ভারতের পেস আক্রমণ এত ভয়ংকর

বুমরা-শামিদের সামলানো বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। ফাইল ছবি
বুমরা-শামিদের সামলানো বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। ফাইল ছবি

সে এক দিন ছিল ক্রিকেটে। সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার। এদিকে লিলি-থমসন তো ওদিক রিচার্ড হ্যাডলি। এই প্রান্তে ইমরান তো ওই প্রান্তে ইয়ান বোথাম। এদের দেখেও অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের মনে কোনো ভাবান্তর হতো না। হবে কীভাবে? দলে যখন মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার আর ম্যালকম মার্শাল তখন আর প্রতিপক্ষের পেস আক্রমণকে গুরুত্ব দেওয়ার কী দরকার!

এই চতুষ্টয়ের নাম জোরে উচ্চারণ করে এবার ফিসফিস করে শুনিয়ে দেওয়া যাক আরও কিছু শব্দ—ইয়ান বিশপ, কলিন ক্রফট, প্যাট্রিক প্যাটারসন, কার্টলি অ্যামব্রোস এবং কোর্টনি ওয়ালশ। একটি দলের লাল টুকটুকে বলটি মাত্র এক দশকের মাঝে ভাগাভাগি করে আক্রমণে নেমেছিলেন এঁরা! এমন পেস আক্রমণ পাওয়ার চেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছে। এমন এক আক্রমণ যাদের দেখলে ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের চোরা স্রোত বয়ে যেত। অজান্তেই পা চলে যেত ব্যাকফুটে। স্টান্স নেওয়ার আগে দেহের বিভিন্ন প্রান্তের গার্ডগুলো দেখা হতো পরখ করে। সেসব দিন আর ফিরবে না কখনো। তবে সে অনুভূতি ফিরে আসা সম্ভব। অন্তত কদিন আগেই ব্রায়ান লারার মনে হয়েছিল ফিরে এসেছে আশি ও নব্বই দশকের সে পেস আক্রমণ।

ভারত দল কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে এসেছে। যশপ্রীত বুমরার নেতৃত্বে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের আজীবনের দুঃস্বপ্নের অংশ হয়ে ফিরে এসেছে ভারতের পেস আক্রমণ। নিজেদের মাটিতে তাদের এভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ কোণঠাসা করতে পারেনি কোনো পেস আক্রমণ। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি লারার মনে হয়েছিল এদের খেলা অসম্ভব, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে যা দেখেছিলাম তাতে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম...এটা ছিল বিশেষ কিছু। ওদের ফাস্ট বোলারদের দেখা মনে হচ্ছিল এদের খেলা অসম্ভব।একাদশের বাইরে যারা আছে, তাদের দেখে কিছুক্ষণের জন্য আশি ও নব্বইয়ের দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথাই মনে হয়েছিল আমার। একটা দল কত ভালো সেটা বোঝা যায় তাদের বিকল্প খেলোয়াড় দেখলেই।’

শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট নয়, ভারতের পেস আক্রমণ এখন তাদের নিজেদের মাটিতেও ভয়ংকর। কেউ যদি বুমরাকে সামলেও নেন, তাঁর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার আর উমেশ যাদব। ভারত সফরে এসে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন পেস আক্রমণের কারণেই প্রতিপক্ষের মাঠেও শক্তি হয়ে উঠছে ভারত, লারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন সেটা, ‘আমরা সবাই জানি ঘরের মাঠে ওদের সবাই সম্মান দেখায়, সফরে ভারতকে শ্রদ্ধা করত না কেউ। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যেখানেই খেলুক ওদের শক্তি মেনে নিচ্ছে সবাই।’

এ কারণেই অতীতে বিশ্বের সেরা সব ব্যাটসম্যান উপহার দিয়েও যা করতে পারেনি ভারত, সেটা এবার করতে পারবে। লারার মতে তা হলো বিশ্বকে শাসন করা, ‘৭০ ও ৮০-র দশকে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ’৯০ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অস্ট্রেলিয়া। ভারতেরও এখন সে ক্ষমতা আছে।’