এ বছর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সঙ্গেই বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ফুটবলে সুদিন ফেরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন সাদ উদ্দিন-জামাল ভূঁইয়ারা। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের ফুটবলে সুদিন ফেরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন সাদ উদ্দিন-জামাল ভূঁইয়ারা। ছবি: এএফপি
>

ফুটবলে বাংলাদেশ কোথায় আর কোথায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা! কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো ২০১৯ সালে এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পারফরম্যান্সে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। উড়িয়ে না দিয়ে পরিসংখ্যানের দিকে একবার তাকান...

শক্তি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সফলতায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাই চলে না। অনেকে তো মনে করতে পারেন ধৃষ্টতা। কোথায় বাংলাদেশ আর কোথায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা! এ নিয়ে তর্ক চলে না। কিন্তু এ কথা তো সত্য, দল যেমনই হোক খেলাটা শেষ পর্যন্ত ফুটবলই। খেলার মঞ্চে যত ফারাকই থাক, প্রতিপক্ষের মধ্যে পার্থক্যই হোক শেষ পর্যন্ত কিন্তু খেলেই জিততে হয়। আর এ হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল দল চলতি বছর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে তেমন পিছিয়ে নেই!

বিস্ময়ে ‘থ’ বনে যাওয়ার আগে পুরোটুকু পড়ুন। আগে বাংলাদেশ ফুটবল দলের হিসেবে আসা যাক। চলতি বছরের এ সময় পর্যন্ত ৮টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে ৪ ম্যাচ, ২ হার ও ২ ড্র। সব মিলিয়ে জয়ের হার ৫০ শতাংশ। এবার আসা যাক লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তির পারফরম্যান্সে। এ পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। জিতেছে ৭ ম্যাচ, হার ৩টি ও ড্র করেছে বাকি ৩ ম্যাচে। এ বছর জাতীয় দলের হয়ে লিওনেল মেসিদের জয়ের হার ৫৩.৮৪ শতাংশ। অন্তত পরিসংখ্যান বলছে জয়ের হারে আর্জেন্টিনার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

ব্রাজিল বছরের এ পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলেছে আর্জেন্টিনার চেয়ে। ১৪টি ম্যাচ খেলেছে তিতের দল। এর মধ্যে জয়ের মুখ দেখেছে ৭ ম্যাচে। ড্র করেছে ৬ ম্যাচ। বাকি ১ ম্যাচে হেরেছে। অর্থাৎ ব্রাজিলের জয়ের হার ৫০ শতাংশ—যা বাংলাদেশের সমান। হ্যাঁ, দুই লাতিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বেশি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের চেয়ে। আর ধারে-ভারে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার।

চলতি বছরের পরিসংখ্যান বাংলাদেশের ফুটবলে সুদিন ফেরারও ইঙ্গিত। আর তা মুখ ফুটে বলেছেন গত দুই দশক ধরে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা খেলা ক্রিকেটের এক বড় তারকাই। বাংলাদেশ ফুটবল দল সবশেষ ম্যাচে ভারতের মাটিতে ১-১ গোলে ড্র করার পর টুইট করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমাদের ফুটবল দলের লড়াইয়ের স্পিরিট দেখে মুগ্ধ। আশা করি এটা আমাদের ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা করবে।’

নতুন যুগের সূচনা করেছে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে ভারতের ঘরে ঢুকে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনার পর ফুটবল নিয়ে মানুষের ঢাকা পড়া আগ্রহটা কিন্তু ফের জেগেছে। গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টাইমলাইনই তার সাক্ষী। ইংলিশ কোচ জেমি ডে-র অধীনে কম্বোডিয়ার মুখোমুখি হয়ে এ বছরের অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের মাঠে গত মার্চের সেই প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর গত জুনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে লাওসের মাঠ থেকেও একই ব্যবধানের জয় তুলে নেয় জামাল ভূঁইয়ার দল। ঘরের মাঠে ফিরতি লেগটি গোলশূন্য ড্র হয়।

সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে তাজিকিস্তানে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ১-০ গোলের হার নিয়ে ফিরতে হয় জাতীয় দলকে। সে মাসেরই ২৯ সেপ্টেম্বর ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৪-১ গোলের জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর এ মাসের শুরুর দিকে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলের জয় তুলে নেন জামাল ভূঁইয়ারা। বাংলাদেশের ফুটবল যে সত্যিই ভালো করতে শুরু করেছে তা বোঝা গেছে শেষ দুটি ম্যাচে।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে গত ১০ অক্টোবর এশিয়ার সেরা দল কাতারের মুখোমুখি হয়ে ২-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন দ্বিতীয়ার্ধে কাতারকে কতটা কোণঠাসা করে ফেলেছিল স্বাগতিকেরা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেদিন হার দেখলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। সবশেষ ম্যাচটি ছিল র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে তাঁদেরই মাটিতে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের এ ম্যাচে জয় দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ২ মিনিট আগে সমতায় ফিরে কোনোমতে হার এড়ায় ভারত। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক হারটা সেদিন মাঠের খেলায় স্বীকার করে নিতে দেখা গেছে সুনীল ছেত্রীদের।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলার মান ও প্রতিপক্ষ বিচারে বাংলাদেশের এ পারফরম্যান্সের হয়তো তুলনা চলে না। কিন্তু এ তিনটি দলের পারফরম্যান্স পাশাপাশি রেখে দেখুন, পরিসংখ্যান মিথ্যে বলে না!