ভারতে টি-টোয়েন্টিতে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

ভারত সফরের জন্য আজ থেকে শুরু হচ্ছে অনুশীলন ক্যাম্প। টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াড আগেই ঘোষণা করেছেন নির্বাচকেরা। আসুন দেখে নেই এ সংস্করণে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের খেরোখাতা

ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কালো মেঘ কেটে যাওয়ার পর সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ। ঠিক পূর্ণাঙ্গ না হলেও দুটি সংস্করণের সিরিজ খেলতে এই প্রথমবারের মতো ভারত সফর করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্রিকেটাররা ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় ভারত সফর নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। পরশু দুই পক্ষের সংলাপের ভিত্তিতে ক্রিকেটাররা ধর্মঘট তুলে নেওয়ায় আজ নির্ধারিত সূচি মেনেই শুরু হচ্ছে ভারত সফরের অনুশীলন ক্যাম্প।

ভারত সফরে গিয়ে আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের এ সিরিজে প্রথম ম্যাচ শুরু হবে ৩ নভেম্বর দিল্লিতে। বাকি দুই ম্যাচ রাজকোট ও নাগপুরে যথাক্রমে ৭ ও ১০ নভেম্বর। টেস্টে না হলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে কিন্তু কঠিন প্রতিপক্ষ বলে মনে করছেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণ। স্টার স্পোর্টসের বিশ্লেষক হিসেবে বিশেষজ্ঞের মতামতে লক্ষ্মণ বলেছেন, ‘আমার মতে ভারত বনাম বাংলাদেশ সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা দলটির চেয়ে বাংলাদেশ দল বেশি অভিজ্ঞ এবং তাদের খেলোয়াড়েরাও ফর্মে আছেন। তাদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ সব সময় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে।’

ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াড আগেই ঘোষণা করেছে বিসিবি। ১৫ সদস্যের এ স্কোয়াডের শক্তিমত্তা লক্ষ্মণকে তাহলে সত্যিই ভাবাচ্ছে? টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে আটবার মুখোমুখি হয়ে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এ সংস্করণে বিসিবির এ টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের পারফরম্যান্স কেমন, আসুন জেনে নেই:

ভারতে সাকিবকে নেতৃত্ব দিতে হবে সামনে থেকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ভারতে সাকিবকে নেতৃত্ব দিতে হবে সামনে থেকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি


সাকিব আল হাসান:
তাঁর ক্রিকেটীয় সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ধারাবাহিক পারফরমার, ব্যাট কিংবা বল হাতে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিজের অমরত্ব নিশ্চিত করেছেন আগেই। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৬ ম্যাচে ২৩.৭৪ গড় ও ১২৩.৭৭ স্ট্রাইক রেটে ১৫৬৭ রান করেছেন সাকিব। ফিফটি ৯টি। বল হাতে এই ৭৬ ম্যাচে তাঁর শিকার ৯২ উইকেট। ২০.৫৮ গড়ে ওভারপ্রতি তাঁর ইকোনমি রেট ৬.৮১। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সাকিবের।

তামিম ইকবাল:
পারিবারিক কারণে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আংশিক অংশ তামিম ইকবালের না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তেমন কিছু হলে তাঁর বিকল্প হিসেবে ইমরুল কায়েসকে ঠিক করে রেখেছেন নির্বাচকেরা। যদিও টি-টোয়েন্টি দলে আছেন দেশসেরা এ ওপেনার। এ সংস্করণে ৭১ ম্যাচে ২৩.৫৭ গড় ও ১১৭.১৬ স্ট্রাইক রেটে ১৫৫৬ রান করেছেন তামিম। ৬টি ফিফটি এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিটি তামিমের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ সংস্করণে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তামিম।

লিটন দাস:
গত এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে লিটন দাসের চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরিটি নিশ্চয়ই ভোলেনি ভারত। লিটনকে নিয়েই এবার দেশটি সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডার এ ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ২০.৫৪ গড়ে ৪৫২ রান করেছেন লিটন। স্ট্রাইক রেট ১৩৮.২২। ফিফটি ২টি।

সৌম্য সরকার:
টপ অর্ডার এ ব্যাটসম্যান রানখরায় ভুগছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও টানা ১৬ ইনিংস ফিফটির দেখা পাননি সৌম্য। কিন্তু তাঁর সামর্থ্যের ওপর ভরসা রেখেছেন নির্বাচকেরা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ ম্যাচে ১৬.৭৯ গড়ে ৭২২ রান করেছেন সৌম্য। স্ট্রাইকরেট ১২১.৯৫। এ পর্যন্ত একটি ফিফটি তুলে নিতে পেরেছেন তিনি।

নাঈম শেখ:
জাতীয় দলে ডাক পেয়েই সবাইকে চমকে দিয়েছেন নাঈম শেখ। ২০ বছর বয়সী এ ওপেনার কুমার সাঙ্গাকারার মতো হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। ফরিদপুর জেলা, ঢাকা বিভাগ, চ্যালেঞ্জ কাপ, অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ধারাবাহিক রান করে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন নাঈম। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁর অভিষেক ঘটবে কি না, সময়ই বলে দেবে। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ৭ ম্যাচে ২২ গড়ে ৯০ রান তুলেছেন নাঈম। লিস্ট ‘এ’-তে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৯.৫৫ এবং স্ট্রাইক রেট ৮৮.৯৬।

