এই বাংলাদেশ অনেক দূর যাবে

>সাদা চোখে একটি গোলই। কিন্তু পরশু সন্ধ্যায় সাদ উদ্দিনের গোলকে শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিউজ ফিডই বলে দিচ্ছে, যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতের বিপক্ষে করা গোলটি তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অন্য উচ্চতায়। জাতীয় দলের জার্সিতে এটিই তাঁর প্রথম গোল। বল জালে জড়ানোর আগে-পরে মনের মধ্যে কী খেলা করেছে, গতকাল সকালে কলকাতার টিম হোটেলের লবিতে বসে তা শোনালেন বাংলাদেশ দলের উইঙ্গার—
নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান সাদ উদ্দিন। ছবি : এএফপি
নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান সাদ উদ্দিন। ছবি : এএফপি

প্রশ্ন: জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোল করায় আপনাকে অভিনন্দন...
সাদ উদ্দিন: বলতে পারেন স্বপ্নের মতো এক গোল। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে তাদের মাঠে গোল করার আনন্দ অন্য রকম। আমি চেয়েছিলাম এই ম্যাচে একটা কিছু করতে। আল্লাহর ইচ্ছায় সেটা পেরেছি।

প্রশ্ন: আপনার গোলে তো ভারতের বিপক্ষে জিততেও পারত বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তে জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় রাতে নিশ্চয়ই ঘুমটা ভালো হয়নি...
সাদ: ঘুম ভালোই হয়েছে। তবে অবশ্যই খারাপ লেগেছে। একটা সময় তো মনে হয়েছিল, আমরা জিতেই যাচ্ছি। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ১-১ এ ড্র করলাম। আসলে তখন আমরা একটু বেশি চাপ নিয়েছিলাম। শেষ ১০ মিনিট ওরা খুব আক্রমণ করছিল। যেকোনো মুহূর্তে আরও একটি গোল হজম করতে পারতাম আমরা। ডিফেন্সটা খুব ভালো করেছিলাম বলে আর গোল খাইনি।

প্রশ্ন: ম্যাচ শেষ। সত্যি করে বলুন তো, ভারতের বিপক্ষে হার এড়ানোর আত্মবিশ্বাস ছিল?
সাদ: ড্র করা সম্ভব, এটা ভেবেছিলাম। তবে আমরা সবাই চাচ্ছিলাম জিততে। হারের কথা মাথায় ছিল না। ড্র যে করতে পারব, সে বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জেতাটা কঠিন। তাদের মাঠ, তাদের অনেক দর্শক। তবে আমরা জেতার সুযোগ পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন: চোট থেকে ফিরে সরাসরি জাতীয় দলের একাদশে। এই নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে প্রচুর। কেমন লেগেছিল তখন?
সাদ: মাঝে অনেক দিন আমি চোটে ছিলাম। অনেক ম্যাচ খেলতে পারিনি। চোট থেকে ফেরার পর আমি আসলে সব ম্যাচেই খেলার সুযোগ পেয়েছি। ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলেছি। কাতারের বিপক্ষেও খেলেছি। এই নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টায় ছিলাম, কিন্তু গোল পাচ্ছিলাম না। অবশেষে পেলাম।

প্রশ্ন: জামাল ভূঁইয়া ফ্রি কিক নেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে কোনো আলাপ হয়েছিল? মানে কোনো আকার-ইঙ্গিত?
সাদ: আমি তাঁকে আগেই বলেছিলাম। জামাল হাত তুলেছিলেন। তার মানে সেকেন্ড পোস্ট। জামাল যখন কিক নিতে যাচ্ছিলেন তখন আমি সেকেন্ড বারে চলে যাই। তাঁর ফ্রি কিকগুলো অনেক ভালো হয়। মোটামুটি বোঝা যায়, তিনি কোন জায়গায় বল ফেলতে যাচ্ছেন। আগেই ওই জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। চোখের ইশারা ছিল। আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল লক্ষ্য করছিলাম। যখন গোলকিপার ফ্লাইট মিস করছে, তখন আমি বল পেয়ে যাই। তারপরও বলটা বাইরে চলে যেত যদি আমি ফ্লাইং হেড না দিতাম।

প্রশ্ন: বল জালে জড়ানোর পর উল্লাস করতে একটু সময় নিয়েছেন। গোল করার পর কি বিশ্বাস হচ্ছিল না?
সাদ: আসলে আমি তো হেড দিয়ে মাটিতে পড়ে গেছি। মাথা তুলে দেখি বল জালে। খেয়াল করার চেষ্টা করছিলাম যে অফসাইড হলো কি না। তারপর তো দেখলাম গোল হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনীর হয়ে ফুলব্যাক পজিশনে খেলেন। জাতীয় দলে খেলছেন উইঙ্গার বা ফরোয়ার্ড হিসেবে। খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হয় না?
সাদ: আসলে আমি তো রাইট উইংয়ে খেলি। রাইট ব্যাক আর রাইট উইংয়ে খেলা প্রায় একই। তাই খেলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দুই-এক ম্যাচ খেললে ঠিক হয়ে যায়।

প্রশ্ন: এত বেশি দর্শকের সামনে আপনাদের খেলার সুযোগ হয় না। ঘাবড়ে যাননি তো!
সাদ: অন্যরা কী করেছে আমি জানি না। আমি কিন্তু উপভোগই করেছি। মনে হয় সবাই-ই উপভোগ করেছে। এ রকম দর্শকের সামনে কখনো খেলিনি। তবে সিলেটে একবার এর কাছাকাছি দর্শকের সামনে খেলেছিলাম।

প্রশ্ন: ম্যাচের আগে কোচ জেমি ডে টিম ব্রিফিংয়ে কী বলেছিলেন?
সাদ: অন্য ম্যাচের মতোই অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন মাঠে অনেক দর্শক, ম্যাচটা উপভোগ করো। সবাই মাঠে কঠোর পরিশ্রম করো, লড়াই করো। ভারত কেন, এর চেয়ে ভালো ভালো দলের বিপক্ষেও ভালো ফলাফল সম্ভব।

প্রশ্ন: বিরতিতে কী বলেছিলেন কোচ? তখন তো আপনারা এক গোলে এগিয়ে...
সাদ: কোচ এসে বলেন, তোমরা দারুণভাবে প্রথমার্ধ শেষ করেছ। দ্বিতীয়ার্ধে একটু সতর্ক থাকতে হবে। গোল হজম করা যাবে না। আমরা সুযোগ পাব, যেকোনো মুহূর্তে গোল করতে পারব।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে?
সাদ: অবশ্যই, আমাদের ফুটবল কিন্তু এগোচ্ছে। তিন বছর আগেও ভুটানের বিপক্ষে খেলতে আমাদের কষ্ট হতো। এখন কিন্তু আমরা ভুটানের সঙ্গে ভালোভাবেই জিতছি। দলটা ধীরে ধীরে আরও ভালো অবস্থায় যাচ্ছে। যদি দলটা একসঙ্গে থাকে, এই কোচ যদি থাকেন, দিনে দিনে আরও ভালো হবে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করলে এই বাংলাদেশ অনেক দূর যাবে।