ক্রিকেটের সংকটে জামাল ভূঁইয়ার বৃহস্পতি তুঙ্গে

লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্টের বিপক্ষে আজও দারুণ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। ছবি: সৌরভ দাশ
লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্টের বিপক্ষে আজও দারুণ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। ছবি: সৌরভ দাশ

টেস্ট ও টি টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর ফুটবল অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার জীবনে এখন যেন দুই রকম সময়। ক্রিকেটাররা যখন ১৩ দফা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখন ফুটবল মাঠ কাঁপাচ্ছেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল। সাকিবের সময় যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নানা অসংগতি দূরে করতে সোচ্চার হয়ে। জামালের তা নয়। তিনি মন প্রাণ ঢেলে মাঠে খেলছেন। তাঁর জীবনে এখন যেন বসন্ত বাতাস।

টানা দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেরার পুরস্কার জিতেছেন জামাল। অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছে প্রচুর। কিন্তু টাকাই সব নয়! এই যে এত সম্মান, দলকে জেতানো... এগুলোই বড় জামালের কাছে। ১৮ অক্টোবর কামাল ক্লাব কাপের প্রথম ম্যাচে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর ৪-১ গোলের জয়ে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার গোল ছিল একটি। সেদিন চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে দারুণ খেলেন এই ফুটবলার। আজও নৈপুণ্যটা ধরে রাখলেন। মোহবাগানকে হারিয়ে চমক দেখানো লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্টের বিপক্ষে চট্টগ্রাম আবাহনীর স্কোর যখন ২-২, তৃতীয় গোলটি করেন জামাল। চতুর্থ গোলেও তাঁর বড় অবদান। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে এই ম্যাচ জিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের সেমিফাইনালে কার্যত পৌঁছে গেল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী।

এভাবে টানা ভালো খেলার রহস্য কী? ম্যাচ শেষে জামাল বললেন, ‘গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আমি টানা অনুশীলন করছি। ম্যাচ নিয়ে নিরন্তর ভাবছি। কীভাবে ভালো করা যায় সেটাই সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে। চেষ্টাটাই আসলে আমাকে এত দূর এনেছে। আমি অবশ্যই খুশি।’

খুশি হওয়ার আরেকটা কারণ ভারতীয় সুপার লিগ বা আইএসএলে সুযোগ হতে পারে তাঁর। এরই মধ্যে এক এজেন্ট কথা বলেছেন জামালের সঙ্গে। শিগগিরই হয়তো এ ব্যাপারে অগ্রগতি আসতে পারে।

জামাল ভূঁইয়াই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ফুটবলার। কদিন আগে কলকাতায় বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের গোলটি এসেছে তাঁরই ফ্রি কিকে সাদ উদ্দিনের দুরন্ত এক হেডে। ওই ম্যাচের পরদিনই যোগ দেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। শেখ কামাল ক্লাব কাপের জন্য সাইফ স্পোর্টিং থেকে তাঁকে ধারে নিয়েছে চট্টগ্রামের দলটি। আর এই সুযোগে চট্টগ্রামের মাত মাতাচ্ছেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। বললেন, ‘আমি যখন যে দলে খেলি সব আন্তরিকতা ঢেলেই খেলি। ওটাই হয়ে যায় আমার দল।’

আজ ইয়ং এলিফ্যান্টের বিপক্ষে ৭২ মিনিটে এল তৃতীয় গোল। যেটি করেছেন জামাল। রহমত মিয়ার লম্বা থ্রো থেকে বল আসে বক্সের ওপর। সেখান থেকে গড়ানো শটে অধিনায়ক জামাল করে দিলেন ৩-২। সবাই হাঁফ ছাড়ে। ৭৮ মিনিটে জামালের কর্নারে চতুর্থ গোলটি পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। মনে হচ্ছিল গোলটি জামালেরই। তবে রেফারি গোল দিয়েছেন আইভরি কোস্টের দিদিয়েরকে। এর আগে ৪ মিনিটে লুকার দারুণ ক্যাটব্যাকে গোল করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার চিনেদু ম্যাথু ( ১-০)। ১৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক ফ্রিকিকে সরাসরি বল পাঠান জালে পাঠান ইয়ং এলিফ্যান্টের আফিজাই। এরপর দুই ডিফেন্ডারকে টপকে ইয়ংকে এগিয়ে দেন। জমে ওঠে ম্যাচ। ৫৪ মিনিটে দর্শকেরা প্রাণ ফিরে পান। স্কোরলাইন হলো ২-২। ম্যাথিউর ক্রসে লুকার হেডে লক্ষভেদ।

ইয়ং এলিফ্যান্টে কোনো বিদেশি নেই। চট্টগ্রাম আবাহনীতে ৪ বিদেশি। দুই দলের শক্তির এই ব্যবধান মাঠের খেলায় মুছে দিতে পেরেছে এলিফ্যান্টরা। তবে শেষ পর্যন্ত হেরেছে চট্টগ্রাম আবাহনীর অভিজ্ঞতার কাছে। দ্বিতীয়ার্ধে চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলাটা ভালো হওয়ার কারণ, বদলি হিসেবে মানিককে নামান কোচ মারুফুল হক। মানিক এসে রক্ষণ আর আক্রমণে একটা সেতু হয়ে ছিলেন। দলও আক্রমণে উঠেছে। এবং জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।

ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও কিন্তু সেই জামাল ভূঁইয়াই।