ঘরের মাঠে হারানোই যাচ্ছে না লিভারপুলকে

জয়ের দুই নায়ক। ছবি : এএফপি
জয়ের দুই নায়ক। ছবি : এএফপি

প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের মাঠে লিভারপুল সর্বশেষ কবে হেরেছে, মনে আছে?

মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। নিজেদের মাঠে টানা ৪৫ ম্যাচ অপরাজিত তারা। অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের পরাজয় খুঁজতে গেলে পেছাতে হবে প্রায় আড়াই বছর। ২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজেদের মাটিতে প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুল সর্বশেষ হেরেছিল ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে, ২-১ গোলে। নিজেদের সাবেক স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ান বেনটেকের জোড়া গোল সেদিন শেল হয়ে বিঁধেছিল লিভারপুলের বুকে।

এরপর থেকে প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের রেকর্ড শুধুই ঊর্ধ্বমুখী। টানা দুই মৌসুম অপরাজিত থেকেছে নিজেদের মাঠে। গত রাতে টটেনহামের সঙ্গে জিতে সবাইকে মনে করিয়ে দিল, এই মৌসুমেও নিজেদের মাঠে হেরে যাওয়ার কোনো ‘ইচ্ছা’ নেই তাঁদের।

ম্যাচের শুরুতে কিন্তু ঠিকই টটেনহাম চোখ রাঙিয়েছিল। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই অধিনায়ক হ্যারি কেইনের গোলে এগিয়ে যায় টটেনহাম। লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা তখনো ধাতস্থ হতে পারেননি। মাঝমাঠ থেকে তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে আসা ফরাসি মিডফিল্ডার মুসা সিসোকোর পাস খুঁজে নেয় বাম দিকে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার উইঙ্গার হিউং মিন সনকে। দুরন্ত গতিতে এগিয়ে গিয়ে শট নেন সন। সে শট লিভারপুলের ডিফেন্ডার দেয়ান লভরেনের মাথায় লেগে পোস্টে লাগে, সেখান থেকে গোলরক্ষক অ্যালিসন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকা শিকারির মতো ওঁত পেতে থাকা স্ট্রাইকার কেইন তা জড়িয়ে দেন জালে।

>

গতকাল নিজেদের মাঠে প্রথমে পিছিয়ে পড়েছিল লিভারপুল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা টটেনহাম হটস্পারকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। গোল করেছেন অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন ও মোহাম্মদ সালাহ। টটেনহামের গোলটি অধিনায়ক হ্যারি কেইনের।

ব্যস! টটেনহামের আক্রমণভাগের ঝলক অতটুকুই। গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে ওঠে লিভারপুল। গোটা প্রথমার্ধে গোলের জন্য চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেননি মোহাম্মদ সালাহ, রবার্তো ফিরমিনো, সাদিও মানে রা। মূল গোলরক্ষক হুগো লিওরিস চোটে পড়েছেন, তাই মাঠে নেমেছিলেন স্পার্সের তরুণ আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক পাওলো গাজানিগা। গাজানিগার ওপর এ দিন জিয়ানলুইজি বুফন বা লেভ ইয়াশিনের ভূত ভর করেছিল যেন। অবিশ্বাস্য সেভ করতে লাগলেন একের পর এক। সালাহ-ফিরমিনোর শট থেকে শুরু করে ফন ডাইকের হেড, সব ফিরিয়েছেন তিনি। আর্জেন্টিনার পরবর্তী গোলরক্ষক হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন আলোচনায় গাজানিগার নাম আসে, এই ম্যাচেই তিনি সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন, কেন সবাই তাঁকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেখতে চায়। কিন্তু গাজানিগা এমন দুর্দান্ত খেললেও, সেই সুবিধাটা নিতে পারেনি টটেনহাম।

দ্বিতীয়ার্ধে আর দলকে বাঁচাতে পারেননি গাজানিগা। লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের বাঁ-পায়ের এক জোরালো শট পরাস্ত করে তাঁকে। টটেনহাম বুঝতে পেরেছিল, উদ্যমী লিভারপুলকে বেশিক্ষণ আর আটকে রাখা যাবে না তাঁদের মাঠে। তাই মাঝে মাঝেই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছিলেন সার্জ অরিয়ের, মুসা সিসোকো, ট্যাঙ্গয় এনদোম্বেলে, ড্যানি রোজরা। এই অধৈর্য হয়ে যাওয়ারই খেসারত দিয়েছে তারা। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে সাদিও মানেকে আটকাতে গিয়ে তাঁর পায়ের পেশিতে লাথি দিয়ে বসেন অরিয়ের, তাও ডি-বক্সের মধ্যে।

পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মোহাম্মদ সালাহ। আর লিভারপুলও প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের মাঠে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটাকে বাড়িয়ে নিয়ে যায় ৪৫-এ।

এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চাইতে ছয় পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে গেল লিভারপুল।