এক আদিলেই আটক বাংলাদেশ

রক্ষণভাগে আদিল খানের মতো নেতাই চেয়েছে ভারত। ছবি: ইন্ডিয়ান সুপার লিগ টুইটার পেজ
রক্ষণভাগে আদিল খানের মতো নেতাই চেয়েছে ভারত। ছবি: ইন্ডিয়ান সুপার লিগ টুইটার পেজ
>ভারতের চোটজর্জর রক্ষণভাগ নিশ্ছিদ্র করে রাখতে সুনীল ছেত্রীরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। কী অসাধারণভাবেই না বিশ্বাসের প্রতিদান দিলেন হায়দরাবাদ এফসির আদিল খান!

আদিল খান আর সন্দেশ জিঙ্গান।

হুট করে দেখলে দুজনকে যমজ ভাই মনে হতে পারে। চুল-দাঁড়ি রাখার ধরন, শারীরিক গঠন ও উচ্চতা-সবই মোটামুটি এক এ দুজনের। চেহারায় শান্ত-সৌম্য ঋষিসুলভ ভাব। নতুন কোচ ইগর স্টিমাচ আসার পর ভারতের সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বাঁধার জন্য পছন্দ করেছিলেন এ দুজনকে। কেরালা ব্লাস্টার্সের সন্দেশ জিঙ্গান ও হায়দরাবাদ এফসির আদিল খান ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও জাত চিনিয়ে যাচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও এ দুজনেরই জুটি বেঁধে খেলার কথা।

কিন্তু বিধি বাম। হুট করে লিগামেন্টের চোটে পড়ে দল থেকে ছিটকে গেলেন সন্দেশ। একেবারে ছয় মাসের জন্য মাঠের বাইরে। ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অযাচিত এক সমস্যায় পড়ল ভারত। এমন না যে ভারতের রক্ষণভাগে খেলার মতো খেলোয়াড় নেই। কিন্তু মূল একাদশের একজন খেলোয়াড় না খেলাটা বেশ বড় একটা ধাক্কাই বলা চলে।

রক্ষণভাগের প্রিয় সঙ্গী চোটের জন্য দল থেকে ছিটকে পড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে আদিল খানের ওপর দায়িত্বের চাপটা বেড়ে গিয়েছিল। ম্যাচের আগ পর্যন্ত বোধ হয় খোদ আদিলও নিশ্চিত ছিলেন না, রক্ষণভাগে তাঁর সঙ্গী হিসেবে কোচ ইগর স্টিমাচ কাকে পছন্দ করবেন। তালিকায় ছিল আনাস এডথোড়িকা, নরেন্দ্র গালোত ও শুভাশিস বসুর নাম।

জামশেদপুরের নরেন্দ্র গালোত কিছুদিন হলো দলে এসেছেন। সিরিয়ার বিপক্ষে ভারতের ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হওয়ার কীর্তি গড়লেও তরুণ এ সেন্টারব্যাক যুবভারতীর উত্তাল জনসমুদ্রে মনঃসংযোগ কতটুকু ধরে রাখতে পারেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিলই। ওদিকে মুম্বাই সিটির শুভাশিস বসু মূলত লেফটব্যাক। তা হলেও আক্রমণে যাওয়ার চেয়ে ঘর সামলাতেই বেশি অভ্যস্ত তিনি। তাই কোচ মাঝে মাঝে তাঁকে বামদিকে সেন্টারব্যাক হিসেবেও খেলিয়ে থাকেন।

বাকি থাকেন আনাস এডথোড়িকা। গত জানুয়ারিতে এশিয়া কাপে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে হুট করে অবসর নিয়ে বসেছিলেন কলকাতা এটিকের এ অভিজ্ঞ সেন্টারব্যাক। অবসর থেকে ফিরতে বেশি সময়ও নেননি। নতুন কোচের অধীনে নিয়মিত অনুশীলন করলেও মূল একাদশে সুযোগ হচ্ছিল না ; সন্দেহ-আদিলদের জন্যই। ম্যাচের আগে শোনা যাচ্ছিল, তরুণ নরেন্দ্র নন, বরং অভিজ্ঞ আনাসের ওপরেই ভরসা রাখতে যাচ্ছেন স্টিমাচ।

সেটাই হলো। আদিলের সঙ্গে রক্ষণ সঙ্গী হয়ে মাঠে নামলেন আনাস। কিন্তু তাতে আদিলের কী? সন্দেহ চোটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, কাঁধে এসে পড়েছে বাড়তি দায়িত্ব। সে বাড়তি দায়িত্ব কী অসাধারণভাবেই না পালন করলেন এ তারকা ডিফেন্ডার!

গত কয়েক মৌসুমে আইএসএলে ৪২ ম্যাচ খেলে ৫৩টা ইন্টারসেপশন করেছেন এ ডিফেন্ডার। গোল করতে হলে এই আদিলকেই বোকা বানাতে হতো বাংলাদেশকে। সাদ উদ্দীনের কল্যাণে একবার বোকা বানানোও গেল তাঁকে। কিন্তু এরপর আদিল যা করলেন, বহুদিন বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে আক্ষেপ হয়ে থাকবে।

আক্রমণভাগে বল পেয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবন। আলতো করে টোকা দিয়ে গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধুর মাথার ওপর দিয়ে বলটা পাঠালেন গোল বরাবর। যুবভারতীর গুটিকয়েক বাংলাদেশি সমর্থক তখন ভারতের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ার অপেক্ষায়। কিন্তু না, হলো না। একদম গোললাইনের ওপর থেকে বল ক্লিয়ার করে দলকে সে যাত্রায় উদ্ধার করলেন আদিল। বাংলাদেশি সমর্থকদের তা দেখে আক্ষেপ হলো, আরেকটু জোরে যদি টোকাটা মারতেন জীবন! আহা রে!

আক্ষেপের সেটাই শেষ নয়। এর পরেই এল সেই মুহূর্ত। ম্যাচের শেষ সময়ে কর্নার থেকে পাওয়া বল হেড করে জালে জড়ালেন সেই আদিল-ই। দুর্দান্ত সে হেড চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার।

রক্ষণভাগের এমন নেতাই তো চেয়েছিল এদিন ভারত!