ব্যাটিংয়ে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ব্যাটিংয়ে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম আলো ফাইল ছবি


মুশফিকুর রহিম:
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে আস্থার প্রতীক। দলের বিপদে কিংবা আক্রমণে অনেকেই চোখ বুঁজে তাঁর ওপর ভরসা করে থাকেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৮১ ম্যাচে ১৯.৬৮ গড়ে ১২০১ রান করেছেন মুশফিক। স্ট্রাইকরেট ১১৮.৯১। ফিফটি ৪টি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ডিসমিসালও (৫৮) মুশফিকের।

মাহমুদউল্লাহ:
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মিডল অর্ডারে আরেক আস্থার প্রতীক। সাম্প্রতিক সময়ে রানখরায় ভুগলেও মাহমুদউল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছেন নির্বাচকেরা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৮০ ম্যাচে ১৩৭৭ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২৩.৭৪ গড়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১২২.০৭। ফিফটি ৪টি।

আফিফ হোসেন:
সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বাংলাদেশের বড় তারকা হয়ে ওঠার সব রকম সামর্থ্যই রয়েছে আফিফের। সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি অনেক দিন মনে থাকবে সমর্থকদের। আফিফের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার কেবল শুরু হলো। ৫ ম্যাচে ১৫.৪০ গড়ে ৭৭ রান করেছেন ২০ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫৯।

মোসাদ্দেক হোসেন:
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে শেষ দিকে ‘ফিনিশার’ হিসেবে মোসাদ্দেককে ভাবা হচ্ছে বহু দিন ধরেই। ভবিষ্যতে মাহমুদউল্লাহর জায়গা পূরণে তাঁকে তৈরি করার ভাবনা রয়েছে নির্বাচকদের মধ্যে। সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন মোসাদ্দেক। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও শেষ দিকে বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেছিলেন মোসাদ্দেক।

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব:
সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন আমিনুল ইসলাম। অভিষেকেই তৃতীয় বলে উইকেট নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান থেকে লেগ স্পিনার বনে যাওয়ার এ ক্রিকেটার। উইকেট পেয়েছিলেন নিজের পরের ওভারেও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসার আগে তিনি কখনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেননি।অভিজ্ঞতা বলতে ১৯টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ আর দুটি টি-টোয়েন্টি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিপ্লব খেলেছেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। আমিনুলের সেরা সিরিজ কেটেছে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিবিএ) বিপক্ষে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ২টি (তিন দিনের ম্যাচ ছিল)।

আরাফাত সানি:
২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষবারের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছিলেন আরাফাত সানি। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন এ স্পিনার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়েছেন সানি। ১৯.১৬ গড়ে তার ইকোনমি রেট ৭.৪১। নতুন বলে ইনিংসের শুরুর দিকে বেশ কার্যকর সানির স্পিন।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন:
ভারত সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে এ পেস অলরাউন্ডারকে রেখেছিলেন নির্বাচকেরা। কিন্তু সাইফউদ্দিনের দুর্ভাগ্য চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন সফর থেকে।দীর্ঘদিন কোমরের পেছনে জটিল এক চোটে ভুগছেন সাইফউদ্দিন। জুলাইয়ে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চোটটা বুঝতে বায়োমেকানিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাঁকে পাঠানো হবে দেশের বাইরে। কবে যাবেন এই পরীক্ষা দিতে, সেটি চূড়ান্ত হয়নি এখনো। তবে ভারতের বিপক্ষে আর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হয়নি। কাল এক বিবৃতিতে বিসিবি সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। নতুন কিংবা পুরোনো বলে সাইফের বোলিংয়ের পাশাপাশি শেষ দিকে তাঁর ব্যাটিং দলের জন্য বেশ কার্যকর। সাইফউদ্দিনের বিকল্প খেলোয়াড়ের নাম এখনো জানায়নি বোর্ড।

আল আমিন হোসেন:
২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে শেষবারের মতো খেলেছিলেন আল আমিন। তিন বছর পর আবারও জাতীয় দলে ফিরেছেন এ পেসার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৫ ম্যাচে ৩৯ উইকেট পেয়েছেন আল আমিন। ওভার প্রতি রান দেওয়ায় একটু খরুচে (৭.৪৬)। তবে নতুন ও পুরোনো বলে ভালোই লাইন-লেংথ ও স্লোয়ার দিতে পারেন ডান হাতি এ পেসার।

মোস্তাফিজুর রহমান:
বাংলাদেশের পেস আক্রমণভাগের নেতা। স্লোয়ার-কাটারের পসরা আছে তাঁর ঝুলিতে। যদিও সাম্প্রতিক বছরে উইকেট নেওয়ায় তেমন একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না মোস্তাফিজ। তবে রান আটকানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞ এ পেসার। রয়েছে আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ ম্যাচে ৫২ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ। ১৮.৭১ গড়ে তাঁর ইকোনমি রেট ৭.৭৫।

শফিউল ইসলাম:
বাংলাদেশ দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকতে হয় এ পেসারকে। তবে নতুন বলে বেশ ভালোই ব্রেক-থ্রু এনে দিতে পারেন শফিউল। স্লোয়ার ও বৈচিত্র্যও আছে তাঁর বোলিংয়ে। ১৪ ম্যাচে এ পর্যন্ত ১২ উইকেট পেয়েছেন শফিউল।