বিসিবি আর কত 'দেখবে'

নাজমুল হাসান ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। ছবি: বিসিবির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
নাজমুল হাসান ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। ছবি: বিসিবির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারবেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী এবং ব্রাদার্সের খেলোয়াড়েরা। ঠিক কতবার ব্রাদার্সের খেলোয়াড়েরা তাঁদের গত মৌসুমের বকেয়া টাকার জন্য প্রধান নির্বাহীর দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর ঠিক কতবার তিনি তাঁদের বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখছি।’

কাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও বলেছেন, খেলোয়াড়দের বকেয়া টাকা পাওয়ার বিষয়টি তাঁরা দেখছেন। এটার সমাধান হয়ে যাবে। বিসিবির দেখার তালিকায় এ রকম আরও কত কিছুই না আছে!

প্রিমিয়ার লিগের দলবদলে আগে খেলোয়াড়দের সরাসরি কিনে নিত ক্লাবগুলো। কিন্তু চাল, নুন, চিনির সঙ্গে খেলোয়াড়দের দাম বাড়াটা মেনে নিতে পারেনি বিসিবি। ২০১২ সালে প্লেয়ার ড্রাফটের মাধ্যমে খেলোয়াড় দলবদলের নিয়ম চালু করে লাগাম পরানো হলো পারিশ্রমিকে। বিসিবি সভাপতি এবং তৎকালীন সিসিডিএম প্রধান জালাল ইউনুস আশা দিয়েছিলেন, পরেরবার থেকে দলবদল আবার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সাত বছর পেরিয়ে গেছে। সেই ‘পরেরবার’ আজও আসেনি। বিসিবি এখনো বিষয়টি দেখেই যাচ্ছে। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান তো কালও আশ্বাস দিলেন, ‘এখনো হয়নি, তো হয়ে যাবে। এটা নিয়ে তো কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে না!’

এ রকম উদাহরণ ভূরি ভূরি। অথচ ক্রিকেটাররা ১১ দফা পূরণের দাবি নিয়ে ধর্মঘটে যাওয়ায় একেকজন বোর্ড কর্মকর্তা যেন আকাশ থেকে পড়েছেন। এসব দাবি নাকি তাঁদের দরবারে কখনোই তোলা হয়নি! তাঁরা জানতেনই না এ রকম সমস্যাসংকুল হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এসব নিয়ে ধর্মঘটে যাওয়ার কোনো দরকারই ছিল না। বিসিবি সভাপতির কাছে গিয়ে শুধু একবার বললেই সব সমাধান হয়ে যেত।

তা ক্রিকেটাররা সেটা বিসিবিকে কীভাবে বলবেন? চিঠি দিয়ে? ই–মেইল করে? বিসিবি সভাপতি ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁদের আন্তরিক সম্পর্কের যে ছবি কাল তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে ই–মেইল-চিঠি ঠিক যায় না। সে রকম সম্পর্কে এসব দাবিদাওয়া ব্যক্তিগত পর্যায়েই জানানোর কথা। ক্রিকেটাররাও বিভিন্ন সময় সেভাবেই তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি ও অন্য কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সমস্যার সমাধান হয়নি।

ক্রিকেটারদের ১১ দফার মধ্যে আছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি। এই দাবি ক্রিকেটাররা আগে কখনো তোলেননি, এমন দাবি যে করবেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হবে। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, সবার আগে এটি নিয়েই তো কথা হয়! বিসিবি বলতে পারে টাকা তো বেড়েছে। তা ঠিক, কিন্তু কত? ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। অথচ এই কয় বছরে বিসিবির কর্মকর্তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে আয়োজন করা যেতে পারে কয়েকটি জাতীয় লিগ।

ক্রিকেটাররা ঘরোয়া সূচি নিয়ে কথা বলেছেন। এবারের ফ্র্যাঞ্চাইজিবিহীন বিপিএল, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অনাপত্তিপত্র, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধা, ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ পাতানো আর পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংও এসেছে তাঁদের দাবিদাওয়ায়। ঘরোয়া ক্রিকেট যে বর্তমান বোর্ডের অধীনেই সবচেয়ে বেশি কলুষিত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের গোটা ক্রিকেটাঙ্গন জানে। এসব নিয়ে অধিনায়কদের রিপোর্ট, ম্যানেজারদের রিপোর্ট সব জায়গাতেই অভিযোগ এসেছে। পত্রপত্রিকায় এসব ঘটনা ছাপা হয়েছে। তারপরও এবার তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট শুরুই হয়েছে বিতর্ক দিয়ে। কাল বিকেএসপিতে ইয়াং পেগাসাস ও ধ্রুব স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচে ‘নো’ বল ডাকা নিয়ে হয়েছে তুমুল হট্টগোল। ইয়াং পেগাসাসের পক্ষ থেকে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও নাকি দেওয়া হয়েছে।

তবু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। লক্ষণ নেই অদূর ভবিষ্যতে কিছু হওয়ারও। এ অবস্থায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ক্রিকেটারদের। সে কারণেই আন্দোলন। ধর্মঘট। যার পেছনে আছে ১১টি যৌক্তিক দাবি।