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া, বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, হুট করে প্রতিপক্ষের ডিবক্সে ঢুকে গিয়ে শট নেওয়া, সব কাজই করে থাকেন চেন্নাইয়িন এফসির এই মিডফিল্ডার। অনিরুদ্ধকে ভারতের ‘আর্তুরো ভিদাল’ বলা হলেও অত্যুক্তি করা হবে না হয়তো!

তবে মিডফিল্ডারদের মধ্যে আক্রমণ করার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি থাকবে সাহাল আবদুল সামাদের ওপর। ঠিক প্রথাগত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার তিনি নন, মূলত তাঁর জন্যই স্টিমাচের ৪-২-৩-১ ছকটা মাঝেমধ্যেই ৪-৩-৩ হয়ে যায়। গত মৌসুমে ভারতীয় ফুটবল সংস্থার সেরা তরুণ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন আরব আমিরাতে জন্ম নেওয়া এই মিডফিল্ডার। ইন্ডিয়ান সুপার লিগেরও (আইএসএল) সেরা তরুণ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভারতের তরুণ তারকাদের মধ্যে এই সাহালকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর। ছেত্রীর সঙ্গে মাঠে তাঁর বোঝাপড়াটাও দিন দিন জমে উঠছে বেশ।

উড়ন্ত সিং। ছবি: আইএফএফ টুইটার
উড়ন্ত সিং। ছবি: আইএফএফ টুইটার

উইঙ্গার দুজনের মধ্যে রাইট উইঙ্গার হিসেবে বেঙ্গালুরু এফসির উড়ন্ত সিংয়ের জায়গা পাকা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে নিজের নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করেই যাচ্ছেন এই তরুণ। গোটা ভারত দলের সবচেয়ে দ্রুতগতির খেলোয়াড় মানা হয় তাঁকে। কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে ২০১৮ সালে এশিয়ার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়া লেফটব্যাক আবদেল করিম হাসানকে একাই ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন এই উড়ন্ত। বড় অস্ত্র গতি থাকলেও, উইং দিয়ে ক্রস করার ব্যাপারটা এখনো অত ভালো আয়ত্ত করতে পারেননি। রাইট উইঙ্গার হিসেবে উড়ন্তর জায়গায় মাঝেমধ্যে মুম্বাই সিটির রেইনিয়ার ফার্নান্দেজকে খেলানো হয়।

লেফট উইঙ্গার হিসেবে নির্দিষ্ট কেউ খেলেন না ভারত দলে। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা ও নিজেদের কৌশল বিবেচনা করে আশিক কুরুনিয়ান, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে ও ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজের মধ্যে যেকোনো একজনকে খেলানো হয় বামদিকের উইঙ্গার হিসেবে।

আদর্শ উইঙ্গারের মতো গতি নেই গোয়া এফসির ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজের। বরং তাঁর শক্তি পাস নির্ভর ফুটবল খেলা। বেশ ভালো ফ্রি-কিক ও কর্নার নিতে পারেন। ওমানের বিপক্ষে তাঁর নেওয়া ফ্রি-কিক থেকেই গোল করেছিলেন স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। এসব গুণের জন্য মাঝেমধ্যেই উইঙ্গার নয়, বরং তিন মিডফিল্ডারের একজন হিসেবে খেলানো হয় ব্রেন্ডনকে। ওদিকে উড়ন্তর মতো বেঙ্গালুরু এফসিতে খেলা আশিকের মূল শক্তিও গতিতে। স্পেনের ক্লাব ভিয়ারিয়ালের যুবদলে কিছুদিন খেলা এই তারকার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

গোল করার মূল দায়িত্ব এখনো সুনীল ছেত্রীর কাঁধে। ছবি: আইএফএফ টুইটার
গোল করার মূল দায়িত্ব এখনো সুনীল ছেত্রীর কাঁধে। ছবি: আইএফএফ টুইটার

দলের আরেক গতিশীল উইঙ্গার লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে। চেন্নাইয়িন এফসির এই উইঙ্গার ডান-বাম দুই উইঙেই খেলতে পারেন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে জায়গা খুঁজে নেওয়া, ড্রিবল করা—এসব কাজ বেশ ভালোই করতে পারেন তিনি।

ভারতের ছক অনেকটা এমনই হবে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ছক অনেকটা এমনই হবে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মোটামুটি সব উইঙ্গারই গতিশীল। কিন্তু গোল করার ক্ষেত্রে তাঁরা কেউই তেমন কার্যকরী নন। গোল করার মূল দায়িত্ব এখনো ৩৫ বছর বয়সী দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিন দিন আরও বেশি কার্যকরী হচ্ছেন যেন এই তারকা স্ট্রাইকার। ফিটনেস বজায় রাখতে এর মধ্যেই আমিষ খাওয়া বাদ দিয়েছেন, মাছ-মাংস ছুঁয়েও দেখেন না। ফলে তাঁর গায়ের শক্তি বেড়েছে, প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাকদের তটস্থ করে রাখেন সারাক্ষণ। কৌশলগত ফাউল (যে ফাউল করলে কার্ড খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না) করতে ওস্তাদ। তবে আগের থেকে ছেত্রীর গতি কমেছে একটু। যে কারণে প্রায়ই নিচে নেমে এসে দলের মিডফিল্ডকে সাহায্য করতে দেখা যায় তাঁকে।

প্রায় আশি হাজার দর্শকের গর্জন কি বাংলাদেশ থামিয়ে দিতে পারবে? জবাব পাওয়া যাবে মঙ্গলবার।

সম্ভাব্য একাদশ: গুরপ্রীত সিং, রাহুল ভেকে, আদিল খান, নরেন্দ্র গালোত/শুভাশিস বসু, মন্দর রায় দেশাই, বিনীত রায়/ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজ, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আবদুল সামাদ, আশিক কুরুনিয়ান, উড়ন্ত সিং, সুনীল ছেত্রী