তরুণ হাতিতে পিষ্ট মোহনবাগান

শেষ মুহূর্তের গোলে মোহনবাগের মতো দলকে হারিয়ে দেওয়ার আনন্দ ইয়ং এলিফ্যান্টের। ছবি: সৌরভ দাশ
শেষ মুহূর্তের গোলে মোহনবাগের মতো দলকে হারিয়ে দেওয়ার আনন্দ ইয়ং এলিফ্যান্টের। ছবি: সৌরভ দাশ

১৩০ বছরের পুরোনো ক্লাব মোহনবাগানের কাছে একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতা এমন কিছু নয়। কিন্তু ছোট কোনো দলের কাছে হার অনেক বড় যন্ত্রণার। আজ সেই যন্ত্রণা নিয়েই চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ছেড়েছে কলকাতার দলটি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে আজ মোহনবাগানকে হারিয়ে দিয়েছে পুঁচকে দল লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্ট। যে দলের বয়স মাত্র ৪ বছর। আই লিগের পঞ্চম দল মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে শেখ কামাল টুর্নামেন্ট শুরুতেই অঘটন ঘটিয়েছে ‘তরুণ হাতির’ দল।

ইয়ং এলিফ্যান্টের কোচ সালভারাজ খুব খুশি। ম্যাচের পর মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘আমরা রাতটা কখনো ভুলব না। আমার ছেলেদের অনেক উজ্জীবিত করবে এই জয়। ওরা দারুণ ফুটবল খেলেছে।’ হতাশ মোহনবাগানের প্রধান কোচ হোসে অ্যাহ্ননিও ভিকুনা নিজেকে শক্ত রাখতে চাইলেন, ‘প্রথমার্ধের শেষ ২০ মিনিট আমরা ভালো খেলতে পারিনি। তবে আমরা ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করেছি। ওরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে জিতে গেছে।’ তারপর যোগ করেন, ‘কেউই ধারণা করেনি আমরা এই ম্যাচ হারব। কিন্তু হেরেছি এটাই সত্য। পেনাল্টি নষ্ট না করলে আমরা জিততে পারতাম। তখন আমাকে হতাশা নিয়ে কথা বলতে হতো না।’

অধিনায়ক গুরজিন্দর সিংও শক্ত থাকতে চাইলেন। তাঁর কথা, ‘আমরা আশা করি সেমিফাইনালে যাব। এখনই হতাশার কিছু নেই। আমাদের হাতে আরও দুটি ম্যাচ আছে।’ তবে সেই দুটি ম্যাচ স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী ও গতবারের চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টসের সঙ্গে। টিসির সঙ্গে পার পেলেও চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষাই।

এই পরীক্ষায় মোহনবাগান পড়ে গেল আজ ম্যাচের শেষ দিকে চরম নাটকীয়তায়। ১-১ স্কোরলাইন তখন। ৮৭ মিনিটে মোহনবাগানের নম্বর টেন সেসোবা বেইতিয়ারে পেনাল্টি শট রুখে দেন এলিফ্যান্টের গোলরক্ষক। পর ক্ষণেই পাল্টা আক্রমণে ২-১। থিনোলাখের বাড়ানো বল ক্লিয়ার করতে পারেনি মোহনবাগান রক্ষণ। স্ট্রাইকার সমসে খেওহানাম গোলরক্ষকের পাস দিয়ে বল প্লেসিং করেন জালে। দুই গোল করে মোহনবাগানের রাতটা নিরানন্দ করে তোলার নায়ক এই ‘নম্বর টেন’।

অথচ বল পজেশন বেশি ছিল মোহনবাগানের। শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও রাখে সবুজ-মেরুন দল। ১৮ মিনিটে সোসেবা বেইতিয়ার কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো হাভিয়ের মুনোসের মাথা ছুঁয়ে বল যায় হুলিয়েন কলিনাসের কাছে। সেখান থেকে কলিনাসের হেডেই জাল খুঁজে নেয় বল, এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ৪৩তম মিনিটে ১-১। একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চান্থাচোনে সিনোলাথ থ্রু পাস বাড়ান। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত টোকায় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে ১-১ করেন সমসে খেওহানাম। তখনো হয়তো দলটি ভাবেনি কী চমক অপেক্ষা করছে সামনে।

পাঁচ স্প্যানিশ ফুটবলার নিয়ে এসেছে মোহনাবাগান। আজ তিনজন মাঝমাঠ আর আক্রমণে খেলেছেন। কিন্তু তাঁদের গতি নেই খুব একটা। তারপরও মোহনবাগানের সঙ্গে কোনো তুলনাই হয় না পাল্টা আক্রমণে ওঠা ইয়ং এলিফ্যান্টের। ইয়ংদের কোনো বিদেশি খেলোয়াড় নেই। তবে জাতীয় দলের চার ফুটবলার আছে। বেশির ভাগই স্কুল, কলেজের ছাত্র। বয়স ২০-২১। এই তরুণেরা পিছিয়ে পড়া দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছে দারুণভাবে। নিজেদের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচেই জয়টা হলো রূপকথার মতো।!