ম্যাচের টিকিট চেয়ে লজ্জা দেবেন না

টিকিটের জন্য লম্বা ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
টিকিটের জন্য লম্বা ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

‘একটি টিকিট হবে?’

কলকাতা শহরে পা রাখার পর থেকেই প্রশ্নটি কানে বাজছে। যদি ভুল করেও মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন, ভারত- বাংলাদেশ ম্যাচের জন্য কলকাতায় আসা। তাহলেই আর রক্ষে নেই। পেছনে টিকিটের জন্য লাইন পড়ে যেতে পারে।

গতকাল বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসার জন্য গনেশ মাহতার ট্যাক্সি ক্যাবে ওঠা। কলকাতায় কারও বোধ হয় নির্দিষ্ট এক পরিচয় নেই। রুটি রুজির জন্য যে যাই করুক না কেন, তার সঙ্গে আরও একটা বড় পরিচয় সে ইস্টবেঙ্গল না হয় মোহনবাগানের সমর্থক। ট্যাক্সি চালক মাহতা মোহনবাগানের অন্ধ ভক্ত। তাঁকে বলতেই হলো, ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের জন্য কলকাতায় আসা। এতে বাড়তি একটু সমাদর পাওয়া গেল। কিন্তু টিকিটের আবদার রাখতে না পারায় সে সমাদর কর্পূরের মতো উড়ে গেল।

কলকাতা এমনিতেই ফুটবলের শহর। উনুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। হালে দুই দলের শক্তির পার্থক্য যতই থাকুক না কেন, কলকাতায় ম্যাচ হওয়াটাই সাধারণ দর্শকদের তাতানোর জন্য যথেষ্ট। এর সঙ্গে যোগ করুন ইতিহাস। ৩৪ বছর পর যুব ভারতীতে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। কলকাতার মাঠে ভারত জাতীয় দলই খেলছে প্রায় ৯ বছর পর। সব মিলিয়ে ফুটবল হিস্টিরিয়ায় ভুগছে গোটা শহর।

এক মাস আগেই উন্মাদনা জাগিয়েছেন স্বাগতিক কোচ ইগর স্টিমাচ । কলকাতার দর্শকদের উদ্দেশ্যে বার্তা ছিল ,‘কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি দর্শক দেখতে চাই।’ স্বাগতিক দর্শকদের সঙ্গে টক্কর দিতে গতকাল রাতেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি বহর। তাদের জন্য চার শ টিকিটের একটি চাহিদা পত্র দেওয়া আছে বলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শোনা গিয়েছে।

সব মিলিয়ে সুনীল ছেত্রীদের বিপক্ষে জামাল ভূঁইয়াদের লড়াইটি মহারণের দিকেই যাচ্ছে। অন্তত দর্শকদের উন্মাদনা দেখলে এ কথার ভুল ধরার লোক পাওয়ার কথা নয়। গতকাল যুব ভারতীয় স্টেডিয়াম পাড়ায় ঘুরেও পাওয়া গেল টিকিটের জন্য হাহাকার। লম্বা লাইন আছে কাউন্টারের সামনে, কিন্তু ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ‘সোল্ড আউট’। ২ নম্বর বুথের টিকিট বিক্রয় কর্মী প্রধান ল্যাপটপের পর্দায় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, দেখুন দাদা টিকিট নেই।

ভারতীয় ফুটবল সংস্থার মিডিয়া অফিসারের ভাষ্য মতে ম্যাচের জন্য ৬৫ হাজার টিকিট ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ দর্শকদের জন্য আপাতত ৪৫ হাজার টিকি। যার ৩৫ হাজার অনলাইনে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়েছে। ২০ হাজার টিকিট ভারতীয় ফুটবল সংস্থার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও রাজ্য সরকারের জন্য। তবে সেখান থেকেও সাধারণ দর্শকদের জন্য কিছু টিকিট বুথে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আকাশ সমান চাহিদার সামনে এ ক্ষুদ্র জোগানে কি আর কিছু হয়!

ম্যাচের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, টিকিটের জন্য দীর্ঘশ্বাস তত বাড়ছে। বাঙালির এই ফুটবল উন্মাদনাও উপভোগ করছি প্রাণ ভরে। শুধু একটাই সমস্যা, যে হারে টিকিটের আবদার শুনতে হচ্ছে তাতে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘোরার সময় এসেছে, ‘টিকিট চেয়ে লজ্জা দেবেন না।’