'যুদ্ধ' করতে নেমেছিল দুই কোরিয়া

মাঠে যেন লড়াইয়ে নেমেছিল দুই দল। ছবি: রয়টার্স
মাঠে যেন লড়াইয়ে নেমেছিল দুই দল। ছবি: রয়টার্স

গত মঙ্গলবার অদ্ভুত এক খেলা হলো পিয়ংইয়ংয়ে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলতে নেমেছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচে কেউ জেতেনি, কোনো গোল হয়নি। অবশ্য গোল হলেও কোনো লাভ হতো না। সে গোল উদ্‌যাপন করার দর্শকই যে ছিল না। আর বাইরে থাকা দর্শকও যে গোল উদ্‌যাপন করতে পারত সে উপায়ও ছিল না। উত্তর কোরিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না মাঠে। এমনই অবস্থা যে দেশে ফিরে দক্ষিণ কোরিয়ানরা বলছে, মনে হচ্ছে যুদ্ধ করে ফিরেছেন তারা।

দুই দেশের মধ্যে সাময়িক বন্ধুত্বের উষ্ণ সম্পর্কে চিড় ধরে, বৈরী শীতলতা ঢুকে পড়েছে আবার। সে কারণেই দলের সফর সঙ্গী হয়ে যাওয়া ফেডারেশনের সহসভাপতি চোই ইয়ং-ইল বলেছেন, ‘ম্যাচটা ছিল যুদ্ধের মতো। আমি যখন উত্তর কোরীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলাম ওরা আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছিলই না, উত্তর দেওয়া তো দূরে থাক!’ টটেনহাম তারকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার অধিনায়ক সন হিউয়েং-মিনও প্রতিপক্ষের আচরণে বিস্মিত, ‘ম্যাচ এতটা আগ্রাসী ছিল যে কোনো চোট ছাড়া ফিরতে পেরেছি এটাই বড় সাফল্য। উত্তর কোরিয়ার খেলোয়াড়েরা সবাই খুবই আগ্রাসী ছিল... অনেক বাজে গালি দিচ্ছিল।’

মাঠে সাধারণ দর্শক না থাকলেও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। এদের মাঝে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত খালি মাঠ নিয়ে রসিকতা করে টুইটও করেছেন, ‘শিশুদের সামনে মারামারি করতে নেই। ও, আজ তো কেউই নেই মাঠে।’ দুই দলের খেলার মাঝে অনেক উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু দর্শক প্রায় শূন্য। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও ছিলেন এই দর্শকদের মাঝে। এমন শূন্য গ্যালারি দেখে নিজের ‘বিস্ময়’ ও ‘হতাশা’ লুকাননি সভাপতি।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কাউকে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমনকি সরাসরি কোনো টিভিতেও দেখানো হয়নি। কোরিয়ার কেন্দ্রীয় বার্তা সংস্থা এ ম্যাচের সারাংশ টেনেছে এভাবে, আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের খেলাটি সমতায় শেষ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াকে ম্যাচের আগেই দর্শক না আনার জন্য বলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার স্থানীয় দর্শকও যে এমন এক ম্যাচ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে সেটা কেউ জানত না। দক্ষিণ কোরিয়ার ফেডারেশন সহসভাপতি বলেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ৫০ হাজার লোক ম্যাচ দেখবে কিন্তু কেউ এল না।’ দক্ষিণ কোরিয়াকে পুরো ম্যাচের একটি ডিভিডি দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দেশে গিয়ে টিভিতে সেটা সম্প্রচার করতে পারে। কিন্তু সেটার মান নাকি টিভিতে সম্প্রচার করার মতো ভালো ছিল না।

এমন ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ আবহ অবশ্য মেনে নেওয়াই উচিত। কারণ কাগজে-কলমে কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এখনো যুদ্ধ চলছে। ১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হয়েছে বটে কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি কখনো। নিজেদের স্টেডিয়ামে তাই দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংগীত বা পতাকা কোনোটির উপস্থিতিতেই রাজি হয়নি উত্তর কোরিয়া।