৪ গোলে জিতেও অতৃপ্ত মারুফ

দুর্দান্ত এক গোল করেছেন ইয়াছিন আরাফাত। ছবি: প্রথম আলো
দুর্দান্ত এক গোল করেছেন ইয়াছিন আরাফাত। ছবি: প্রথম আলো

মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের কোচ মোহামেদ হামিদকে খুব বিমর্ষ লাগল। লাগারই কথা। আজ চট্টগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের প্রথম ম্যাচেই তাঁর দল ৪-১ গোলে উড়ে গেছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে। অথচ এই দলটি কিনা টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন! তা চ্যাম্পিয়নদের এত বড় হার কেন? মাঠের খেলার মনে হয়েছে প্রস্তুতি ভালো নয় দলটির। কোনো রকমে এসে নেমে পড়েছে মাঠে।

লম্বা ভ্রমণক্লান্তিকেও দায় দিয়েছেন ক্লাবটির কোচ, ‘আমরা এখানে এসেছি মাত্রই। লম্বা ভ্রমণ শেষে আমরা ক্লান্ত ছিলাম। প্রস্তুতিও নিতে পারিনি ঠিকমতো। প্রথম ১০ মিনিটেই ওরা ম্যাচটা নিয়ে যায় আমাদের হাত থেকে। তবে এটাই শেষ নয়; আরও দুটি ম্যাচ আছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’

প্রথম ম্যাচ হেসেখেলে জিতে চট্টগ্রাম আবাহনীর সমর্থকেরা খুব খুশি। কোচ মারুফুল হক অবশ্য পুরোপুরি খুশি নন, ‘আমরা বড় জয় পেয়েছি ঠিক; তবে আশানুরূপ খেলতে পারিনি। মাত্র ৬০ ভাগ খেলতে পেরেছি। ছয়জন ফুটবলার দেরিতে যোগ দেওয়ার দলীয় সমন্বয় করে ওঠা সম্ভব হয়নি।’ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার কথা, ‘বড় জয়ে শুরু করা অবশ্যই দারুণ ব্যাপার। আমরা এখন চোখ রাখছি সামনে।’ সামনে মানে ৩০ অক্টোবর তৃতীয় শেখ কামাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ ও অধিনায়কের কথায়ও ছিল ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘আমরা এই টুর্নামেন্টের শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে চাই।’ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও শিরোপা জয়ের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। সে পথে বড় জয় দিয়ে যাত্রা, চট্টগ্রাম আবাহনী আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে অনেক।

২০১৫ সালের প্রথম শেখ জামাল ক্লাব কাপ জেতে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। ফাইনালে ৩-১ গোলে জয়, যেটি ছিল কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় আসরে স্বাগতিক দল বিদায় নেয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার পোচন এফসির কাছে হেরে। এবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আবার কাপ জয়ে বদ্ধপরিকর চট্টগ্রাম আবাহনী। প্রথম ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীর পক্ষে অবশ্যই কাপ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

শুরু থেকেই দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে চট্টগ্রামের দলটি। অষ্টম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আরিফুলের কাট ব্যাকে ডান পায়ের শটে বল জালে পাঠান নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ। একাদশ মিনিটে বাঁ থেকে জাতীয় দলের তরুণ ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাতের বাঁকানো শটে ২-০। ৪০তম মিনিটে ৩-০। সোহেল রানার বাড়ানো বলে ৩-০ করেন ম্যাথিউর প্লেসিং। ৭৫ মিনিটে ইউরোপা কাপে খেলা মন্টেনেগ্রোর লুকা রোতকোভিচ করেন ৪-০। ৮৭ মিনিটে মালদ্বীপের ইসমাইল ইসার গোলে ব্যবধান কমেছে।

সাইফ স্পোর্টিংয়ের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, একই দলের ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাত, রিয়াদুল হাসানদের দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। জাতীয় দলের পাঁচজন ফুটবলার খেলছেন এই দলে। নতুন রূপে, নতুন চেহারায় চট্টগ্রাম আবাহনী বল পজেশনে এগিয়ে থেকে সহজ জয়ই তুলে নিয়েছে। মালদ্বীপের দলটিতে বিদেশি মাত্র একজন। তাঁকে একাদশে রাখা হয়নি। মালদ্বীপ জাতীয় দলের মাত্র দুজন খেলোয়াড় আছেন। ‘ভ্রমণ ক্লান্তিতে’ খেলোয়াড়দের পায়ে গতিটা ছিল না এই ম্যাচে। তবে স্কিলে অনেক ভালো। সমস্যা হয়েছে, ওপরে বিদেশি না থাকায়। আজকের দিনে বিদেশি ফুটবলার ছাড়া টক্কর মারা কঠিনই। তাও আবার শক্তিশালী স্বাগতিক দলের সঙ্গে! সেটা ভালোভাবেই বুঝল চ্যাম্পিয়নরা। ৪ গোলে জিতেও মারফুল হকের অতৃপ্তিটা বলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী অনেক দূর যাবে।