বাংলাদেশি কোচদের 'নিষ্ঠুরতা' দেখে চলে গেলেন জাপানি কোচ

মেঝেতে শুয়ে আছেন সাঁতারু শরীফা আক্তার মীম। ছবি: ইনোকির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
মেঝেতে শুয়ে আছেন সাঁতারু শরীফা আক্তার মীম। ছবি: ইনোকির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
জাতীয় দলের ক্যাম্পের পাশেই প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির সাঁতারুরা অনুশীলন করেন। রাত জেগে এই সাঁতারুরা মুঠোফোনে ফেসবুকের নেশায় মেতে থাকেন-এ অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় কোচরা তাঁদের শাস্তি দেন। শাস্তির তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে ওই সময় সাঁতারু শরীফা আক্তার মীম অজ্ঞান হয়ে সুইমিংপুলের টাইলসের ওপর পড়ে যান। তা দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে না পেরে ওই দিনই ঢাকা ছাড়েন জাপানি কোচ ইনোকি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পা রেখেছিলেন সাঁতার কোচ তাকিও ইনোকিকে। মাত্র দেড় মাসের মাথায় সেই সাঁতারুদের ছেড়ে হঠাৎ করেই দেশে ফিরে গেছেন জাপানি এই কোচ। কাজে যোগ দিতে না দিতেই কেন এভাবে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন বিদেশি কোচ?

ঘটনার সূত্রপাত গত পরশু। জাতীয় দলের ক্যাম্পের পাশেই প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির সাঁতারুরা অনুশীলন করেন। রাত জেগে এই সাঁতারুরা মুঠোফোনে ফেসবুকের নেশায় মেতে থাকেন—এ অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় কোচরা তাঁদের শাস্তি দেন। দুপুরের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখেন, বিভিন্ন রকমের শারীরিক অনুশীলন করান শাস্তি হিসেবে। শাস্তির তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে ওই সময় সাঁতারু শরীফা আক্তার মীম অজ্ঞান হয়ে সুইমিংপুলের টাইলসের ওপর পড়ে যান। তা দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারেননি ইনোকি।

স্থানীয় কোচদের ডেকে অসুস্থ শরীফাকে হাসপাতালে নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধে সাড়া না দিয়ে স্থানীয় কোচরা আরও হাসাহাসি করেন এবং বলেন, ‘ও ভান ধরে শুয়ে আছে। আসলে ওর কিছুই হয়নি।’ পরে অবশ্য ওই সাঁতারুকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, সুস্থ আছেন শরীফা। পুরো ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছেন ইনোকি। স্থানীয় কোচদের এমন কাণ্ড দেখে পদত্যাগ করে পরশু সন্ধ্যাতেই ঢাকা ছাড়েন।

ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইনোকি লিখেছেন, ‘সাঁতারুদের শারীরিক লাঞ্ছনা বা শাস্তি দেওয়াটা মোটেও কাম্য নয়। যারা এমন শাস্তি দেয়, সেই সংস্থা বা কোচদের সঙ্গে কোনো কাজ করতে চাই না। এ ঘটনার কারণে আমি বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম। ফিনাকে এসব বিষয় জানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর কখনোই বাংলাদেশের সাঁতারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না।’

সাঁতারুদের নিষেধ করার পরও মুঠোফোনে ফেসবুক ব্যবহার করায় আগে থেকেই বিরক্ত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ। সাঁতারুদের শাস্তিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন তিনি। এ ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক আসরের আগে এভাবে কোচ চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ সম্পাদক, ‘এই কোচের দায়িত্ববোধ থাকলে এভাবে আমাদের অথই সাগরে রেখে চলে যেতে পারতেন না।’

আগামী ডিসেম্বরে নেপালে এসএ গেমস। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার আগে এভাবে কোচ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ফেডারেশন। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে তারা। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন ফেডারেশনে জমা দিতে হবে কমিটিকে।