১০টি ফেরারি বা ২০টি হীরার ঘড়ি দিয়ে কী হবে

দুর্দান্ত ফুটবলার মানে, মানুষ হিসেবে আরও দুর্দান্ত তিনি। ছবি: রয়টার্স
দুর্দান্ত ফুটবলার মানে, মানুষ হিসেবে আরও দুর্দান্ত তিনি। ছবি: রয়টার্স

লিভারপুলের ‘ত্রিফলা’র একজন তিনি। যদিও আলোচনায় বা খ্যাতিতে মোহাম্মদ সালাহর ধারে-কাছে নেই। রবার্তো ফিরমিনোর মতো আড়ালে পড়ে থাকেন। কিন্তু লিভারপুল সমর্থক কিংবা নিরপেক্ষ—যাকেই জিজ্ঞেস করুন না কেন, সাদিও মানের গুরুত্ব অস্বীকার করবেন না কেউই। এক যুগ পর লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পেছনে তাঁর অবদানই বেশি। ফুটবল মাঠে সেনেগালের এই ফরোয়ার্ড সেরাদের একজন। আর মানুষ হিসেবে তিনি অনন্য।

লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে গত মৌসুম শেষ করা মানে এবারও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ১১ ম্যাচেই ৮ গোল করেছেন, করিয়েছেন ২ গোল। শোনা যায়, লিভারপুলের হয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে জিনেদিন জিদানের মন কেড়ে নিয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদে নিয়ে যেত চান তাঁকে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে খেলার সুবাদে নামের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর অর্থবিত্তও যোগ হচ্ছে মানের অর্জনে। কিন্তু সেটা যেভাবে খরচ করেন মানে সেটাই তাঁকে অনন্য করে তুলছে।

যুগ যুগ ধরেই তারকা ফুটবলাররা চোখ কপালে তোলা অর্থ আয় করেন। তাদের খরচের ধরনটা অবশ্য ব্যতিক্রমী হয়। কেউ গাজ্জা কিংবা রোনালদিনহোর মতো অনিয়ন্ত্রিত জীবনে সব খুইয়ে বসেন, কেউবা জেরার্ড পিকের মতো উদ্যোক্তা বনে যান। তবে অধিকাংশই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা নেইমার জুনিয়রের মতো। নিজের আয় বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ করেন, আবার শখ আহ্লাদও পূরণ করেন। বিলাসবহুল গাড়ি, ব্র্যান্ডের ঘড়ি, নিত্যনতুন গেজেট। আরেকটি ধরন আছে। যারা নিজেদের সাফল্য বিলিয়ে দিতে চান অসহায়দের জন্য।

ঘানার এক সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মানে। সেখানেই বলেছেন, বিলাসী পণ্য কিনে দেখনদারি করার কোনো অর্থ খুঁজে পান না মানে, ‘দশটা ফেরারি, ২০টা হীরার ঘড়ি বা দুইটা প্লেন কেন কিনতে চাইব আমি? এ জিনিস আমার কী কাজে লাগবে? পৃথিবীরই-বা কোন কাজে আসবে? আমি এক সময় ক্ষুধার্ত জীবন কাটিয়েছি এবং আমাকে মাঠে কাজ করতে হতো। আমি সে কঠিন সময় পার করে এসেছি, খালি পায়ে ফুটবল খেলেছি। আমার শিক্ষা ছিল না, অনেক কিছুই ছিল না। কিন্তু ফুটবলের সুবাদে এখন আমি যা আয় করি তা দিয়ে আমার দেশের মানুষের উপকার করতে পারি।’

বহুদিন ধরেই সেনেগালের জীবন মানের উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানে। এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের মানুষদের নিজের সৌভাগ্যের অংশ করতে। এই মহৎ লক্ষ্য সামনে আছে বলেই বিলাসিতা করার উৎসাহ পান না মানে, ‘আমি স্কুল বানিয়েছি, একটি স্টেডিয়ামও বানিয়েছি। যারা ভয়ংকর দরিদ্র তাদের আমরা খাবার, কাপড়, জুতা দিয়েছি। এ ছাড়া সেনেগালের খুবই দরিদ্র এক অঞ্চলের প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ৭০ ইউরো দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটা তাদের পরিবারের মাসিক আয়ে অবদান রাখে। আমার বিলাসী গাড়ির দরকার নেই, আলিশান ঘরের দরকার নেই, ঘুরতে যাওয়া কিংবা প্লেন কেনারও দরকার নেই। এর চেয়ে জীবনে যা পেয়েছি তার কিছুটা অন্যদের দিতে পারলেই আমি তৃপ্ত।’