ইয়াসিন খেললেন জীবনের সেরা ম্যাচ

এভাবেই মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বারবার ভারতীয় আক্রমণগুলো নস্যাৎ করে দিচ্ছিলেন ইয়াসিন খান। ছবি: ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টুইটার পেজ
এভাবেই মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বারবার ভারতীয় আক্রমণগুলো নস্যাৎ করে দিচ্ছিলেন ইয়াসিন খান। ছবি: ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টুইটার পেজ

আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো ছবিটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের হোম পেজে ঘুরছে। অনেকের প্রোফাইল পিকচারেও আপনার .. শেষ করার আগেই কড়া ডিফেন্ডারের ভঙ্গিতে ইন্টারসেপশন করে কথাটি কেড়ে নিয়ে ‘আমি ফেসবুক খুব বেশি ব্যবহার করি না। কী হয় , না হয়- ফলো করা হয় না।’

গতকাল কলকাতার যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইয়াসিনের দিকে বারবারই চোখ চলে যাচ্ছিল সবার। শক্তিশালী ভারতের আক্রমণগুলোকে বারবার ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন বলেই নয়, মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ নিয়ে যিনি বীরদর্পে লড়ে যাচ্ছেন, তাঁর দিকে সবার চোখ এমনিতেই চলে যায়।

ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় ফরোয়ার্ডের সঙ্গে হেডের টক্কর নিতে গিয়ে ইয়াসিনের কপাল ফেটে একাকার। রক্ত ঝরল তবুও দমলেন না, মাথায় লাগালেন ব্যান্ডেজ। হাতে তুলে নিলেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ম্যাচটা জিততে না পারলেও ১-১ গোলে ড্রয়ের এ ম্যাচে ইয়াসিন কিন্তু ঠিকই মন জয় করে নিয়েছেন সবার। ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা লিখেছে, ‘খেলার পঞ্চম মিনিটে মাথা কেটে যাওয়ার পর গোটা ম্যাচটাই ব্যান্ডেজ নিয়ে খেললেন ইয়াসিন। কিন্তু এটি তাঁর খেলায় কোনো ছন্দপতন ঘটাতে পারেনি। খুব সম্ভব বাংলাদেশের এই ডিফেন্ডার কাল তাঁর জীবনের সেরা ম্যাচটাই খেলেছেন। গোটা খেলায় ঠিক সময়মতো ট্যাকলগুলো করে গেলেন, হেড করে বল ওড়ালেন। সম্ভব সবকিছুই করেছেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে শরীর দিয়ে ঠেকালেন সাহালের একটু নিচু শট।’
গতকালকের ম্যাচটি ছিল নায়ক হয়ে ওঠার ম্যাচ। কিংবা খল নায়ক। কলকাতার বিখ্যাত যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইয়াসিন হয়ে উঠলেন অন্যতম নায়ক। নায়ক যে কেবল গোল করেই হওয়া যায় না। কখনো কখনো প্রতিপক্ষের আক্রমণগুলো ঠেকিয়েও হওয়া যায়, নায়ক হওয়া যায় বুক চিতিয়ে লড়ে, বীরত্ব দেখিয়ে—ইয়াসিন কাল সেটিই প্রমাণ করলেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এ ম্যাচ দিয়ে ইয়াসিন এখন রীতিমতো বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন।

ইয়াসিনের খেলায় যদি সৌন্দর্য খুঁজতে যান, তাহলে সেটি না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে খেলা যদি হয় যুদ্ধের ময়দান , এতে সবচেয়ে বড় বীরের নাম ইয়াসিন। ডার্টি ওয়ার্কও যে সৌন্দর্য ছড়াতে পারেন তা গতকালের ম্যাচই তো প্রমাণ। সেই সৌন্দর্যের আর সাফল্যের এক আশ্চর্য যুগলবন্দী ২৬ বছরের এই সেন্টারব্যাক।

সেন্টারব্যাক ইয়াসিনের মূল ক্যারিশমাটা কোথায় ? অনেক উঁচুতে ওঠে হেড করতে জুড়ি নেই তাঁর। ভারতীয় ফরোয়ার্ড সুনীল, মানভিরদের পা থেকে কতবার বল কেড়ে নিয়েছেন, সেগুলো চোখ এড়ায় কীভাবে! দুই পায়ে সব নিখুঁত ট্যাকল, সঙ্গে দুর্দান্ত কভারিং। আর দুই প্রান্ত থেকে ভয় ধরানো সব ক্রস যখন ভেসে এসেছে বক্সে, তখন চোখে পড়েছে তাঁর দূরদর্শিতা। সঙ্গে লড়াকু মনোভাব এবং প্রচণ্ড সাহস তো ছিলই। ডিফেন্ডারদের খেলার মধ্যেও যে একটু সৌন্দর্য থাকে তা ইয়াসিনের প্রতিটা ট্যাকল ও ইন্টারসেপশনে ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে কখনো কোনো শিষ্যের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স নিয়ে কথা বলেন না। টিম হোটেলে বসে আজও বললেন ইয়াসিনকে নিয়ে। গতকালের অমন পারফরমেন্সের পর এই ইংলিশ কোচ আর চুপ থাকেন কী করে! শিষ্যকে ভাসিয়ে দিলেন প্রশংসায় , ‘নিঃসন্দেহে গতকালের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ইয়াসিন। ভারতীয় ফরোয়ার্ডরা ওকে কখনোই দুর্বল করতে পারেননি। আমার দেখা সেরা ম্যাচ খেলেছে সে।’

ইয়াসিনরা এভাবে বারবার জ্বলে উঠলেই তো বদলে যায় বাংলাদেশের ফুটবল।