মিরাজকে কেন ধন্যবাদ দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ

মিরাজের প্রতি মাহমুদউল্লাহর কৃতজ্ঞতা
মিরাজের প্রতি মাহমুদউল্লাহর কৃতজ্ঞতা
মেহেদী হাসান মিরাজ তাঁর ‘জুনিয়র’ সতীর্থ। ‘ছোট’ মিরাজই বড় উপকার করেছেন মাহমুদউল্লাহকে। কী সেই উপকার, যেটি কৃতজ্ঞচিত্তে মনে করছেন মাহমুদউল্লাহ


কঠিন এক সময়ই গেছে মাহমুদউল্লাহর। বিশ্বকাপের আগে পড়লেন কাঁধের চোটে। কাঁধের চোটে পড়ায় বিশ্বকাপে তাঁর বোলিং-সেবাটা পায়নি বাংলাদেশ। কাঁধের চোট এতটাই ভোগাতে শুরু করল, একটা সময় অস্ত্রোপচারের প্রসঙ্গও উঠল। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়নি, কাঁধের চোট সারিয়ে তিনি পূর্ণ ছন্দে আবার বোলিং শুরু করেছেন। জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে ৬ উইকেট পেয়েছেন, যেটি তাঁকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে।

পুরোপুরি চোটমুক্ত মাহমুদউল্লাহ ব্যাটে-বলে ছন্দে ফিরে পেয়েছেন। চোট কাটিয়ে ওঠায় নিজেকে বেশ ঝরঝরে অনুভব করছেন। চোখে–মুখে সজীব-সতেজ একটা ভাব। কঠিন এক পথ পেরিয়ে আসার প্রশান্তি মাহমুদউল্লাহর মনে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার এই চেষ্টায় তাঁকে যারা সহায়তা করেছে, সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানালেন মাহমুদউল্লাহ। কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের নাম।

কেন মিরাজকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন, মাহমুদউল্লাহ সেটি প্রথম আলোকে বললেন এভাবে, ‘৬-৭ মাস ধরে কাঁধের চোটে ভুগছিলাম। শুরুর দিকে অস্ত্রোপচারের কথা এসেছিল। ওই সময়ের ফিজিও থি (থিহান চন্দ্রমোহন) অনেক সহায়তা করেছে। ওর চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হয়। আমাদের স্থানীয় ফিজিও বায়েজিদ ভাইয়ের কথা বলব। অনেক সময় দিয়েছেন তিনি। কোন কোন (থেরা/রাবার) ব্যান্ড-ব্যায়ামের মাধ্যমে এই চোট কাটিয়ে উঠতে পারব, জানিয়েছেন। সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ অনেক সহায়তা করেছে। আমরা যখন আয়ারল্যান্ডে ছিলাম, তখন ওরও কাঁধের চোট ছিল। দেখতাম ওর অনেক কষ্ট হতো। মিরাজের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, এটার পুনর্বাসন–প্রক্রিয়া সে কীভাবে সারছে। ওই সময় ও অনেক সহায়তা করেছে। দুজন একসঙ্গে জিমে যেতাম। ব্যান্ডের কাজগুলো করতাম। মিরাজকে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই।’

মাহমুদউল্লাহর ধন্যবাদে ভীষণ আপ্লুত মিরাজ। খুলনা থেকে মুঠোফোনে ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বললেন, ‘রিয়াদ ভাইকে (মাহমুদউল্লাহ) সাহস দিয়েছিলাম, বলেছিলাম ভাই, টেনশন করবেন না। আপনার হাত ভালো হয়ে যাবে। প্রথমে কষ্ট হবে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। আমার কথায় হয়তো আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। আমি আর তিনি একসঙ্গে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতাম। দেশে ফেরার পর বললেন, আমার এখন বেশ ভালো লাগছে। আমারও ভালো লাগছে, তিনি ভালোভাবে বোলিং শুরু করেছেন।’

বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ৬ ইনিংসে ১ ফিফটিতে মাহমুদউল্লাহ করেছেন ২১৯ রান। ৪৩.৮০ গড় অবশ্য বলছে তিনি খুব একটা খারাপ করেননি। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুর্দান্ত খেলা মাহমুদউল্লাহই তো নিজের ‘মানদণ্ড’ ঠিক করেছেন। তাঁর কাছে প্রত্যাশাটা তাই বেশিই ছিল। বিশ্বকাপের পরই শ্রীলঙ্কা সফরটা আরও খারাপ গেছে। ভালো করতে পারেননি আফগানদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। মাহমুদউল্লাহ নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে।

ক্যারিয়ারে এমন কঠিন সময় তাঁর আগেও গেছে। তিনি বলতে পছন্দ করেন, তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগই কঠিন সময়! কঠিনেরে তাই মাহমুদউল্লাহ ভীষণ ভালোবাসেন, ‘ক্যারিয়ারের কঠিন সময় সব খেলোয়াড়েরই যায়। কারও কম, কারও বেশি। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কঠিন সময়ে অনেক কিছু শিখতে পারবেন, অনেক কিছু জানতে পারবেন। এটা যদি আপনি ইতিবাচকভাবে নেন, তাহলে সেটা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। কীভাবে আরও বেশি কষ্ট করে ফিরে আসতে পারব, সেটা বেশি কাজ করে। মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট করে আরও প্রস্তুত হয়ে ফিরে আসতে পারবেন। আমি কঠিন সময়কে এভাবে দেখি। এই সময়ে নিজের খেলায় আরও উন্নতি করা যায়।’