১৪ বছরে বাবা হওয়াটাই অনুপ্রেরণা ওয়েসলির

দারুণ ফর্মে থাকা ওয়েসলি জানালেন তাঁর অনুপ্রেরণার কথা। ছবি: টুইটার
দারুণ ফর্মে থাকা ওয়েসলি জানালেন তাঁর অনুপ্রেরণার কথা। ছবি: টুইটার

তাঁর সঙ্গে ক্রিস্টিয়ান বেনটেকের তুলনা করা হয়। অ্যাস্টন ভিলার জার্সিতে গোলের পর গোল করে নাম কামানো এই স্ট্রাইকারের সঙ্গে বেশ মিল ওয়েসলি মোরায়েসের। দুজনের উচ্চতায় অদ্ভুত মিল, ৬ ফিট ৩ ইঞ্চি উচ্চতাকে দুজনেই ভালো কাজে লাগাতে পারেন। তবে ওয়েসলির সঙ্গে বেনটেকের চেয়ে বহু, বহু ব্যবধানে এগিয়ে থাকা একজনের তুলনা করা হয়, তিনি গারিঞ্চা! ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার বলেই যে গারিঞ্চার সঙ্গে তুলনা হচ্ছে তা নয়। বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির দুই পায়ের একটি বৈচিত্র্য ছিল। একটি পা ছিল অন্য পায়ের চেয়ে ৬ সেন্টিমিটার ছোট। অ্যাস্টন ভিলার নতুন গোল ভরসারও দুই পায়ে বৈসাদৃশ্য আছে। তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবধানটা তিন সেন্টিমিটার।

ওয়েসলির প্রিমিয়ার লিগের আগমনের গল্পে প্রাধান্য পেয়েছিল অন্য একটি প্রসঙ্গ। ভিলার দলবদলের রেকর্ডভাঙা ফরোয়ার্ডকে নিয়ে অধিকাংশ খবরের শিরোনামেই জোর দেওয়া হয়েছিল, ১৫ বয়সেই সন্তানের জনক হওয়ার বিষয়টি। ২২ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার বলছেন, কম বয়সে বাবা হওয়ার সংগ্রামই তাঁর লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা।

ওয়েসলির গল্পটা আসলেই বিস্ময়কর। বাবা ছিলেন ফুটবলার। কিন্তু ফুটবলীয় দক্ষতা খুব একটা বলার মতো না হওয়ায় সাচ্ছল্য আসেনি। ওয়েসলির বয়স যখন নয়, তখন মস্তিষ্কে টিউমারে তাঁর বাবা মারা যায়। সে ধাক্কা সামলে নেওয়ার আগেই ১৪ বছর বয়সে প্রথম সন্তান হওয়ার খবর পান। ১৫ বছরে পুত্র ইয়ানের জন্মের পরের বছরই কন্যা মারিয়ার জন্ম। দুই নারীর ঘরে জন্ম নেওয়া এ দুই সন্তান ও ক্যারিয়ারের শুরুতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো ক্লাবের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান হওয়াটাই এত দূর এনেছে ওয়েসলিকে।

কৈশোরেই পিতা হওয়ার পর কারখানায় চাকরি করে দুই সন্তানের খরচ জোগাতেন ওয়েসলি। সে সঙ্গে নিজের ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছাও বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর সে কাজে সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন ওয়েসলির মা। স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে কথোপকথনে বলেছেন, ‘যখন বাবা মারা গেল, তখন খুব কঠিন সময় গিয়েছে। কারণ সব ভাইদের পালনের কাজটা মাকে একাই করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি ঠিকই কাজ করেছেন এবং আজ আমি যে এখানে তার সবই তাঁর কারণে। যখনই অনুশীলন শেষ হয় আমি মাকে ফোন দিই কারণ সেই আমার সবকিছু। আমার খেলার পেছনে মাই সবকিছু করেছে, তাই এখানে আসার পর প্রতিদিন ঘরে ফিরে তাঁকে ফোন দিই।’

এ মৌসুমে ভিলার হয়ে চার গোল করা ওয়েসলি ১৯ বছরেই ইউরোপে এসেছেন। ক্লাব ব্রুগের হয়ে তিনটি সফল মৌসুম শেষে প্রিমিয়ার লিগে এসেছেন। আর এর পেছনে পিতৃত্বের ভূমিকা দেখেন ওয়েসলি, ‘যখন ১৪ বছর বয়স তখন আমার প্রথম সন্তান জন্মায়। এটা খুব কঠিন ছিল তখন কারণ তখনই মাত্র পেশাদার ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছি। দিনে কাজ করেছি এবং সন্ধ্যায় অনুশীলন করেছি। যখন খেলই তখন পরিবারের কথা ভেবে খেলি, আমার বাচ্চা, আমার মা, সবার কথা ভাবি।’

দুই পায়ের অসামঞ্জস্য প্রসঙ্গ উঠলেই হাসিতে উড়িয়ে দেন ওয়েসলি। ওভাবেই জন্ম নেওয়া এই ফুটবলারের কাছে এটা কোনো বাঁধাই নয়, ‘যখন অতীত নিয়ে ভাবি, ভাবি দলগুলো যখন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল, তখন বর্তমান নিয়ে তৃপ্ত বোধ করি। আমি জানি না আর কী বলব, আমার পা সব সময় এমন ছিল। কখনো ব্যথা অথবা অন্যরকম বোধ করিনি। আমি এভাবেই খেলে যেতে চাই।’